পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VTeolj যোদ্ধা এক মাত্তিকান্তপের উপর উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, “চল এই জ্যোৎস্নারাত্রে ঐ পৰ্ব্ববতশিখরে, নািতন বসন্তের নােতন। ফলের গন্ধ শকিতে শকিতে আজ আমাদের শত্রর সঙ্গে যাদ্ধ করিতে হইবে।” সন্তানসেনা দেখিল, সেনাপতি জীবানন্দ । তখন “হরে মর্যারো” উচ্চ শবদ করিয়া যাবতীয় সন্তানসেনা বল্লমে ভর করিয়া উচু হইয়া উঠিল; এবং সেই সেনা জীবানন্দের অন্যাকরণ পর্বক বেগে টিলার উপর আরোহণ করিতে লাগিল। একজন সক্তিজত অশ্ব আনিয়া জীবানন্দকে দিল। দরি হইতে মহেন্দ্ৰ দেখিয়া বিস্মিত হইল। ভাবিল, একি এ ? না বলিতে ইহারা আসে কেন ? এই ভাবিয়া মহেন্দ্র ঘোড়ার মািখ ফিরাইয়া চাবকের ঘায়ে ধোঁয়া উড়াইয়া দিয়া পৰ্ব্বত অবতরণ করিতে লাগিলেন। সন্তানবাহিনীর অগ্রবত্তী জীবানন্দের সাক্ষাৎ পাইয়া, জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ আবার কি আনন্দ ?” জীবানন্দ হাসিয়া বলিলেন, “আজ বড় আনন্দ। টিলাব ওপিঠে এডওয়ার্ডস সাহেব। যে আগে উপরে উঠবে, তারই জিত।” গোস্বামী। সহস্ৰ শত্রর প্রাণবধ করিয়াছি।” তুমলি নিনাদে কানন প্রান্তর সব ধবনিত করিয়া শবদ হইল, “চিনি আমরা! তুমি জীবানন্দ গোস্বামী ।” জীব। বল “হরে মর্যারে।” কানন প্রান্তর সহস্ৰ সহস্র কণ্ঠে ধবনিত হইল, “হরে মর্যারে “ জীব। টিলার ওপিঠে শত্র। আজ এই স্ত,পশিখরে, এই নীলাম্বরী যামিনী সাক্ষাৎকার, সন্তানেরা রণ করবে। দ্রুত আইস, যে আগে শিখরে উঠিবে, সেই জিতিবে। বল, “বন্দে মাতরম।” তখন কানন প্রান্তর ধবনিত করিয়া গীতধবনি উঠিল, “বন্দে মাতরম।” ধীরে ধীরে সন্তানসেনা পৰ্ব্বতশিখর আরোহণ করিতে লাগিল; কিন্তু তাহারা সহসা সভয়ে দেখিল, মহেন্দ্র সিংহ অতি দ্রুতবেগে সন্তাপ হইতে অবতরণ করিতে করিতে তযোনিনাদ করিতেছেন। দেখিতে দেখিতে শিখরদেশে নীলাকাশপটে কামানশ্রেণী সহিত, ইংরেজের গোলন্দাজ সেনা শোভিত। হইয়াছে। উচ্চৈঃস্বরে বৈষ্ণবী সেনা গায়িল,— “তুমি বিদ্যা তুমি ভক্তি, তুমি মা বাহতে শক্তি ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে।” কিন্তু ইংরেজের কামানের গড়মা গড়ম, গম, শব্দে সে মহাগীতিশব্দ ভাসিয়া গেল। শত শত সন্তান হত আহত হইয়া, অস্ত্ৰ-শস্ত্ৰ সহিত, টিলার উপর শাইল। আবার গড়ম গম, দধীচির অসিথকে ব্যঙ্গ করিয়া, সমদ্রের তরঙ্গভঙ্গকে তুচ্ছ করিয়া, ইংরেজের বাজ গড়াইতে হইতে লাগিল। ব্যথায় জীবানন্দ, ব্যথায় মহেন্দ্ৰ যত্ন করিতে লাগিলেন। পতনশীল শিলারাশির ন্যায় সন্তানসেনা টিলা হইতে ফিরিতে লাগিল। কে কোথায় পলায় ঠিকানা নাই। তখন একেবারে সকলের বিনাশসাধনের জন্য। “হািররে! হররে!” শব্দ করিতে করিতে গোরার পলিটন টিলা হইতে নামিল। সঙ্গীন উচু করিয়া অতি দ্রুতবেগে, পৰ্ব্বতবিমােন্ত বিশালতটিনীপ্রপাতিবৎ দদািমনীয় অলঙঘ্য অজেয় ব্রিটিশ সেনা, পলায়নপর সন্তাসেনার পশ্চাৎ ধারিত হইল। জীবানন্দ একবার মাত্ৰ মহেন্দ্রের সাক্ষাৎ পাইয়া বলিলেন, “আজ শেষ। এস এইখানে মারি।” মহেন্দ্র বলিলেন, “মরিলে যদি রণজয় হইত, তবে মরিতাম। ব্যথা মাতৃত্যু বীরের ধৰ্ম্ম क7श् ।।” জীব । “আমি ব্যথাই মরিব । তব যন্ধে মরিব।” তখন পাছ ফিরিয়া উচ্চৈঃস্বরে জীবানন্দ ডাকিলেন, ‘কে হরিনাম করিতে করিতে মরিতে চাও, আমার সঙ্গে আইস।” অনেকে অগ্রসর হইল ; জীবানন্দ বললেন, “আমন নহে। হরিসাক্ষাৎ শপথ কর, জীবনেন্ত ফিরিবে না।” ○ げC)