পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী পাইল না—দেবীও না। সাহেব শানিল। সাহেব কথাগলা শনিতে পায় নাই—কান্না শনিতে পাইল । সাহেব ধমকাইল, “রোও মং—উল্লিক। মরনো এক রোজ আলবৎ হ্যায়।” সে কথা কাণে না তুলিয়া, নিশির কাছে যোড়হাত করিয়া বদ্ধ ব্রাহ্মণ কাঁদিতে লাগিল । বলিল, “হাঁ গা! আমায় কি কেউ রক্ষা করিতে পারে না গা ?” নিশি । তোমার মত নরাধমকে বাঁচাইয়া কে পাতকগ্রস্ত হইবে ? আমাদের রাণী দযময়ী, কিন্তু তোমার জন্য কেহই তাঁর কাছে দয়ার ভিক্ষা করিব না। হর । আমি লক্ষ টাকা দিব । নিশি। মাখে আনিতে লতাজা করে না। পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য এই কৃতঘোর কাজ করিয়াছ-~–আবার লক্ষ টাকা হকি ? হর। আমাকে যা বলিবে, তাই করব। নিশি। তোমার মত লোকের দ্বারা কোন কাজ হয় যে, তুমি, যা বলিব, তাই করিবে ? হর। অতি ক্ষীদ্রের দবারাও উপকার হয়—ওগো, কি করিতে হইবে বল, আমি প্রাণপণ করিয়া করিব—আমায় বাঁচাও । নিশি । ( ভাবিতে ভাবিতে ) তোমার দবারাও আমার একটা উপকার হইলে হইতে পারে—- তা তোমার মত লোকের দ্বারা সে উপকার না হওয়াই ভাল । হর | তোমার কাছে যোড়হাত করিতেছি—তোমার হাতে ধরিতেছি— হরিবল্লভ বিহবল - নিশি ঠাকুরাণীর বাউড়ী-পরা গোলগাল হাতখানি প্রায় ধরিয়া ফেলিয়াছিল আর কি! চতুরা নিশি আগে হাত সরাইয়া লইল—বলিল, “সাবধান!” ও হাত শ্ৰীকৃষ্ণেব গহীত। কিন্তু তোমার হাতে পায়ে ধরিয়া কাজ নাই—তুমি যদি এতই কাতর হইয়াছ, তবে তুমি যাতে রক্ষা পাও, আমি তা করিতে রাজি হইতেছি। কিন্তু তোমায় যা বলিব, তা যে তুমি করিবে, এ বিশ্ববাস হয় না। তুমি জয়াচোর, কৃতঘর, পামর, গোইন্দিাগিরি কর-তোমার কথায় বিশ্ববাস কি ?” হর । যে দিব্য বল, সেই দিব্য করিতেছি। নিশি । তোমার আবার দিব্য ? কি দিব্য করিবে ? হর। গঙ্গাজল তােমা তুলসী দাও- আমি সপশ করিয়া দিব্য করিতেছি। নিশি। ব্রজেশবরের মাথায় হাত দিয়া দিব্য করিতে পাের ? হরিবল্লভ গাজিজয়া উঠিল । বলিল, “তোমাদের যা ইচ্ছা, তাহ কর । আমি তা পারব না। ’ কিন্তু এ তেজ ক্ষণিকমাত্র । হরিবল্লভ আবার তখনই হােত কচলাইতে লাগিল-বলিল, “আর যে দিব্য বল, সেই দিব্য করিব, রক্ষা কর।” নিশি । আচ্ছা, দিব্য করিতে হইবে না।--তুমি আমাদের হাতে আছ। শোন, আমি বড় কুলীনের মেয়ে। আমাদের ঘরে পাত্র জোটা ভার। আমার একটি পাত্র জটিয়াছিল, (পাঠক জানেন, সব মিথ্যা ) কিন্তু আমার ছোট বহিনের জটিল না। আজিও তাহার বিবাহ হত্য নাই। হর। বয়স কত হইয়াছে ? নিশি। পাঁচশ ত্ৰিশ । হর। কুলীনের মেয়ে আমন অনেক থাকে। নিশি। থাকে, কিন্তু আর তার বিবাহ না হইলে আঘরে পড়িবে, এমন গতিক হইয়াছে। তুমি আমার বাপের পালটি ঘর। তুমি যদি আমার ভগিনীকে বিবাহ কর, আমার বাপের কুল থাকে। আমিও এই কথা বলিয়া রাণীজির কাছে তোমার প্রাণ ভিক্ষা করিয়া লই। হরিবল্লাভের মাথার উপর হইতে পাহাড় নামিয়া গেল। আর একটা বিবাহ বৈ তা নয়। --সেটা কুলীনের পক্ষে শক্তি কাজ নয়—তা যত বড় মেয়েই হৌক না কেন ! নিশি যে উত্তরের প্রত্যাশা করিয়াছিল, হরিবল্লভ ঠিক সেই উত্তর দিল, বলিল, “এ আর বড় কথা কি ? কুলীনের কুল রাখা রই কাজ। তবে একটা কথা। এই, আমি বড়ো হইয়াছি, আমার আর বিবাহের বযস নাই। আমার ছেলে বিবাহ করিলে হয় না ?” নিশি। তিনি রাজি হবেন ? হর। আমি বলিলেই হইবে। নিশি। তবে আপনি কাল প্রাতে সেই আজ্ঞা দিয়া যাইবেন । তাহা হইলে, আমি "পালকী b b ミ