পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী শাহ সাহেব বলিলেন, “আমার ইচ্ছা, দইটাকেই এক কবরে পতি। আপনি কি বলেন ?” কাজি । তোবা! আমি তাহা পারিব না। সীতারাম কোন অপরাধ করে নাই—বিশেষ এ ব্যক্তি মাণ্য, গণ্য ও সচ্চরিত্র। তা হইবে না। এতক্ষণ গঙ্গারাম কোন কথা কহে নাই, মনে জানিত যে, তাহার নিম্প্রকৃতি নাই। কিন্তু শাহ সাহেবের সঙ্গে কাজি সাহেবের নিভৃতে কথা হইতেছে দেখিয়া সে জোড় হাত করিয়া কাজি সাহেবকে বলিল, “হাজারের মরজি মবারকে কি হয় বলিতে পারি না, কিন্তু এ গরিবের প্রাণ রক্ষা সম্পবন্ধে গরিবেরও একটা কথা শনিতে হয়। একের অপরাধে অন্যের প্রাণ লইবেন, এ কোন সরায় আছে ? সীতারামের প্রাণ লইয়া আমায় প্ৰাণদান দিবেন—আমি এমন প্ৰাণদান লাইব না। এই হাতকড়ি মাথায় মারিয়া আপনার মাথা ফাটাইব ।” তখন ভিড়ের ভিতর হইতে কে ডাকিয়া বলিল, “হাতকড়ি মাথায় মারিয়াই মর। মসলমানের হাত এড়াইবে।” বৰ্ত্তা, স্বয়ং চন্দ্রচড়ি ঠাকুর। তিনি আর গাছে নাই। একজন জমাদার শনিয়া বলিল, “পাকড়ে বস্কো।” কিন্তু চন্দ্ৰচড়া তকালঙ্কারকে পাকড়ান বড় শক্ত কথা। সে কাজ হইল না। এ দিকে হাতকড়ি মাথায় মারার কথা শনিয়া ফকির মহাশয়ের কিছ, ভয় হইল, পাহে জীয়ন্ত মানষে পোঁতার সখে তিনি বঞ্চিত হন। কাজি সাহেবকে বলিলেন, “এখন আর উহার হাতকড়িতে প্রয়োজন কি ? হাতকড়ি খসাইতে বলন।” কাজি সাহেব সেইরাপ হকুম দিলেন। কামার আসিয়া গঙ্গারামের হাত মত্ত করিল। কামার সেখানে উপস্থিত থাকিবার প্রয়োজন ছিল না, তবে সরকারী বেড়ি হাতকড়ি সব তাহার জিক্ষমা, সেই উপলক্ষে সে আসিয়াছিল। তাহার ভিতর কিছ, গোপন কথাও ছিল। রাত্রিশেষে কৰ্ম্মমকার মহাশয় চন্দ্রচড়ি ঠাকুরের কিছ. টাকা খাইয়াছিলেন। তখন ফকির বলিল, “আর বিলম্ব কেন ? উহাকে গাড়িয়া ফেলিতে হকুম দিন।” শনিয়া কামার বলিল, “বেড়ি পায়ে থাকিবে কি ? সরকারী বেড়ি নোেক সান হইবে কেন ? এখন ভাল লোহা বড় পাওয়া যায় না। আর বদমায়েসেরও এত হােড়াহাড়ি পড়িয়া গিয়াছে যে, আমি আর বেড়ি যোগাইতে পারিতেছি না।” শনিয়া কাজি সাহেব বেড়ি খলিতে হকুম দিলেন। বেড়ি খোলা হইল। শওখল-মাক্ত হইয়া গঙ্গারাম দাঁড়াইয়া একবার এদিক ওদিক দেখিল। তার পর গঙ্গারাম এক অদভূত কাজ করিল। নিকটে সীতারাম ছিলেন ; ঘোড়ার চাবােক তাঁহার হাতে ছিল। সহসা তাঁহার হােত হইতে সেই চাবক কাড়িয়া লইয়া গঙ্গারােম এক লম্মেফা সীতারামের শান্য অশোবর উপর উঠিয়া আশবকে দারণ আঘাত করিল। তেজস্বী অশব আঘাতে ক্ষিপত হইয়া এক লম্মেফ কবরের খাদ পাের হইয়া সিপাহীদের উপর দিয়া চলিয়া গিয়া জনতার ভিতর প্রবেশ করিল। যতক্ষণে একবার বিদ্যুৎ চমকে, ততক্ষণে এই কাজ সম্পন্ন হইল। দেখিয়া, সেই লোকারণ্যমধ্যে তুমলে হরিধবনি পড়িয়া গেল। সিপাহীরা “পাকড়ো পাকড়ো” বলিয়া পিছৰ পিছত ছটিল। কিন্তু তাহাতে একটা ভারী গোলযোগ উপস্থিত হইল। বেগবান অশেবর সম্পমখ হইতে লোকে ভয়ে সরিযা যাইতে লাগিল, গঙ্গারাম পথ পাইতে লাগিল, কিন্তু সিপাহীরা পথ পাইল না। তাহদের সম্মখে লোক জমাট বধিয়া দাঁড়াইল। তখন তাহারা হাতিয়ার চালাইয়া পথ করিবার উদ্যোগ করিল। সেই সময়ে তাহারা সবিস্ময়ে দেখিল যে, কালান্তক যমের ন্যায় কতকগলি বলিঙ্ঠ অস্ত্ৰধারী পরিষ, একে একে ভিড়ের ভিতর হইতে আসিয়া সারি দিয়া তাহদের সম্পমাখে পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইল। তখন আরও সিপাহী আসিল । দেখিয়া আরও ঢাল-সড় কিওয়ালা হিন্দ আসিয়া তাহাদের পথ রোধ করিল। তখন দই দিলে ভারী দাঙ্গা উপস্থিত হইল। দেখিয়া, সক্ৰোধে কাজি সাহেব সীতারামকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কি ব্যাপার ?” সীতা। আমি ত কিছর বাঝিতে পারিতেছি না। কাজি। বঝিতে পারিতেছ না ? আমি বঝিতে পারিতেছি, এ তোমারই খেলা। সীতা। তাহা হইলে আপনার কাছে নিরস্ত্ৰ হইয়া মাতু ভিক্ষা চাহিতে আসিতাম না। কাজি। আমি এখন তোমার সে প্রার্থনা মঞ্জর করিব। এ কবরে তোমাকেই পাতিব। এই বলিয়া কাজি সাহেব কামারকে হকুম দিলেন, “ইহারই হাতে পায়ে ঐ হাতকড়ি, বেড়ি brb"O