পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী করিতে আসিত না। বরং প্রফল্লের ভয়ে আর কাহারও সঙ্গে কোন্দল করিতে সাহস করিত না। প্রফল্লের পরামর্শ ভিন্ন কোন কাজ করিত না। দেখিল, নয়নতারার ছেলেগালিকে প্ৰফল্লা যেমন যত্ন করে, নয়নতারা তেমন পারে না। নয়নতারা প্রফল্লের হাতে ছেলেগলি সমপণ করিয়া নিশিচন্ত হইল। সাগর বাপের বাড়ী অধিক দিন থাকিতে পারিল না—আবার আসিল । প্রফল্লের কাছে থাকিলে সে যেমন সখী হইত, এত আর কোথাও হইত না। এ সকল অন্যের পক্ষে আশচয্য বটে, কিন্তু প্ৰফীল্লের পক্ষে আশ্চৰ্য্য নহে। কেন না, প্ৰফল্লি নি✉কাম ধৰ্ম্মম অভ্যাস করিয়াছিল। প্ৰফল্লি সংসারে আসিয়াই যথাৰ্থ সন্ন্যাসিনী হইয়াছিল। তার কোন কামনা ছিল না—কেবল কাজ খাজিত। কামনা অর্থে আপনার সখ খোঁজা—কাজ অর্থে পরের সখ খোঁজা। প্রফতুল্লা নি✉কাম। অথচ ধৰ্ম্মপরায়ণ, তাই প্ৰফল্লি যথাৰ্থ সন্ন্যাসিনী। তাই প্ৰফল্লি যাহা সপশ করিত, তাই সোণা হইত। প্ৰফল্লি ভবানী ঠাকুরের শাণিত অস্ত্ৰসংসার-গ্রন্থি অনায়াসে বিচ্ছিন্ন করিল। অথচ কেহই হরিবল্লাভের গহে জানিতে পারিল না যে, প্ৰফল্লি এমন শাণিত অস্ত্র। সে যে অদ্বিতীয় মহামহোপাধ্যায়ের শিষ্যা—নিজে পরম পন্ডিত— সে কথা দরে থােক, কেহ জানিল না যে, তাহার অক্ষর-পরিচয়ও আছে। গহন্ধক্ষেম বিদ্যা প্রকাশের প্রয়োজন নাই। গহধৰ্ম্মম বিদবানেই সসম্পন্ন করিতে পারে বটে, কিন্তু বিদ্যা প্রকাশের স্থান সে নয়। যেখানে বিদ্যা প্রকাশের স্থান নহে, সেখানে যাহার বিদ্যা প্রকাশ পায়, সেই মািখ । যাহার বিদ্যা প্রকাশ পায় না, সেই যথাৰ্থ পন্ডিত। প্রফল্পের যাহা কিছ, বিবাদ, সে ব্রজেশবরের সঙ্গে। প্ৰফল্ল বলিত, “আমি একা তোমার স্ত্রী নাহি। তুমি যেমন আমার, তেমনি সাগরের, তেমনি নয়ান বৌয়ের। আমি একা তোমায় ভোগ-দখল করিব না। সত্ৰীলোকের পতি দেবতা; তোমাকে ওরা পজা করিতে পায় না কেন ?” ব্ৰজেশবর তা শনিত না। ব্রজেশবরের হৃদয় কেবল প্ৰফল্লময়। প্রফতুল্ল বলিত, “আমায়। যেমন ভালবাস, উহাদিগকেও তেমনি ভাল না বাসিলে, আমার উপর তোমার ভালবাসা সম্পপণ্য হইল। না। ওরাও আমি।” ব্রিজেশবের তা বঝিত না। প্রফল্লের বিষয়বদ্ধি, বদ্ধির প্রাখিয্য ও সদিববেচনার গণে, সংসারের বিষয়কম ও তাহার হাতে আসিল । তালক মালকের কাজ বাহিরে হইত বটে, কিন্তু একটা কিছ বিবেচনার কথা উঠিলে কত্তা আসিয়া গিন্নীকে বলিতেন, “নতেন বৌমাকে জিজ্ঞাসা করা দেখি, তিনি কি বলেন ?” প্রফল্লের পরামশে সব কাজ হইতে লাগিল বলিয়া, দিন দিন লক্ষয়ী-শ্ৰী বাড়িতে লাগিল। শেষ যথাকালে ধন জন ও সববিসিখে পরিবত হইয়া হরিবল্লভ পরলোকে গমন করিলেন। বিষয় ব্রজেশবরের হইল। প্রফল্পের গণে ব্রজেশবরের নাতন তালক মািলক হইয়া হাতে অনেক নগদ টাকা জমিল। তখন প্রফতুল্ল বলিল, “আমার সেই পঞ্চাশ হাজার টাকা কাজ শোধ কর । ” ব্ৰ। কেন, তুমি টাকা লইয়া কি করিবে ? প্রা। আমি কিছ করিব না। কিন্তু টাকা আমার নয়—শ্ৰীকৃষ্ণের;—কাঙগাল গরিবের। কাণ্ডগাল গরিবকে দিতে হইবে। ব্ৰ । কি প্রকারে ? প্রা। পঞ্চাশ হাজার টাকায় এক অতিথিশালা কর। ব্রজেশবের তাই করিল। অতিথিশালা মধ্যে এক অন্নপণা-মাত্তি স্থাপন করিয়া অতিথিশালার নাম দিল, “দেবীনিবাস।” যথাকালে পত্র-পৌত্র সমাবত হইয়া প্রফতুল্ল সবগারোহণ করিল। দেশের লোক সকলেই বলিল, “আমরা মাতৃহীন হইলাম।” রঙগরাজ, দিবা ও নিশি দেবীগড়ে শ্ৰীকৃষ্ণচন্দ্রের প্রসাদভোজনে জীবন নিৰ্ব্ববাহ করিয়া পরলোক গমন করিলেন। ভবানী ঠাকুরের আদলেট সেরাপ ঘটিল না। ইংরেজ রাজ্য শাসনের ভার গ্রহণ করিল। রাজ্য সশাসিত হইল। সতরাং ভবানী ঠাকুরের কাজ ফারাইল। দন্টের দমন রাজাই করিতে লাগিল। ভবানী ঠাকুর ডাকাইতি বন্ধ করিল। ঠাকুর ইংরেজকে ধরা দিলেন, সকল ডাকাইতি একরার করিলেন, দন্ডের প্রার্থনা করিলেন। b"c >