পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊळकंठ আমি সকল সময় বঝিতে পারি না যে, কোন দিক ভারি হয়। দেশ ত শান্তি, দেশ লইয়া আমি কি করিব ? দেশের এক কাঠা ভূই পেলে তোমায় লইয়া আমি সবগ প্রস্তুত করিতে পারি, আমার দেশে কাজ কি ? দেশের লোকের দঃখ,-যে তোমা হেন সস্ত্রী পাইয়া ত্যাগ করিল— তাহার অপেক্ষা দেশে আর কে দঃখী আছে ? যে তোমার অঙ্গে শতগ্রন্থি বসত্ৰ দেখিল, তাহার অপেক্ষা দরিদ্র দেশে আর কে আছে ? আমার সকল ধৰ্ম্মেমরি সহায় তুমি। সে সহায় যে ত্যাগ করিল, তার কাছে আবার সনাতন ধৰ্ম্মম কি ? আমি কোন ধমের জন্য দেশে দেশে, বনে বনে, বন্দক ঘাড়ে করিয়া, প্রাণিহত্যা করিয়া এই পাপের ভার সংগ্ৰহ করি ? পথিবী সন্তানদের আয়ত্ত হইবে কি না জানি না; কিন্তু তুমি আমার আয়ত্ত, তুমি পথিবীর অপেক্ষা বড়, তুমি আমার সবগ । চল গহে যাই—আর আমি ফিরিব না। শান্তি কিছ কাল কথা কহিতে পারিল না। তার পর বলিল, “ছি—তুমি বীর। আমার পথিবীতে বড় সখা যে, আমি বীরপত্নী। তুমি অধম স্ত্রীর জন্য বীরধৰ্ম্ম ত্যাগ করিবে ? তুমি আমায় ভালবাসিও না—আমি সে সখি চাহি না—কিন্তু তুমি তোমার বীরধৰ্ম্ম কখন ত্যাগ করিও না। দেখ—আমাকে একটা কথা বলিয়া যাও—এ ব্ৰতভঙেগর প্রায়শিচত্ত কি ?” জীবানন্দ বলিলেন, “প্ৰায়শিচত্ত—দান-উপবাস—২২ কাহিন কড়ি।” শান্তি ঈষৎ হাসিল। বলিল, “প্রায়শ্চিত্ত কি, তা আমি জানি। এক অপরাধে যে প্রায়শিচত্ত —শত অপরাধে কি তাই ?” জীবানন্দ বিসিমত ও বিষগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এ সকল কথা কেন ?” শান্তি । এক ভিক্ষা আছে। আমার সঙ্গে আবার দেখা না হইলে প্ৰায়শিচত্ত করিও না । জীবানন্দ তখন হাসিয়া বলিল, “সে বিষয়ে নিশিচনত থাকিও । তোমাকে না দেখিয়া আমি মরিব না। মরিবার তত তাড়াতাড়ি নাই। আর আমি এখানে থাকিব না, কিন্তু চোখ ভরিয়া তোমাকে দেখিতে পাইলাম না, এক দিন অবশ্য সে দেখা দেখিব। এক দিন অবশ্য আমাদের মনস্কামনা সফল হইবে। আমি এখন চলিলাম, তুমি আমার এক অননুরোধ রক্ষা করিও । এ বেশভূষা ত্যাগ কর। আমার পৈতৃক ভিটায় গিয়া বাস কর।” শান্তি জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি এখন কোথায় যাইবে ?” জীবা। এখন মঠে ব্ৰহ্মচারীর অন্যসন্ধানে যাইব । তিনি যেভাবে নগরে গিয়াছেন, তাহাতে কিছ চিন্তায্যক্ত হইয়াছি; দেউলে তাঁহার সন্ধান না পাই, নগরে যাইব । সপতদশ পরিচ্ছেদ ভবানন্দ মঠের ভিতর বসিয়া হরিগণগান করিতেছিলেন। এমত সময়ে বিষন্নমখে জ্ঞানানন্দনামা একজন অতি তেজসবী সন্তান তাঁহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভবানন্দ বলিলেন, “গোঁসাই, মািখ অত ভারি কেন ?” জ্ঞানানন্দ বলিলেন, “কিছ, গোলযোগ বোধ হইতেছে। কালিকার কান্ডটার জন্য নেড়েরা গেরিয়া কাপড় দেখিতেছে, আর ধরিতেছে। অপরাপর সন্তানগণ আজ সকলেই গৈরিক বসন ত্যাগ করিয়াছে। কেবল সত্যানন্দ প্ৰভু গেরিয়া পরিয়া একা নগরাভিমখে গিয়াছেন। কি ভবানন্দ বলিলেন, “তাঁহাকে আটক রাখে, এমন মসলমান বাঙ্গালায় নাই। ধীরানন্দ তাঁহার পশ্চাদগামী হইয়াছেন জানি। তথাপি আমি একবার নগর বেড়াইয়া আসি। তুমি মঠ রক্ষা করিও ।” এই বলিয়া ভবানন্দ এক নিভৃত কক্ষে গিয়া একটা বড় সিন্দক হইতে কতকগলি বস্ত্র বাহির করিলেন। সহসা ভবানন্দের রপোন্তর হইল, গেরিয়া বসনের পরিবত্তে চুড়িদার পায়জামা, মেরজাই, কাবা, মাথায় আমামা, এবং পায়ে নাগরা শোভিত হইল। মািখ হইতে ত্রিপাড়াদি চন্দনচিহ্নসকল বিলপতি করিলেন। ভ্ৰমরকৃষ্ণগহ্মফশমশ্রশোভিত সন্দর মখমন্ডল অপৰিব শোভা পাইল। তৎকালে তাঁহাকে দেখিয়া মোগলীজাতীয় যােবা পরিষ বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। ভবানন্দ এইরপে মোগল সাজিয়া, সশস্ত্র হইয়া মঠ হইতে নিম্প্রক্রিান্ত হইলেন। সেখান হইতে ক্লোশৈক দরে দাইটি অতি অনচ্চ পাহাড় ছিল। সেই পাহাড়ের উপর জঙ্গল উঠিয়াছে। সেই Q 8N