পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী দরবার হইবে। এই দন্ডে বজরা খোল—সেইখানেই চল—বর কন্দােজদিগের সংবাদ দাও, দেবীগড় হইয়া যাও—টাকা লইয়া যাইতে হইবে। সঙেগ অধিক টাকা নাই।” তখন মহত্ত মধ্যে বজরার মাসতুলের উপর তিন-চারিখানা ছোট-বড় সাদা পাল বাতাসে ফলিতে লাগিল; ছিপাখানা বজরার সামনে আসিয়া বজরার সঙ্গে বাঁধা হইল। তাহতে ষাট জন জোয়ান বোটে লইয়া বসিয়া, “রাণীজি-কি-জয়” বলিয়া বাহিতে আরম্পভ করিল—সেই জাহাজের মত বজরা তখন তীরবেগে ছটিল। এদিকে দেখা গেল, বহসংখ্যক পথিক বা হাটরিয়া লোকের মত লোক, নদীতীরে জঙগলের ভিতর দিয়া বজরার সঙেগ দৌড়াইয়া যাইতেছে। তাহাদের হাতে কেবল এক এক লাঠি মাত্ৰ-কিন্তু বজরার ভিতর বিস্তর ঢাল, সড়কি, বন্দক আছে। “ ইহারা দেবীর “বর কন্দাজ” সৈন্য। সব ঠিক দেখিয়া দেবী সর্বহস্তে আপনার শাকান্ন পাকের জন্য হাঁড়িশালায় গেল। হায়! দেবী ! তোমার এ কিরােপ সন্ন্যাস ! একাদশ পরিচ্ছেদ সোমবার প্রাতঃসােয্যপ্ৰভাসিত নিবিড় কাননাভ্যন্তরে দেবী রাণীর “দরবার” বা “এজলাস”। সে এজলাসে কোন মোকদ্দমা-মামলা হইত না। রাজকায্যের মধ্যে কেবল একটা কােজ হইত— অকাতরে দােন । নিবিড় জঙ্গল—কিন্তু তাহার ভিতর প্রায় তিন শত বিঘা জমি সাফ হইয়াছে। সাফ হইয়াছে, কিন্তু বড় বড় গাছ কাটা হয় নাই—তাহার ছায়ায় লোক দাঁড়াইবে । সেই পরিস্কার ভূমিখন্ডে প্রায় দশ হাজার লোক জমিয়াছে—তাহারই মাঝখানে দেবী রাণীরা এজলাস। একটা বড় সামিয়ানা গাছের ডালে ডালে বাঁধিয়া টাঙগান হইয়াছে। তার নীচে বড় বড় মোটা মোটা রপার ডান্ডার উপর একখানা কিংখাপের চাঁদওয়া টাঙ্গান—তাতে মতির ঝালর। তাহার ভিতর চন্দনকালেঠর বেদী। বেদীর উপর বড় পাের গালিচা পাতা। গালিচার উপর একখানা ছোট রকম রপোর সিংহাসন। সিংহাসনের উপর মসনদ পাতা—তাহাতেও মক্তার ঝালর । দেবীর বেশভূষার আজ বিশেষ জাঁক। শাড়ী পরা। শাড়ীখানায় ফলের মাঝে মাঝে এক একখানা হীরা। অঙগ রত্নে খচিত—কদাচিৎ মধ্যে মধ্যে অঙেগর উত্তজবল গৌরবণ দেখা যাইতেছে। গলায় এত মতির হার যে, বকের আর বস্ত্ৰ পৰ্যন্ত দেখা যায় না। মাথায় রত্নময় মকুট । দেবী, আজ শরৎকালে প্রকৃত দেবীপ্রতিমা মত সাজিয়াছে। এ সব দেবীর রাণীগিরি। দই পাশে চারি জন সমসজিতা যাবতী সবণদন্ড চামর লইয়া বাতাস দিতেছে। পাশে ও সম্পম খে বহীসংখ্যক চোপদার ও আশাবরদার বড় জাঁকের পোষাক করিয়া, বড় বড় রপোর আশা ঘাড়ে করিয়া খাড়া হইয়াছে। সকলের উপর জাঁক, বীরকন্দাজের সারি। প্রায় পাঁচ শত বরকেন্দাজ দেবীর সিংহাসনের দই পাশে সারা দিয়া দাঁড়াইল। সকলেই সমসজিত—লাল পাগড়ি, লাল আঙ্গরাখা, লাল ধতি মালকোচা মারা, পায়ে লাল নাগরা, হাতে ঢাল-সড়কি। চারি দিকে লাল নিশান পেতি । দেবী সিংহাসনে আসীন হইল। সেই দশ হাজার লোকে একবার “দেবী রাণী-কি জয়” বলিয়া জয়ধবনি করিল। তার পর দশ জন সমসজিজত যাবা অগ্রসর হইয়া মধর কণ্ঠে দেবীর সতুতিগান করিল। তার পর সেই দশ সহস্র দরিদ্রের মধ্য হইতে এক একজন করিয়া ভিক্ষার্থীদিগকে দেবীর সিংহাসনসমীপে রঙগরাজ আনিতে লাগিল। তাহারা সম্মখে আসিয়া ভক্তিভাবে সাম্পটাণ্ডেগ প্ৰণাম করিল। যে বয়োজ্যোিঠ ও ব্রাহ্মণ, সেও প্ৰণাম করিল—কেন না, অনেকের বিশ্ববাস ছিল যে, দেবী ভগবতীর অংশ, লোকের উদ্ধারের জন্য অবতীর্ণ। সেই জন্য কেহ কখনও তাঁর সন্ধান ইংরেজের নিকট বলিত না, অথবা তাঁহার গ্রেপতারির সহায়তা করিত না। দেবী সকলকে মধর ভাষায় সম্বোধন করিয়া তাহদের নিজ নিজ অবস্থার পরিচয় লইলেন। পরিচয় লইয়া, যাহার যেমন অবস্থা, তাহাকে সেইরােপ দান করিতে লাগিলেন। নিকটে টাকাপোড়া ঘড়া সব সাজান ছিল। এই রােপ প্ৰাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পয্যন্ত দেবী দরিদ্রগণকে দান করিলেন। সন্ধ্যা অতীত t'8 S