পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী উত্তর করিলেন, “সে কি ঠানদিদি ! রসের মানষ দেখে ঠানদিদি বলি। নইলে যখন হিসাব হয়েছিল, তুমি আমার চেয়ে ছয় বছরের ছোট হইয়াছিলে, মনে নাই ? আমাদের বৈষ্ণবের সকল রকম আছে জােন, আমার মনে মনে ইচ্ছা, মঠাধারী ব্রহ্মচারীকে বলিয়া তোমায় সাঙ্গা করে ফেলি । সেই কথাটাই বলতে এসেছি।” গৌরী। সে কি কথা ?--ছি! আমন কথা কি বলতে আছে! আমরা হলেম বিধবা। ভব। তবে সাঁওগা হবে না ? গৌরী। তা ভাই, যা জান তা কর । তোমরা হ'লে পন্ডিত, আমরা মেয়েমনিষ কি বঝি ? তা, কবে হবে ? ভবানন্দ অতিকম্পেট হাস্যসংবরণ করিয়া বলিলেন, “সেই ব্রহ্মচারীটার সঙ্গে একবার দেখা হইলেই হয়। আর-সে। কেমন আছে ?” গৌরী বিষগ্ন হইল। মনে মনে সন্দেহ করিল, সাঙ্গার কথাটা। তবে বাকি তামাশা। বলিল, *আছে আর কেমন, যেমন থাকে ৷ ” ভব। তুমি গিয়া একবার দেখিয়া আইস কেমন আছে, বলিয়। আইস, আমি আসিয়াছি, একবার সাক্ষাৎ করিব । গৌরী দেবী তখন ভাতের কাটি ফেলিয়া, হাত ধাইয়া বড় বড় ধাপের সিড়ি ভাঙিগয়া, দোতালার উপর উঠিতে লাগিল। একটি ঘরে ছোড়া মাদরের উপর বসিয়া এক অপবব সন্দিরী। কিন্তু সৌন্দয্যের উপর একটা ঘোরতর ছায়া আছে। মধ্যাহ্নে কালপরিপলাবিণী প্ৰসন্নসলিলা বিপলেজলকল্লোলিনী স্রোতসাবতীর বক্ষের উপর অতি নিবিড় মেঘের ছায়ার ন্যায় কিসের ছায়া আছে। নদীহািদয়ে তরঙ্গ বিক্ষিপত হইতেছে, তীরে কুসীমিত তরকুল বায় ভরে হেলিতেছে, ঘন পশুপভরে নমিতেছে, অট্টালিকাশ্রেণীও শোভিতেছে। তরণী:শ্রেণী-তাড়নে জল আন্দোলিত হইতেছে। কাল মধ্যাহ্ন, তব সেই কাদম্বিনী নিবিড় কালো ছায়ায় সকল শোভাই কালিমাময়। এও তাই। সেই পকেবার মত চার চিক্কণ চঞ্চল নিবিড় অলীকদম, পকেবাের মত সেই প্রশস্ত পরিপািণ ললাটভূমে পড়ববািমত অতুল তুলিকালিখিত ভ্ৰধন, পকেবাের মত বিস্ফারিত সজল। উত্তজবল কৃষ্ণতার বহি চক্ষ, তত কটাক্ষময় নয়, তত লোলতা নাই, কিছ নম্র । অধরে তেমনি রােগরঙগ, হৃদয় তেমনি শাবাসােনগামী পণ্যতায় ঢল ঢল, বাহ, তেমনি বনলতাদ প্রাপ্য কোমলতাযন্ত। কিন্তু আজ সে দীপিত নাই, সে উক্তজবলতা নাই, সে প্রখরতা নাই, সে চঞ্চলতা নাই, সে রস নাই। বলিতে কি, বঝি সে যৌবন নাই। আছে কেবল সে সৌন্দৰ্য্য আর সে মাধয্য। নতন হইয়াছে ধৈৰ্য্য গাম্পভীয্য। ইহাকে পাবেব দেখিলে মনে হইত, মনষ্যিলোকে অতুলনীয়া সন্দরী, এখন দেখিলে বোধ হয়, ইনি দেবলোকে শাপগ্ৰস্তা দেবী । ইহার চারি পাশেবা দই তিনখানা তুলটের পথি পড়িয়া আছে। দেওয়ালের গায়ে হরিনামের মালা টাঙ্গান আছে, আর মধ্যে মধ্যে জগন্নাথ বলরাম সভদ্রার পট, কালিয়দমন, নবনারীকুঞ্জার, বস্ত্রহরণ, গোবদ্ধনধারণ প্রভৃতি ব্রজলীলার চিত্র রঞ্জিত আছে। চিত্রগলির নীচে লেখা আছে, “চিত্র না বিচিত্ৰ ?” সেই গহমধ্যে ভবানন্দ প্রবেশ করিলেন। ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন কল্যাণি, শারীরিক মণ্ডগলি তা ?” কল্যাণী । এ প্রশন কি আপনি ত্যাগ করবেন না ? আমার শারীরিক মণ্ডগলে আপনারই কি ইন্ডট, আর আমারই বা কি ইভাট ? ভব। যে ব্যক্ষ রোপণ করে, সে তাহাতে নিত্য জল দেয়। গাছ বাড়িলেই তাহার সখ । তোমার মতদেহে আমি জীবন রোপণ করিয়াছিলাম, বাড়িতেছে কি না, জিজ্ঞাসা করিব না। OKSa ? ক। বিষবক্ষের কি ক্ষয় আছে ? ভব। জীবন কি বিষ ? কা। না হলে আমাত ঢালিয়া আমি তাহ ধবংস করিতে চাহিয়াছিলাম কেন ? ভব। সে অনেক দিন জিজ্ঞাসা করিব মনে ছিল, সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করিতে পারি নাই। কে তোমার জীবন বিষময় করিয়াছিল ? কল্যাণী স্থিরভাবে উত্তর করিলেন, “আমার জীবন কেহ বিষময় করে নাই। জীবনই বিষময়। আমার জীবন বিষময়, আপনার জীবন বিষময়, সকলের জীবন বিষময় ।” Գ \Ն Հ