পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম তাহাঁদের পায়ের কাছে লম্বা হইয়া শইয়া পড়িয়া বলিল, “মো মন্ডেরে চরড় দিবারে হউ।” কেহ কেহ বলিল, “টিকে ঠিয়া হৈকিরি ম দঃখ শনিবারে হাউ।” সকলকে যথাসম্ভব উত্তরে প্রফতুল্ল করিয়া সন্দেরীদ্বয় চলিল। চঞ্চলগামিনী শ্ৰীকে একটা স্থির করিবার জন্য সন্ন্যাসিনী বলিল, “ধীরে যা গো বাহিনী ! একটা ধীরে যা। ছটিলে কি অদম্পট ছাড়াইয়া যাইতে পারিবি ?" স্নেহসবোধনে শ্ৰীর প্রাণ একটা জড়াইল । দই দিন সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে থাকিয়া শ্ৰী তাহাকে ভালবাসিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এ দই দিন, মা ! বাছা! বলিয়া কথা হইতেছিল,—কেন না, সন্ন্যাসিনী শ্ৰীীর পজিনীয়া। সন্ন্যাসিনী সে সম্বোধন ছাড়িয়া বহিনী সম্বোধন করায় শ্ৰী বঝিল যে, সেও ভালবাসিতে আরম্ভ করিয়াছে। শ্ৰী ধীরে চলিল। সন্ন্যাসিনী বলিতে লাগিল, “আর মা বাছা সম্বোধন তোমার সঙ্গে পোষায় না—আমাদের দজনেরই সমান বয়স, আমরা দই জনে ভগিনী।” শ্ৰী।। তুমিও কি আমার মত দঃখে সংসার ত্যাগ করিয়াছ ? সন্ন্যাসিনী। আমার সখ-দঃখ নাই। তেমন অদভট নয়। তোমার দঃখের কথা শনিব । সে এখনকার কথা নয়। তোমার নাম এখনও পয্যন্ত জিজ্ঞাসা করা হয় নাই—কি বলিয়া তোমায় ডাকিব ? শ্ৰী। আমার নাম শ্ৰী। তোমায় কি বলিয়া ডাকিব ? সন্ন্যাসিনী। আমার নাম জয়ন্তী। আমাকে তুমি নাম ধরিয়াই ডাকিও । এখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, স্বামী যাহা বলিলেন, তাহা শনিলে ? এখন বোধ হয় তোমার আর ঘরে ফিরিবার ইচ্ছা নাই। দিন কাটাইবারও অন্য উপায় নাই। দিন কাটাইবে কি প্রকারে, কখনও কি ভাবিয়াছ ? শ্ৰী। না। ভাবি নাই। কিন্তু এতদিন ত কাটিয়া গেল। জয়ন্তী। কিরাপে কাটিল ? শ্ৰী। বড় কন্টে—পথিবীতে এমন দঃখ বঝি আর নাই। জয়ন্তী। ইহার এক উপায় আছে—আর কিছতে মন দাও । শ্ৰী। কিসে মন দিব ? জয়ন্তী। এত বড় জগৎ-কিছই কি মন দিবার নাই ? শ্ৰী। পাপে ? জয়ন্তী। না। পণ্যে। শ্ৰী। সত্ৰীলোকের একমাত্র পণ্য সর্বামিসেবা। যখন তাই ছাড়িয়া আসিয়াছি—তখন আমার আবার পণ্য কি আছে ? জয়ন্তী। সস্বামীর এক জন স্বামী আছেন। শ্ৰী। তিনি সস্বামীর স্বামী-আমার নন। আমার স্বামীই আমার স্বামী—আর কেহ নহে। জয়ন্তী। যিনি তোমার স্বামীর স্বামী, তিনি তোমারও স্বামী-কেন না, তিনি সকলের স্বামী । শ্ৰী। আমি ঈশবরও জানি না—স্বামীই জানি। জয়ন্তী। জানিবে ? জানিলে এত দঃখ থাকিবে না। শ্ৰী। না। সবামী ছাড়িয়া আমি ঈশবরাও চাহি না। আমার স্বামীকে আমি ত্যাগ করিয়াছি বলিয়া আমার যে দঃখ, আর ঈশবর পাইলে আমার যে সখি, ইহার মধ্যে আমার সর্বামিবিরহদঃখই আমি ভালবাসি। জয়ন্তী। যদি এত ভালবাসিয়াছিলে—তবে ত্যাগ করিলে কেন ? শ্ৰী। আমার কোম্ঠীর ফল শানিলে না ? কোম্ঠীর ফল শনিয়াছিলাম। জয়ন্তী। এত ভালবাসিয়াছিলে কিসে? শ্ৰী তখন সংক্ষেপে আপনার সকল বলিল। শনিয়া চক্ষ একটা ছলছল করিল। জয়ন্তী বলিল, “তোমার সঙ্গে তাঁর দেখা-সাক্ষাৎ নাই বলিলেও হয়—এত ভালবাসলে কিসে? শ্ৰী।। তুমি ঈশবর ভালবাস—কয় দিন ঈশ্ববরের সঙ্গে তোমার দেখা-সাক্ষাৎ হইয়াছে ? 切's)○