পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী সপতম পরিচ্ছেদ প্রফতুল্ল ও প্রফল্পের মা বাড়ী আসিল। প্ৰফীল্লের মার যাতায়াতে বড় শারীরিক কস্ট গিয়াছে—মানসিক কািট ততোধিক। সকল সময় সব সয় না। ফিরিয়া আসিয়া প্ৰফীল্লের মা জন্বরে পড়িল। প্রথমে জবর অলপ, কিন্তু বাঙ্গালীর ঘরের মেয়ে, বামনের ঘরের মেয়ে—তাতে বিধবা, প্রফল্পের মা জবরকে জবর বলিয়া মানিল না। তারই উপর দলবেলা স্নান, জটিলে আহার, পববািমত চলিল। প্রতিবাসীরা দয়া করিয়া কখনও কিছ দিত, তাহাতে আহার চলিত। ক্ৰমে জবর অতিশয় বন্ধি পাইল—শেষে প্রফল্লের মা শয্যাগত হইল। সে কালে সেই সকল গ্রাম্য প্রদেশে চিকিৎসাপত্র বড় ছিল না—বিধবারা প্রায়ই ঔষধ খাইত না-বিশেষ প্রফল্পের এমন লোক নাই যে, কবিরাজ ডাকে। কবিরাজও দেশে না থাকারই মধ্যে। জবর বাড়িল—বিকার প্ৰাপত হইল, শেষে প্রফল্পের মা সকল দঃখ হইতে মক্ত হইলেন। পাড়ার পাঁচ জন, যাহারা তাহার অমলেক কলঙ্ক রটাইয়াছিল, তাহারাই আসিয়া প্রফল্পের মারা সৎকার করিল। বাঙগালীরা এ সময় শত্ৰতা রাখে না। বাঙ্গালী জাতির সে গণ আছে। প্রফতুল্ল একা। পাড়ার পাঁচ জন আসিয়া বলিল, “তোমাকে চতুর্থের শ্রাদ্ধ করিতে হইবে।” প্রফতুল্ল বলিল, “ইচ্ছা, পিন্ডদান করি—কিন্তু কোথায় কি পাইব ?” পাড়ার পাঁচ জন বলিল, “তোমায় কিছ: করিতে হইবে না-আমরা সব করিয়া লইতেছি।“ কেহ কিছ নগদ দিল, কেহ কিছ সামগ্ৰী দিল, এইরনুপ করিয়া শ্ৰাদ্ধ ও ব্রাহ্মণ-ভোজনের উদ্যোগ হইল। প্রতিবাসীরা আপনারাই সকল উদ্যোগ করিয়া লইল । একজন প্রতিবাসী বলিল, “একটা কথা মনে হইতেছে। তোমার মাের শ্রাদ্ধে তোমার শবশারকে নিমন্ত্রণ করা উচিত কি না ?” প্রফল্পে বলিল, “কে নিমন্ত্ৰণ করিতে যাইবে ?” দই জন পাড়ার মাতব্বর লোক অগ্রসর হইল। সকল কাজে তাহারাই আগ হয়—তাদের সেই রোগ। প্রফতুল্ল বলিল, “তোমরাই আমাদের কলঙ্ক রটাইয়া সে ঘর ঘচাইয়ােছ।” তাহারা বলিল, “সে কথা আর মনে করিও না। আমরা সে কথা সারিয়া লইব । তুমি এখন অনাথা বালিকা—তোমার সঙেগ আর আমাদের কোন বিবাদ নাই।” প্রফল্পে সম্মত হইল। দই জন। হরবল্লভকে নিমন্ত্ৰণ করিতে গেল। হরিবল্লভ বলিলেন, “কি ঠাকুর ! তোমরাই বিহাইনকে জাতিভ্ৰমেটা বলিয়া তাকে একঘরে করেছিলে—আবার তোমাদেরই মখে এই কথা ?” ব্রাহ্মণেরা বলিল, “সে কি জানেন--আমিন পাড়াপাড়শীতে গোলযোগ হয়—সেটা কোন কাজের কথা নয় | ’ হরিবল্লভ বিষয়ী লোক—ভাবিলেন, “এ সব জয়াচুরি। এ বেটারা বাগদী বেটীর কাছে টাকা খাইয়াছে। ভাল, বাগদী বেটী টাকা পাইল কোথা ? “ অতএব হরিবল্লভ নিমন্ত্রণের কথায় কৰ্ণপাতও করিলেন না। তাঁহার মন প্রফক্সের প্রতি বরং আরও নিম্ঠর ও ক্লদ্ধ হইয়া উঠিল। ব্রজেশবের এ সকল শনিল। মনে করিল, “এক দিন রাত্রে ল্যুকাইয়া গিয়া প্ৰফল্লিকে দেখিয়া আসিব । সেই রাত্রেই ফিরিব।” প্রতিবাসীরা নিৰ্ম্মফল হইয়া ফিরিয়া আসিলেন। প্ৰফল্ল যথারীতি মাতৃশ্ৰাদ্ধ করিয়া প্রতিবাসীদিগের সাহায্যে ব্রাহ্মণ-ভোজন সম্পন্ন করিল। ব্রজেশবের যাইবার সময় খাজিতে লাগিল। অভটম পরিচ্ছেদ ফলমণি নাপিতনীর বাস প্রফল্পের বাসের নিকট। মাতৃহীন হইয়া অবধি প্রফতুল্ল একা গহে বাস করে। প্ৰফল্লা সন্দেরী, যাবতী, রাত্রে একা বাস করে, তাহাতে ভয়ও আছে, কলঙ্কও আছে। কাছে শইবার জন্য রাত্রে একজন স্ত্রীলোক চাই। ফলমণিকে এ জন্য প্রফতুল্ল অননুরোধ করিয়াছিল। ফলমণি বিধবা ; তার এক বিধবা ভগিনী ভিন্ন কেহ নাই। আর তারা দাই বানেই প্রফল্পের মারি অনাগত ছিল। এই জন্য প্রফাল্লা ফলমণিকে অন্যুরোধ করে, আর f? ONS ܠ k)