পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী ছিল, নীলকর তোমার ভয়ে নিরস্ত ছিল। তুমি তখনকার পীনাল কোড ছিলে—তুমি পীনাল কোডের মত দন্টের দমন করিতে, পীনাল কোডের মত শিলেটরও দমন করিতে এবং পীনাল কোডের মত রামের অপরাধে শ্যামের মাথা ভাঙিগতে। তবে পীনাল কোডের উপর তোমার এই সরদারি ছিল যে, তোমার উপর আপীল চলিত না। হায়! এখন তোমার সে মহিমা গিয়াছে! পীনাল কোড তোমাকে তাড়াইয়া তোমার আসন গ্রহণ করিয়াছে—সমাজ-শাসন-ভার তোমার হােত হইতে তার হাতে গিয়াছে। তুমি লাঠি! আর লাঠি নও, বংশদন্ড মাত্র! ছড়িত্ব প্রাপতি হইয়া শগােল-কুক্কার-ভীত বাবােবগের হাতে শোভা কর; কুক্কর ডাকিলেই সে ননীর হাতগালি হইতে খসিয়া পড়। তোমার সে মহিমা আর নাই। শনিতে পাই, সেকালে তুমি না কি উত্তম ঔষধ ছিলে—মানসিক ব্যাধির উত্তম চিকিৎসকদিগের মাখে শনিতে পাই, “মািখ স্য লাঠ্যৌষধং।” এখন মাখের ঔষধ “বাপ” “বাছা”—তাহাতেও রোগ ভাল হয় না। তোমার সগোত্র সপিন্ডগণের মধ্যে অনেকেরই গণ এই দনিয়াতে জাজবল্যমান। ইস্তক আড়া বাঁকারি খাটি খোঁটা লাগায়েং শ্ৰীনন্দনন্দনের মোহন বংশী, সকলেরই গণে বঝি—কিন্তু লাঠি! তোমার মত কেহ না। তুমি আর নাই—গিয়াছ। ভরসা করি, তোমার অক্ষয় সবগ হইয়াছে; তুমি ইন্দ্রলোকে গিয়া নন্দনকাননের পশুপভারাবনত পারিজাতি-বাক্ষশাখার ঠেকােনা হইয়া আছ, দেবকন্যারা তোমার ঘায় কলপবাক্ষ হইতে ধম্ম-অৰ্থ-কাম-মোক্ষরপ ফল সকল পাড়িয়া লাইতেছে। এক আধটা ফল যেন পথিবীতে গড়াইয়া পড়ে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ যার লাঠির ভয়ে এত সিপাহীর সমাগম, তার কাছে একখানি লাঠিও ছিল না। নিকটে একটি লাঠিয়ালও ছিল না। দেবী সেই ঘাটে—যে ঘাটে বজরা বধিয়া ব্ৰজেশবরকে বন্দী করিয়া আনিয়াছিল, সেই ঘাটে। সবে সন্ধ্যা উত্তীণ হইয়াছে মাত্র। সেই বজরা তেমনই সাজােন—সব ঠিক সে রকম নয়। সে ছিপাখানি সেখানে নাই—তাহাতে যে পঞ্চাশ জন লাঠিয়াল ছিল, তাহারা নাই। তার পর বজরার উপরেও একটি পরিষমানষে নাই—মাঝি মাল্লা, রঙগরাজ প্রভৃতি কেহ নাই। কিন্তু বজরার মাস্তুল উঠান-চারিখানা পাল তোলা আছে—বাতাসের অভাবে পাল মাসতুলে জড়ান পড়িয়া আছে। বজরার নোঙগরও ফেলা নহে, কেবল দরগাছা কাছিতে তীরে খোঁটায় বাঁধা আছে। তৃতীয়, দেবী নিজে তেমন রত্নাভরণভূষিতা মহােঘাবস্ত্রপরিহিতা নয়, কিন্তু আর এক প্রকারে শোভা আছে। ললাটে, গন্ড, বাহ, হৃদয়, সর্বাঙ্গ সগন্ধি চন্দনে চাঁচ্চিত; চন্দনচচ্চিত ললাট বেস্টন করিয়া সগন্ধি পাপের মালা শিরোদেশের বিশেষ শোভা বদ্ধি করিয়াছে। হাতে ফলের বালা। অন্য অলঙ্কার একখানি ও নাই। পরনে সেই মোটা শাড়ি। আর, আজ দেবী একা ছাদের উপর বসিয়া নহে, কাছে আর দই জন সত্ৰীলোক বসিয়া। একজন নিশি, অপর দিবা। এই তিন জনে যে কথাটা হইতেছিল, তাহার মাঝখান হইতে <ळ८ळल९ भर्गऊ न्शे । দিবা বলিতেছিল--দিবা অশিক্ষিতা, ইহা পাঠকের সমরণ রাখা উচিত—বলিতেছিল, “হাঁঃ, পরমেশবরকে না কি আবার প্রত্যক্ষ দেখা যায় ?” প্রফতুল্ল বলিল, “না, প্রত্যক্ষ দেখা যায় না। কিন্তু আমি প্রত্যক্ষ দেখার কথা বলিতেছিলাম না—আমি প্রত্যক্ষ করার কথা বলিতেছিলাম। প্রত্যক্ষ ছয় রকম। তুমি যে প্রত্যক্ষ দেখার কথা কহিতেছিলে, সে চাক্ষষ প্রত্যক্ষ—চক্ষের প্রত্যক্ষগ আমার গলার আওয়াজ তুমি শনিতে পাইতেছ——আমার গলার অ্যাওয়াজ তোমার শ্রাবণ প্রত্যক্ষ, অর্থাৎ কাণের প্রত্যক্ষের বিষয় হইতেছে। আমার হাতের ফলের গন্ধ তোমার নাকে যাইতেছে কি ?” দিবা। যাইতেছে। দেবী । ওটা তোমার ঘািণজ প্রত্যক্ষ হইতেছে। আর আমি যদি তোমার গালে এক চড় মারি, তাহা হইলে তুমি আমার হােতকে প্রত্যক্ষ করিবে—সেটা ত্বাচ প্রত্যক্ষ। আর এখনি নিশি যদি তোমার মাথা খায়, তাহা হইলে, তোমার মগজটা তার রাসন প্রত্যক্ষ হইবে। b'8○