পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७का ब्रा5नावब्नी দাইটি পাহাড়ের মধ্যে একটি নিভৃত স্থান ছিল। তথায় অনেকগলি অশব রক্ষিত হইয়াছিল। মঠবাসীদিগের আশাবশালা এইখানে। ভবানন্দ তাহার মধ্য হইতে একটি অশব উন্মোচন করিয়া, তৎপঠে আরোহণ পৰিবাক নগরাভিমখে ধাবমান হইলেন। যাইতে যাইতে সহসা তাঁহার গতি রোধ হইল। সেই পথিপাশে বা কলনদিনী তরঙিগণীর কলে, গগনন্দ্ৰন্ট নক্ষত্রের ন্যায়, কাদম্পিবানীচু্যত বিদ্যুতের ন্যায়, দীপত স্ত্রীমত্তি শয়ান দেখিলেন। দেখিলেন, জীবনলক্ষণ কিছ নাই—শান্য বিষের কোঁটা পড়িয়া আছে। ভবানন্দ বিস্মিত, ক্ষব্ধ, ভীত হইলেন। জীবানন্দের ন্যায়, ভবানন্দ ও মহেন্দ্রের সত্ৰীকন্যাকে দেখেন নাই। জীবানন্দ যে সকল কারণে সন্দেহ করিয়াছিলেন যে, এ মহেন্দ্রের সত্ৰীকন্যা হইতে পারে।--ভবানন্দের কাছে সে সকল কারণ অনপস্থিত। তিনি ব্রহ্মচারী ও মহেন্দ্ৰকে বন্দীভাবে নীত হইতে দেখেন নাই— কন্যাটিও সেখানে নাই। কৌটা দেখিয়া ববিলেন, কোন স্ত্রীলোক বিষ খাইয়া মরিয়াছে। ভবানন্দ সেই শবের নিকট বসিলেন, বসিয়া কপোলে কর লগিন করিয়া অনেকক্ষণ ভাবিলেন । মাথায়, বগলে, হাতে, পায়ে হাত দিয়া দেখিলেন ; অনেক প্রকার অপরের অপরিজ্ঞাত পরীক্ষা করিলেন। তখন মনে মনে বলিলেন, এখনও সময় আছে, কিন্তু বাঁচাইয়া কি করিব। এইরনুপ ভবানন্দ অনেকক্ষণ চিন্তা করিলেন, চিন্তা করিয়া বনমধ্যে প্রবেশ করিয়া একটি বক্ষের কতকগলি পাতা লইয়া আসিলেন। পাতাগলি হাতে পিষিয়া রস করিয়া সেই শবের ওল্ঠ দন্ত ভেদ করিয়া অঙ্গলি দবারা কিছ মাখে প্রবেশ করাইয়া দিলেন, পরে নাসিকায় কিছ কিছর রস দিলেন— অঙ্গে সেই রস মাখাইতে লাগিলেন। পািনঃ পািনঃ এইরনুপ করিতে লাগিলেন, মধ্যে মধ্যে নাকের কাছে হাত দিয়া দেখিতে লাগিলেন যে, নিশবাস বহিতেছে কি না। বোধ হইল, যেন যত্ন বিফল হইতেছে। এইরনুপ বহক্ষণ পরীক্ষা করিতে করিতে ভবানন্দের মািখ কিছ. প্ৰফল্প হইল--- অঙ্গলিতে নিশবাসের কিছ, ক্ষীণ প্রবাহ অনভব করিলেন। তখন আরও পত্ররস নিষেক করিতে লাগিলেন। ক্ৰমে নিশবাস প্রখরতার বহিতে লাগিল। নাড়ীতে হাত দিয়া ভবানন্দ দেখিলেন, নাড়ীর গতি হইয়াছে। শেষে অলেপ আলেপ পৰ্ব্বদিগের প্রথম প্রভাতিরাগবিকাশের ন্যায়, প্রভাতিপদ্মের প্রথমোন্মেষের ন্যায়, প্রথম প্রেমানভেবের ন্যায় কল্যাণী চক্ষরন্মেীলন করিতে লাগিলেন। দেখিয়া ভবানন্দ সেই অদ্ধজীবিত দেহ অশবপক্ঠে তুলিয়া লইয়। দ্রুতবেগে অশব চালাইয়া নগরে গেলেন । অভটাদশ পরিচ্ছেদ সন্ধ্যা না হইতেই সন্তানসম্প্রদােয় সকলেই জানিতে পারিয়াছিল যে, সত্যানন্দ ব্ৰহ্মচারী আর মহেন্দ্র, দাই জনে বন্দী হইয়া নগরের কারাগারে আবদ্ধ আছে। তখন একে একে, দিয়ে দিয়ে, দশে দশে, শতে শতে, সন্তানসম্প্রদােয় আসিয়া সেই দেবালয়বেস্টনকারী অরণ্য পরিপণ করিতে লাগিল। সকলেই সশস্ত্র। নয়নে রোষাগিন, মাখে দক্ষভ, অধরে প্রতিজ্ঞা। প্রথমে শত, পরে সহস্র, পরে দিবসহস্র। এইরপে লোকসংখ্যা বন্ধি পাইতে লাগিল। তখন মঠের দাবারে দাঁড়াইয়া তরবারিহস্তে জ্ঞানানন্দ উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “আমরা অনেক দিন হইতে মনে করিয়াছি যে, এই বাবাইয়ের বাসা ভাঙ্গিয়া, এই যবনপরী ছারখার করিয়া, নদীর জলে ফেলিয়া দিব । এই শয়রের খোঁয়াড় আগমনে পোড়াইয়া মাতা বাসমতীকে আবার পবিত্র করিব। ভাই, আজ সেই দিন আসিয়াছে। আমাদের গরের গর, পরম গর, যিনি অনন্তজ্ঞানময়, সব্বদা শব্দ্ধাচার, যিনি লোকহিতৈষী, যিনি দেশহিতৈষী, যিনি সনাতন ধৰ্ম্মেমরি পানঃপ্রচার জন্য শরীরপাতন প্ৰতিজ্ঞা করিয়াছেন।--যাঁহাকে বিষ্ণর অবতারস্বরপ মনে করি, যিনি আমাদের মন্তির উপায়, তিনি আজ মসলমানের কারাগারে বন্দী। আমাদের তরবারে কি ধার নাই?” হস্ত সম্প্রসারণ করিয়া জ্ঞানানন্দ বলিলেন, “এ বাহতে কি বল নাই ?”—বক্ষে করাঘাত করিয়া বলিলেন, “এ হৃদয়ে কি সাহস নাই ?—ভাই, ডাক, হরে মর্যারে মধকৈটভারে।—যিনি মধকৈটভ বিনাশ করিয়াছেন—যিনি হিরণ্যকশিপ, কংস, দন্তবক, শিশপাল প্রভৃতি দত্তেজয় অসারগণের নিধনসাধন করিয়াছেন—যাঁহার চক্লের ঘাঘরনিঘোষে মহত্যুঞ্জয় শম্ভুও ভীত হইয়াছিলেন—যিনি অজেয়, রণে জয়দাতা, আমরা তাঁর উপাসক, তাঁর বলে আমাদের বাহতে অনন্ত বল—তিনি ইচ্ছাময়, ইচ্ছা করিলেই আমাদের রণজয় হইবে। চল, আমরা সেই যবনপরী ভাঙ্গিয়া ধালিগাড়ি করি। C 8 SR