পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী করিতে হইয়াছিল, পঞ্জাবের লড়াইয়ের পকেব। আর কখন তত করিতে হয় নাই। এ সকল অরাজকতার সময়ে ডাকাইতিই ক্ষমতাশালী লোকের ব্যবসা ছিল। যাহারা দািববলৈ বা গন্ডমখ, তাহারাই “ভাল মানষ” হইত। ডাকাইতিতে তখন কোন নিন্দা বা লজজা ছিল না। দেবী জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিয়াও অনেক দীর গেল। একটা গাছের তলায় পৌছিয়া পরিচারিকাকে বলিল, “দিবা, তুই এখানে বাস; আমি আসিতেছি। এ বনে বাঘ-ভালকে বড় অলপ । আসিলেও তোর ভয় নাই। লোক পাহারায় আছে।“ এই বলিয়া দেবী সেখান হইতে আরও গাঢ়তর জঙ্গলমধ্যে প্রবেশ করিল। অতি নিবিড় জঙ্গলের ভিতর একটা সরঙগ। পাথরের সিড়ি আছে। যেখানে নামিতে হয়, সেখানে অন্ধকার—পাথরের ঘর। পরবর্তীকালে বোধ হয় দেবালয় ছিল—এক্ষণে কাল সহকারে চারি পাশে মাটি পড়িয়া গিয়াছে। কাজেই তাহাতে নামিবার সিড়ি গড়িবার প্রয়োজন হইয়াছে। দেবী অন্ধকারে সিড়িতে নামিল। সেই ভূগৰ্ভস্থ মন্দিরে মিট-মিট করিয়া একটা প্ৰদীপ জীবলিতেছিল। তার আলোতে এক শিবলিঙ্গ দেখা গেল। এক ব্রাহ্মণ সেই শিবলিঙ্গের সম্মখে বসিয়া তাহার পজা করিতেছিল। দেবী শিবলিঙ্গকে প্রণাম করিয়া ব্রাহ্মণের কিছর দরে বসিলেন। দেখিয়া ব্রাহ্মণ পজা সমাপনপৰিবাক, আচমন করিয়া দেবীর সঙ্গে কথোপকথনে প্রবত্ত হইলেন। ব্রাহ্মণ বলিল, “মা ! কাল রাত্রে—তুমি কি করিয়ােছ ? তুমি কি ডাকাইতি করিয়াছ না কি ?” দেবী বলিল, “আপনার কি বিশ্ববাস হয় ?” ব্ৰাহ্মণ বলিল, “কি জানি ?” ব্রাহ্মণ আর কেহই নাহে ; আমাদের পড়বব পরিচিত ভবানী ঠাকুর। দেবী বলিল, “কি জানি কি, ঠাকুর ? আপনি কি আমায় জানেন না ? দশ বৎসর। আজ এ দস্যদলের সঙ্গে সঙেগ বেড়াইলাম। লোকে জানে, যত ডাকাইতি হয়, সব আমিই করি। তথাপি এক দিনের জন্য এ কাজ আমা হইতে হয় নাই।--তা। আপনি বেশ জানেন। তব বলিলেন, “কি জানি’ ?” ভবানী। রাগ করা কেন ? আমরা যে অভিপ্ৰায়ে ডাকাইতি করি, তা মন্দ কাজ বলিয়া আমরা জানি না। তাহা হইলে, এক দিনের তরেও ঐ কাজ করিতাম না। তুমিও এ কাজ মন্দ মনে কর না, বোধ হয়—কেন না, তাহা হইলে এ দশ বৎসর— দেবী। সে বিষয়ে আমার মত ফিরিতেছে। আমি আপনার কথায় এত দিন ভুলিয়াছিলাম ——আর ভুলিব না। পরদ্রব্য কড়িয়া লওয়া মন্দ কাজ নয়। ত মহাপাতক কি ? আপনাদের সঙেগ আর কোন সম্মবন্ধই রাখিব না। ভবানী। সে কি ? যা এত দিন বঝাইয়া দিয়াছি, তাই কি আবার তোমায় বঝাইতে হইবে ? যদি আমি এ সকল ডাকাইতির ধানের এক কপদক গ্রহণ করিতাম, তবে মহাপাতক বটে। কিন্তু তুমি ত জান যে, কেবল পরকে দিবার জন্য ডাকাইতি করি। যে ধামিক, যে সৎপথে থাকিয়া ধন উপাত্তজন করে, যাহার। ধনহানি হইলে ভরণপোষণের কন্ট হইবে, রঙগরাজ কি আমি কখন তাহদের এক পয়সাও লই নাই। যে জয়াচোর, দাগাবাজ, পরের ধন কড়িয়া বা ফাঁকি দিয়া লইয়াছে, আমরা তাহদের উপর ডাকাইতি করি। করিয়া এক পয়সাও লই না, যাহার ধন বণ্ডকেরা লইয়াছিল, তাহাকেই ডাকিয়া দিই। এ সকল কি তুমি জান না ? দেশ অরাজক, দেশে রাজশাসন নাই, দন্টের দমন নাই, যে যার পায়, কাড়িয়া খায়। আমরা তাই তোমায় রাণী করিয়া রাজশাসন চালাইতেছি। তোমার নামে আমরা দন্টের দমন করি, শিভোেটর পালন করি । এ কি অধম ? দেবী। রাজা রাণী, যাকে করিবেন, সেই হইতে পরিবে। আমাকে অব্যাহতি দিন—আমার এ রাণীগিরিতে আর চিত্ত নাই। O h ভবানী। আর কাহাকেও এ রাজ্য সাজে। না। আর কাহারও অতুল ঐশ্বব্যয্য নাই—তোমার ধনদানে সকলেই তোমার বশ । দেবী। আমার যে ধন আছে, সকলই আমি আপনাকে দিতেছি। আমি ঐ টাকা যেরপে খরচ করিতাম, আপনিও সেইরাপে করিবেন। আমি কাশী গিয়া বাস করিব, মানস করিয়াছি। ভবানী। কেবল তোমার ধনেই কি সকলে তোমার বশ্য ? তুমি রিপে যথার্থ রাজরাণী— গণে যথাৰ্থ রাজরাণী। অনেকে তোমাকে সাক্ষাৎ ভগবতী বলিয়া জানে—কেন না, তুমি b"○>