পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उटाब्●ट) সেই কৃষ্ণ-কল্লোলিনী ক্ষদ্র নদীতীরে সেই পথের ধারেই বক্ষতলে নদীতটে কল্যাণী পড়িয়া আছে, মহেন্দ্র ও সত্যানন্দ পরসপরে আলিঙ্গন করিয়া সাশ্রলোচনে ঈশবরকে ডাকিতেছেন, নজরদী জমাদার সিপাহী লইয়া এমন সময়ে সেইখানে উপস্থিত। একেবারে সত্যানন্দের গলদেশে হসন্তাপািণপৰিবাক বলিল, “এই শালা সন্ন্যাসী।” আর এক জন আমনি মহেন্দ্রকে ধরিল —কেন না, যে সন্ন্যাসীর সঙ্গী, সে অবশ্য সন্ন্যাসী হইবে। আর এক জন শক্ষেপাপরি লম্বমান কল্যাণীর মতদেহটাও ধরিতে যাইতেছিল। কিন্তু দেখিল যে, একটা সত্ৰীলোকের মতদেহ, সন্ন্যাসী না হইলেও হইতে পারে। আর ধরিল না। বালিকাকেও ঐরােপ বিবেচনায় ত্যাগ করিল। পরে তাহারা কোন কথাবাত্তা না বলিয়া দাই জনকে বধিয়া লইয়া চলিল। কল্যাণীর মতদেহ আর তাহার বালিকা কন্যা বিনা রক্ষকে সেই ব্যক্ষমতুলে পড়িয়া রহিল। প্রথমে শোকে অভিভূত এবং ঈশবরপ্রেমে উন্মত্ত হইয়া মহেন্দ্ৰ বিচেতন্যপ্রায় ছিলেন। কি হইতেছিল, কি হইল বঝিতে পারেন নাই, বন্ধনের প্রতি কোন আপত্তি করেন নাই, কিন্তু দাই চারি পদ গেলে বঝিলেন যে, আমাদিগকে বধিয়া লইয়া যাইতেছে। কল্যাণীর শব্ব পড়িয়া রহিল, সৎকার হইল না, শিশকেন্যা পড়িয়া রহিল, এইক্ষণে তাহাদিগকে হিংস্র জন্তু খাইতে পারে, এই কথা মনোমধ্যে উদয় হইবামাত্ৰ মহেন্দ্ৰ দাইটি হাত পরস্পর হইতে বলে বিশিলাস্ট করিলেন, এক টানে বাঁধন ছিড়িয়া গেল। সেই মহত্তে এক পদাঘাতে জমাদার সাহেবকে ভূমিশয্যা অবলম্বন করাইয়া এক জন সিপাহীকে আক্ৰমণ করিতেছিলেন। তখন অপর তিন জন তাঁহাকে তিন দিক হইতে ধরিয়া পনেকবার বিজিত ও নিশ্চেন্ট করিল। তখন দঃখে কাতর। হইয়া মহেন্দ্র সত্যানন্দ ব্রহ্মচারীকে বলিলেন, “আপনি একটা সহায়তা করিলেই এই পাঁচ জন দারাত্মাকে বধ করিতে পারিতাম।” সত্যানন্দ বলিলেন, “আমার এই প্রাচীন শরীরে বল কি —আমি যাঁহাকে ডাকিতেছিলাম, তিনি ভিন্ন আমার বল নাই—তুমি, যাহা অবশ্য ঘটিবে, তাহার বিরাদ্ধাচরণ করিও না। আমরা এই পাঁচ জনকে পরাভূত করিতে পারিব না। চল, কোথায় লইয়া যায় দেখি। জগদীশবার সকল দিক রক্ষা করিবেন।” তখন তাঁহারা দই জনে আর কোন মাক্তির চেষটা না করিয়া সিপাহীদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। কিছর দরে গিয়া সত্যানন্দ সিপাহীদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাপ, আমি হরিনাম করিয়া থাকি—হরিনাম করার কিছর বাধা আছে ?” সত্যানন্দকে ভােলমানষে বলিয়া জমাদারের বোধ হইয়াছিল, সে বলিল, “তুমি হরিনাম করা, তোমায় বারণ করিব না। তুমি বড়ো ব্রহ্মচারী, বোধ হয তোমার খালাসের হকুমই হইবে, এই বদমাস ফাঁসি যাইবে।” তখন ব্রহ্মচারী মাদস্বরে গান করিতে লাগিলেনঃ— বসতি বনে বরনারী। মা কুর ধনদ্ধার, গমনবিলম্বন অতি বিধারা সরকুমারী ৷” ইত্যাদি। নগরে পৌছিলে তাঁহারা কেতিয়ালের নিকট নীত হইলেন। কোতিয়াল রাজসরকারে এতালা পাঠাইয়া দিয়া ব্রহ্মচারী ও মহেন্দ্রকে সম্প্রতি ফাটকে রাখিলেন। সে কারাগার অতি ভয়ঙকর, যে যাইত, সে প্রায় বাহির হইত না; কেন না, বিচার করিবার লোক ছিল না। ইংরেজের জেলা নয়—তখন ইংরেজের বিচার ছিল না। আজ নিয়মের দিন—তখন অনিয়মের দিন। নিয়মের দিনে আর অনিয়মের দিনে তুলনা কর। চতুদশ পরিচ্ছেদ রাত্ৰি উপস্থিত। কারাগারমধ্যে বন্ধ সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে বলিলেন, “আজ অতি আনন্দের দিন। কেন না, আমরা কারাগারে বন্ধ হইয়াছি। বল হরে মর্যারে!” মহেন্দ্ৰ কাতরস্বরে সত্য। কাতর কেন বাপ ? তুমি এ মহাৱত গ্রহণ করিলে এ স্ত্ৰী কন্যা ত অবশ্য ত্যাগ করিতে। আর ত কোন সম্প্ৰবন্ধ থাকিত না। Գ © (: