পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী প্রফল সেই পথে চলিল। বাড়ী ফিরিয়া যাইতে ভয়, পাছে বাড়ী হইতে আবার তাকে ডাকাইতে ধরিয়া আনে। বাঘ-ভালকে খায়, সেও ভাল, আর ডাকাইতের হাতে না পড়িতে হয়। পথের রেখা ধরিয়া প্রফতুল্ল অনেক দীর গেল।--বেলা দশ দন্ড হইল, তব, গ্রাম পাইল না। শেষে পথের রেখা বিলপতি হইল—আর পথ পায় না। কিন্তু দাই একখানা পরাতন ইট দেখিতে পাইল । ভরসা পাইল। মনে করিল, যদি ইট আছে, তবে অবশ্য নিকটে মনষ্যালয় আছে। যাইতে যাইতে ইটের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল। জঙ্গল দাভেদ্য হইয়া উঠিল। শেষে প্ৰফােল্ল দেখিল, নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে এক বহৎ অট্টালিকার ভগন্নাবশেষ রহিয়াছে। প্রফাল্ল ইন্টকস্তাপের উপর আরোহণ করিয়া চারি দিক নিরীক্ষণ করিল। দেখিল, এখনও দই চারটা ঘর অভগন আছে। মনে করিল, এখানে মানষে থাকিলেও থাকিতে পারে। প্রফতুল্ল সেই সকল ঘরের ভিতর প্রবেশ করিতে গেল ! দেখিল, সকল ঘরের দাবার খোলা-মনষ্য নাই। অথচ মনষ্যে-বাসের চিহ্নও কিছ, কিছ আছে। ক্ষণপরে প্রফল্পে কোন বড়া মানষের কাতরানি শািনতে পাইল । শব্দ লক্ষ্য করিয়া প্ৰফল্লি এক কুঠরীমধ্যে প্রবেশ করিল। দেখিল, সেখানে এক বড়া শইয়া কাতরাইতেছে। বড়ার শীর্ণ দেহ, শম্ভক ওঠে, চক্ষ কোটরগত, ঘন শবাস। প্রফতুল্ল বঝিল, ইহার মাতু্য নিকট। প্রফতুল্ল তাহার শয্যার কাছে গিয়া দাঁড়াইল । বড়ো প্রায় শতককন্ঠে বলিল, “মা, তুমি কে ? তুমি কি কোন দেবতা, মাতৃত্যুকালে আমার উদ্ধারের জন্য আসিলে ?” প্রফতুল্ল বলিল, “আমি অনাথা। পথ ভুলিয়া এখানে আসিয়াছি। তুমিও দেখিতেছি। অনাথ --তোমার কোন উপকার করিতে পারি ?” বড়ো বলিল, “অনেক উপকার এ সময়ে করিতে পাের। জয় নন্দদালাল ! এ সময়ে মনষ্যের মািখ দেখিতে পাইলাম। পিপাসায় প্রাণ যায়—একট, জল দাও।” প্রফতুল্ল দেখিল, বড়ার ঘরে জল-কলসী আছে, কলসীতে জল আছে, জলপাত্ৰ আছে; কেবল দিবার লোক নাই। প্ৰফল্ল জল আনিয়া বড়াকে খাওয়াইল । বড়ো জল পান করিয়া কিছর সস্থির হইল। প্রফতুল্ল এই অরণ্যমধ্যে মন্মষে বন্ধকে একাকী এই অবস্থায় দেখিয়া বড় কৌত হলী হইল। কিন্তু বড়ো তখন অধিক কথা কহিতে পারে না। প্রফতুল্ল সতরাং ত্যাহার সবিশেষ পরিচয় পাইল না। বড়ো যে কয়টি কথা বলিল, তাহার মন্মথ এই ;-— বড়ো বৈষ্ণব। তাহার কেহ নাই, কেবল এক বৈষ্ণবী ছিল। বৈষ্ণবী বড়াকে মামনুষ দেখিয়া তাহার দ্রব্যসামগ্রী যাহা ছিল, তাহা লইয়া পলাইয়াছে। বড়ো বৈষ্ণব।--তাহার দাহ হইবে না। বড়ার কবর হয়---এই ইচ্ছা ! বািড়ার কথামত, বৈষ্ণবী বাড়ীর উঠানে তাহার একটি কবর কাটিয়া রাখিয়া দিয়াছে। হয়ত শাবল কোদালি সেইখানে পড়িয়া আছে। বড়ো এখন প্রফল্পের কাছে এই ভিক্ষা চাহিল যে, “আমি মরিলে সেই কবরে আমাকে টানিয়া ফেলিয়া দিয়া মাটি চাপা দিও।” প্রফল্পে স্বীকৃত হইল। তার পর বাড়া বলিতে লাগিল, “আমার কিছর টাকা পোঁতা আছে। বৈষ্ণবী সে সন্ধান জানিত না।--তাহা হইলে, না লইয়া পালাইত না। সে টাকাগলি কাহাকে না দিয়া গেলে আমার প্রাণ বাতি বা হইবে না। যদি কাহাকে না দিয়া মারি, তবে যক্ষ হইয়া টাকার কাছে ঘরিয়া বেড়াইব— আমার গতি হইবে না। বৈষ্ণবীকে সেই টাকা দিব মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু সে ত পলাই যাছে ? আর কোন মনতুষ্যের সাক্ষাৎ পাইব ? তাই তোমাকেই সেই টাকাগলি দিয়া যাইতেছি। আমার বিছানার নীচে একখানা চৌকা তক্তা পাতা আছে। সেই তক্তাখানি তুলিবে। একটা সািরওগ দেখিতে পাইবে । বরাবর সিড়ি আছে। সেই সিড়ি দিয়া নামিবে।---ভয় নাই-আলো লইয়া যাইবে । নীচে মাটির ভিতর এমনি একটা ঘর দেখিবো। সে ঘরের বায় কোণে খািনজিও-টাকা পাইবে।” প্রফতুল্ল বড়োর শশ্রেষায় নিযক্তা রহিল। বড়ো বলিল, “এই বাড়ীতে গোহািল, আছেগোেহালে গোর আছে। গোহাল হইতে যদি দধি দইয়া আনিতে পাের, তবে একটা আনিয়া আমাকে দাও, একটি আপনি খাও।” প্ৰফল্লি তাহাঁই করিল-দধি আনিবার সময় দেখিয়া আসিল—কবর কাটা-সেখানে কোদালি শাবল পড়িয়া আছে। OS