পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী যে রাজপথ অতিবাহিত করিয়া বিমলা যােবরাজকে লইয়া যাইতেছিলেন, সে পথে দগাবারে যাইতে হয়। দাগের পাশে বা আম্রকানন; সিংহদ্বার হইতে কানন আব্দশ্য। ঐ পথ হইতে যথা আমোদর অন্তঃপরপশ্চাৎ প্রবাহিত আছে, সে দিকে যাইতে হইলে এই আমুকানন মধ্য দিয়া যাইতে হয়। বিমলা এক্ষণে রাজবাত্ম ত্যাগ করিয়া রাজপত্রসঙ্গে এই আম্রকাননে প্রবেশ করিলেন। আম্রকানন প্রবেশাবধি, উভয়ে পানব্বার সেইরাপ শঙ্কপণভঙ্গ সহিত মনষ্য-পদধবনির ন্যায় শবদ শনিতে পাইলেন। রাজপত্র কুহিলেন, “তুমি পনেরপি ক্ষণেক দাঁড়াও, আমি দেখিয়া আসি।” রাজপত্রে আঁসি নিস্কোষিত করিয়া যে দিকে শব্দ হইতেছিল, সেই দিকে গেলেন; কিন্তু কিছ, দেখিতে পাইলেন না। আমুকাননতলে নানা প্রকার আরণ্য লতাদির সমদ্ধিতে এমন বন হইয়াছিল এবং বাক্ষাদির ছায়াতে রাত্ৰে কাননমধ্যে এমন অন্ধকার হইয়াছিল যে, রাজপত্র যেখানে যান, তাহার অগ্রে অধিক দীর দেখিতে পান না। রাজপত্র এমনও বিবেচনা করিলেন যে, পশহর পদচারণে শঙ্কপত্ৰভঙ্গ শব্দ শনিয়া থাকিবেন। যাহাই হউক, সন্দেহ নিঃশেষ করা উচিত বিবেচনা করিয়া রাজকুমার অসিহস্তে আমবক্ষের উপর উঠিলেন। বক্ষের অগ্রভাগে আরোহণ করিয়া ইতস্তীতঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন ; বহ ক্ষণ নিরীক্ষণ করিতে করিতে, দেখিতে পাইলেন যে, এক বহৎ আমব ক্ষের তিমিরাবত শাখাসমন্টিমধ্যে দইজন মনষ্যে বসিয়া আছে; তাহাদিগের উষ্ণীষে চন্দ্ররাশিম পড়িয়াছে, কেবল তাঁহাই দেখা যাইতেছিল; অবয়ব ছায়ায় লক্কায়িত ছিল। রাজপত্র উত্তমরাপে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন, উষ্ণীষ মস্তকে মনষ্যে বটে, তাহার সন্দেহ নাই। তিনি উত্তমরাপে বক্ষটি লক্ষিত করিয়া রাখিলেন যে, পানরায় আসিলে না ভ্ৰম হয়। পরে ধীরে ধীরে বক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া নিঃশব্দে বিমলার নিকট আসিলেন। যাহা দেখিলেন, তাহা বিমলার নিকট বর্ণনা করিয়া কহিলেন, “এ সময়ে যদি দইটা বশর্তা থাকিত!” বিমলা কহিলেন, “বশ্যা লইয়া কি করিবেন ?” জ। তাহা হইলে ইহারা কে, জানিতে পারিতাম ; লক্ষণ ভাল বোধ হইতেছে না। উষ্ণীষ দেখিয়া বোধ হইতেছে, দারাত্মা পাঠানেরা কোন মন্দ অভিপ্ৰায়ে আমাদের সঙ্গ লইয়াছে। তৎক্ষণাৎ বিমলার পথপাশ্বাস্থ মতে অশ্ব, উষ্ণীষ আর অশ্বসৈন্যের পদচিহ্ন সমরণ হইল। তিনি কহিলেন, “আপনি তবে এখানে অপেক্ষা করন; আমি পলকমধ্যে দািগ হইতে বশর্তা আনিতেছি।” এই বলিয়া বিমলা ঝটিতি দগমধ্যে গেলেন। যে কক্ষে বসিয়া সেই রাত্রি প্রদোষে বেশবিন্যাস করিয়াছিলেন, তাহার নীচের কক্ষের একটি গবাক্ষ আমুকাননের দিকে ছিল। বিমলা অঞ্চল হইতে একটি চাবি বাহির করিয়া ঐ কলে ফিরাইলেন ; পশ্চাৎ জানালার গরাদে ধরিয়া দেয়ালের দিকে টান দিলেন; শিলাপকৌশলের গণে জানালার কবাট, চৌকাঠ-গরাদে সকল সমেত দেয়ালের মধ্যে এক রন্ধে প্রবেশ করিল, বিমলার কক্ষমধ্যে প্রবেশ জন্য পথ মক্ত হইল। বিমলা কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া দেয়ালের মধ্য হইতে জানালার চৌকাঠ ধরিয়া টানিলেন, জানােলা বাহির হইয়া পনেকবার পক্বেস্থানে স্থিত হইল; কবাটের ভিতর দিকে পািব্ববিৎ গা-চাবির কল ছিল, বিমলা অঞ্চলের চাবি লইয়া ঐ কলে লাগাইলেন। জানােলা নিজ স্থানে দঢ়রপে সংস্থাপিত হইল, বাহির হইতে উদ্ঘাটিত হইবার সম্পভাবনা রহিল না। বিমলা অতিদ্রুতবেগে দাগের শেলখানায় গেলেন। শেলখানায় প্রহরীকে কহিলেন, “আমি তোমার নিকট যাহা চাহি, তুমি কাহারও সাক্ষাৎ বলিও না। আমাকে দইটা বশী দাও -আবার আনিয়া দিব।” প্রহরী চমৎকৃত হইল, “মা, তুমি বশর্তা লইয়া কি করিবে ?” প্রত্যুৎপন্নমতি বিমলা কহিলেন, “আজ আমার বীরপঞ্চমীর ব্রত, ব্ৰত করিলে বীর পত্র হয়; তাহাতে রাত্রে অস্ত্ৰ পজা করিতে হয়; আমি পত্ৰ কামনা করি, কাহারও সাক্ষাৎ প্রকাশ করিও না।” প্রহরীকে যেরপ বাবাইল, সেও সেইরােপ বঝিল। দগস্থ সকল ভূত্য বিমলার আজ্ঞাধারী ছিল; সতরাং দ্বিতীয় কথা না কহিয়া দইটা শাণিত বশর্তা দিল। বিমলা বশ্য লইয়া পৰ্ব্ববাবেগে গবাক্ষের নিকট প্রত্যাগমন করিয়া পৰ্ব্বব্যাবৎ ভিতর হইতে জানােলা খলিলেন, এবং বিশাসহিত নিৰ্গত হইয়া জগৎসিংহের নিকটে গেলেন। ব্যস্ততা প্রযক্তই হউক, বা নিকটেই থাকিবেন এবং তৎক্ষণেই প্রত্যাগমন করিবেন, এই b'S