পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী পোরা ছিল, ডাল নাড়া দিতেই ঝর-ঝরা করিয়া পড়িয়া গেল। দেবী তখন ঐ সত্ৰীলোককে কাণে কাণে বলিল, “আমি আর এ রঙগ করিতে পারি না। তুই কথা ক’। সব জানিস ত?” এই বলিয়া দেবী সে কামরা হইতে উঠিয়া অন্য কামরায় গেল। ঐ সত্ৰীলোকটি দেবীর আসন গ্রহণ করিয়া, ব্ৰজেশবরের সহিত কথা কহিতে লাগিল। এই সত্ৰীলোকের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় আছে—ইনি সেই বামনশন্যে বামনী—নিশি ঠাকুরাণী। নিশি বলিল, “এইবার ঠিক বলেছ—তোমার নাম ব্রজেশবের রায়।” ব্ৰজেশবরের একটি গোল বাধিলা। পদার আড়ালে কিছই দেখিতে পাইতেছিলেন না— কিন্তু কথার আওয়াজে সন্দেহ হইল যে, যে কথা কহিতেছিল, এ সে বঝি নয়। তার আওয়াজটা বড় মিঠে লাগিতেছিল—এ বঝি তত মিঠে নয়। যাই হউক, কথার উত্তরে ব্রজেশবের বলিলেন, “যদি আমার পরিচয় জানেন, তবে এই বেলা দরটা চুকাইয়া লউন—আমি সবস্থানে চলিয়া যাই। কি দরে আমাকে ছাড়িবেন ?” নিশি। এক কড়া কাণা কড়ি। সঙেগ আছে কি ? থাকে। যদি, দিয়া চলিয়া যান। ব্রজ। আপাততঃ সঙ্গে নাই। নিশি। বজরা হইতে আনিয়া দিন । ব্রজ। বজরাতে যাহা ছিল, তাহা আপনার অনচরেরা লইয়া আসিয়াছে। আর এক কড়া दक°ा <र्ग:फु७ न्शे । নিশি। মাঝিদের কাছে ধার করিয়া আনন। ব্রজ । মাঝিরাও কাণা কড়ি রাখে না। নিশি। তবে যত দিন না। আপনার উপযক্ত মাল্য আনাইয়া দিতে পারেন, তত দিন কয়েদ থাকুন। ব্রজেশবের তার পর শানিলেন, কামরার ভিতরে আর একজন কে—কন্ঠে সেও বোধ হয় সত্ৰীলোক-দেবীকে বলিতেছে, “রাণীজি! যদি এক কড়া কাণা কড়িই এই মানষটার দর হয়, তবে আমি এক কড়া কাণা কড়ি দিতেছি। আমার কাছে উহাকে বিক্রি করবেন।” ব্রজেশবের শনিলেন, রাণী উত্তর করিল, “ক্ষতি কি ? কিন্তু মানষটাকে নিয়ে তুমি কি করিবে ? ব্রাহ্মণ, জল তুলিতে, কাঠ কাটিতে পরিবে না।” ব্ৰজেশবর প্রত্যুত্তরও শনিলেন, —রমণী বলিল, “আমার রাঁধিবার ব্রাহ্মণ নাই। আমাকে রধিয়া দিবে। ” তখন নিশি ব্ৰজেশবরকে সম্বোধন করিয়া বলিল, “শনিলেন,-আপনি বিক্ৰি হইলেন--আমি কাণা কড়ি পাইয়াছি। যে আপনাকে কিনিল, আপনি তাহার সঙেগ যান, রাঁধিতে হইবে।” ব্রজেশবের বলিল, “কই তিনি ?” নিশি। সত্ৰীলোক—বাহিরে যাইবে না, আপনি ভিতরে আসন। ষািঠ পরিচ্ছেদ ব্রজেশবের অনািমতি পাইয়া, পদা তুলিয়া, কামরার ভিতরে প্রবেশ করিল। প্রবেশ করিয়া যাহা দেখিল, ব্রজেশবের তাহাতে বিস্মিত হইল। কামরার কাঠের দেওয়াল, বিচিত্র চারচিত্রিত। যেমন আশিবন মাসে ভক্ত জনে দশভূজা প্রতিমা পজা করিবার মানসে প্রতিমার চাল চিত্রিত করায় —এ তেমনি চিত্র। শম্ভনিশম্ভের যাদ্ধ; মহিষাসরের যন্ধ; দশ অবতার; অন্ট নায়িকা; সপত মাতৃকা; দশ মহাবিদ্যা; কৈলাস; বন্দোবন ; লঙ্কা; ইন্দ্ৰালয় ; নবনারী-কুঞ্জর ; বস্ত্ৰহরণ; সকলই চিত্রিত। সেই কামরায় চারি। আওগল পরে গালিচা পাতা, তাহাতেও কত চিত্র। তার উপর কত উচ্চ মসনদ—মখমলের কামদার বিছানা, তিন দিকে সেইরােপ বালিশ ; সোণার আতরদান, তারই গোলাব-পাশ, সোণার বাটা, সোণার পল্পপাত্র—তাহাতে রাশীকৃত সগন্ধি ফল; সোণার আলবোলা; পোরজারের সটীকা—সোণার মাখনলে মতির থোপি দলিতেছে—তাহাতে মগনাভিসগন্ধি তামাকু সাজা আছে। দই পাশে দই রপোর ঝাড়, তাহাতে বহসংখ্যক সংগন্ধি দলীপ রুপার পরীর মাথার উপর জবুলিতেছে; উপরের ছাদ হইতে একটি ছোট দীপ সোণার শিকলে লটকান আছে। চারি কোণে চারিটি রােপর পাতুল, চারিটি বাতি হাতে করিয়া ধরিয়া আছে। Ե ՀՀ,