পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

72ा०ाकाfa) অবশিস্ট ছাইয়ের উপর নিজের জন্য যে ভাত রান্না ছিল, তাহা ফেলিয়া দিল। তার পর দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া আপনা। আপনি বলিল, “এত দিন যাহা মনে করিয়াছিলাম, আজি তাহা করিব। যে আশায় এত দিন করি নাই, তাহা সফল হইয়াছে। সফল কি নিস্ফল—নিম্পফল! এ জীবনই নিম্পফল! যাহা সঙ্কলপ করিয়াছি, তাহা করিব। একবারেও যে প্ৰায়শিচত্ত, শতবারেও তাই।” এই ভাবিয়া শান্তি ভাতগালি উননে ফেলিয়া দিল। বন হইতে গাছের ফল পাড়িয়া আনিল । অন্নের পরিবত্তে তাহাই ভোজন করিল। তার পর তাহার যে ঢাকাই শাড়ির উপর নিমাইমণির চোট, তাহা বাহির করিয়া তাহার পাড় ছিড়িয়া ফেলিল। বস্ত্রের যেটকু অবশিষ্ট রহিল, গেরিমাটিতে তাহা বেশ করিয়া রঙ করিল। বস্ত্র রঙ করিতে, শকাইতে সন্ধ্যা হইল। সন্ধ্যা হইলে দাবার রন্ধ করিয়া অতি চমৎকার ব্যাপারে শান্তি ব্যাপতি হইল। মাথার রক্ষা আগলফলম্বিত কেশদামের কিয়দংশ কাঁচি দিয়া কাটিয়া পথক করিয়া রাখিল। অবশিস্ট যাহা মাথায় রহিল, তাহা বিনাইয়া জটা তৈয়ার করিল। রক্ষ কেশ অপৰিব বিন্যাসবিশিস্ট জটাভারে পরিণত হইল। তার পর সেই গৈরিক বসনখানি অদ্ধেক ছিড়িয়া ধড়া করিয়া চার অঙ্গে শান্তি পরিধান করিল। অবশিস্ট অন্ধেীকে হৃদয় আচ্ছাদিত করিল। ঘরে একখানি ক্ষদ্র দপণ ছিল, বহকালের পর শান্তি সেখানি বাহির করিল ; বাহির করিয়া দপণে আপনার বেশ আপনি দেখিল। দেখিয়া বলিল, “হায়! কি করিয়া কি করি।” তখন দপণ ফেলিয়া দিয়া, যে চুলগলি কাটা পড়িয়া ছিল, তাহা লইয়া শমশ্র গম্বফ রচিত করিল। কিন্তু পরিতে পারিল না। ভাবিল, “ছিা! ছি! ছি:! তাও কি হয়! সে দিনকাল কি আছে! তবে বড়ো বেটাকে জবাদ করিবার জন্য, এ তুলিয়া রাখা ভাল।” এই ভাবিয়া শান্তি সেগলি কাপড়ে বাঁধিয়া রাখিল। তার পর ঘরের ভিতর হইতে এক বহৎ হরিণীচক্ষম বাহির করিয়া, কন্ঠের উপর গ্রন্থি দিয়া, কন্ঠ হইতে জান, পৰ্যন্ত শরীর আব্বত করিল। এইরনুপে সক্তিজত হইয়া সেই নাতন সন্ন্যাসী গহমধ্যে ধীরে ধীরে চারি দিক নিরীক্ষণ করিল। রাত্ৰি দিবতীয় প্রহর হইলে শান্তি সেই সন্ন্যাসিবেশে দাবারোদঘাটনপৰিবাক অন্ধকারে একাকিনী গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বনদেবীগণ সেই নিশীথে কাননমধ্যে অপব্ব গীতধবনি শ্রবণ করিল। গীতk “দড় বড়ি ঘোড়া চড়ি কোথা তুমি যাও রে ।” “সমরে চলিন, আমি হামো না ফিরাও রো। হরি হরি হরি হরি বলি রণরঙ্গে, ঝাঁপ দিব প্ৰাণ আজি সমর-তরঙ্গে, তুমি কার কে তোমার, কেন এসো সঙ্গে, “রমণীতে নাহি সাধ, রণজয় গাও রে ।” ‘পায়ে ধরি প্রাণনাথ আমি ছেড়ে যেও না।” “ওই শন বাজে ঘন রণজয় বাজনা। নাচিছে তুরঙ্গ মোর রণ ক'রে কামনা, উড়িল আমার মন, ঘরে আর রব না, রমণীতে নাহি সাধ রণজয় গাও রে ।” তৃতীয় পরিচ্ছেদ পরদিন আনন্দমঠের ভিতর নিভৃত কক্ষে বসিয়া ভগ্নোৎসাহ সন্তাননায়ক তিন জন কথোপকথন করিতেছিলেন। জীবানন্দ সত্যানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ ! দেবতা আমাদিগের প্রতি এমন অপ্ৰসন্ন কেন ? কি দোষে আমরা মসলমানের নিকট পরাভূত হইলাম ?”

  • রাগিণী বাগীশবরী-তাল আড়া।

CA 8C