পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী হরিবল্লভ। ব্রজ, তাই কর। জোড়হাত করিয়া সাহেবকে বল, “আমায় মাফ করবেন।” ব্ৰজেশবির। সাহেব, আমরা হিন্দ, পিতার আজ্ঞা আমরা কখনও লঙ্ঘন করি না। আমি আপনার কাছে জোড়হাত করিয়া ভিক্ষা করিতেছি, আমাকে মাফ করবেন। সাহেব ব্রজেশ্বরের পিতৃভক্তি দেখিয়া প্ৰসন্ন হইয়া ব্ৰজেশ্বরকে ক্ষমা করিলেন, আর ব্রজেশ্বরের হাত লইয়া আচ্ছা করিয়া নাড়িয়া দিলেন। ব্ৰজেশবরের চতুৰ্দশ পরিষের মধ্যে কখন জানে না, সেক হ্যান্ড কাকে বলে—সতরাং ব্ৰজেশ্বর একটি ভেকা হইয়া রহিল। মনে করিল, “কি জানি, যদি আবার বাঁধে।" এই ভাবিয়া ব্ৰজেশ্বর বাহিরে গিয়া বসিল। কেবল ঝড়-বাটি বড় নাই। — ভিজিতে হইল না। রঙ্গরাজ বাহিরে আসিয়া, কামরার দাবার বন্ধ করিয়া দবারে পিঠ দিয়া বসিল—দই দিকের পাহারায়। বিশেষ, এ সময়ে বাহিরে একটা সতক থাকা ভাল, বজরা বড় তীরবেগে যাইতেছে, হঠাৎ বিপদ ঘটাও বিচিত্র নহে। দিবা উঠিয়া দেবীর কাছে গোল—পরষ-মহলে এখন আর প্রয়োজন নাই। নিশি উঠিল না। --তার কিছ মতলব ছিল। সব্বস্ব শ্ৰীকৃষ্ণে অপিত—সতরাং অগাধ সাহস। সাহেব জাঁকিয়া আবার রপার চৌকিতে বসিলেন, ভাবিতে লাগিলেন, “ডাকাইতের হাত হইতে কিরাপে মক্ত হইব ? যাহাকে ধরিতে আসিয়াছিলাম, তাহারই কাছে ধরা পড়িলাম— সত্ৰীলোকের কাছে পরাজিত হইলাম, ইংরেজ-মহলে আর কি বলিয়া মািখ দেখাইব ? আমার না। ফিরিয়া যাওয়াই ভাল।” হরিবল্লভ আর বসিবার স্থান না পাইয়া নিশি সন্দিরীর মসনদের কাছে বসিলেন। দেখিয়া নিশি বলিল, “আপনি একটা নিদ্রা যাবেন ?” হর । আজ কি আর নিদ্রা হয় ? নিশি । আজি না হইলে ত আর হইল না। হর । সে কি ? নিশি। আবার ঘনমাইবার দিন কবে পাইবেন ? হর । কেন ? নিশি। আপনি দেবী চৌধরাণীকে ধরাইয়া দিতে আসিয়াছিলেন ? হর । তা—তা— কি জান— নিশি। ধরা পড়িলে দেবীর কি হইত, জান ? হর। আ—এমন কি— নিশি। এমন কিছ নয়, ফাঁসি ! হর । তা—না—এই—তা কি জান— নিশি। দেবী তোমার কোন অনিস্ট করে নাই, বরং ভারী উপকার করিয়াছিল—যখন তোমার জাতি যায়, প্ৰাণ যায়, তখন তোমায় পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ দিয়া, তোমায় রক্ষা করিয়াছিল। তার প্রত্যুপকারে তুমি তাহাকে ফাঁসি দিবার চেটায় ছিলে। তোমার যোগ্য কি দন্ড বলা দেখি ? হরিবল্লভ চুপ করিয়া রহিল। নিশি বলিতে লাগিল, “তাই বলিতেছিলাম, এই বেলা ঘামাইয়া লও—আর রাত্রের মািখ দেখিবে না। নৌকা কোথায় যাইতেছে বল দেখি ?” হরিবল্লাভের কথা কহিবার শক্তি নাই। নিশি বলিতে লাগিল, “ডাকিনীর শামশান বলিয়া এক প্রকান্ড শামশান আছে। আমরা যাদের প্ৰাণে মারি, তাদের সেইখানে লইয়া গিয়া মারি । কােজরা এখন সেইখানে যাইতেছে। সেইখানে পৌছিলে সাহেব ফাঁসি যাইবে, রাণীজির হকুম হইয়া গিয়াছে। আর তোমায় কি হকুম হইয়াছে, জান ? হরিবল্লভ কাঁদিতে লাগিল—জোড়হাত করিয়া বলিল, “আমায় রক্ষা কর।” নিশি বলিল, “তোমায় রক্ষা করিবে, এমন পাষণ্ডড পামর কে আছে ? তোমায় শহলে দিবার হকুম হইয়াছে।” হরিবল্লভ ফকারিয়া কাঁদিয়া উঠিল। ঝড়ের শব্দ বড় প্রবল ; সে কান্নার শব্দ ব্ৰজেশ্বর শনিতে b"Wり>