পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম প্রবণ8নার দাবার। কাল হরণ করাই তাঁহার উদ্দেশ্য। যাহাতে সীতারাম আসিয়া পৌছে, তিনি তাহাই করিতেছেন। নগরও তাঁহার হাতে নয়। তিনি মনে করিলেও নগর ফৌজদারকে দিতে পারেন না। নগর আমার হাতে। আমি না দিলে নগর কেহ পাইবে না, সীতারামও না। আমি ফৌজদারকে নগর ছাড়িয়া দিতে পারি। কিন্তু তাহার কথাবাৰ্ত্তা আমি ফৌজদার সাহেবের সহিত স্বয়ং কহিতে ইচ্ছা করি—নহিলে হইবে না। কিন্তু আমি ত ফেরারী আসামী – প্রাণভয়ে যাইতে সাহস করি না। ফৌজদার সাহেব অভয় দিলে যাইতে পারি। “ গঙগারামের সৌভাগ্যক্ৰমে বন্দে আলির ভগিনী এক্ষণে তোরাব খাঁর একজন মতাহিয়া বেগম। সতরাং ফৌজদারের সঙ্গে সাক্ষাৎলাভ বন্দে আলির পক্ষে কঠিন হইল না। কথাবাত্তা ঠিক হইল। গঙগারাম অভয় পাইলেন । তোরাব স্বহস্তে গঙ্গারামকে এই পত্র লিখিলেন, “তোমার সকল কসর মাফ করা গেল। কাল রাত্রিকালে হজারে হাজির হইবে।” বন্দে আলি ভুষণা হইতে ফিরিল। যে নৌকায় সে পার হইল, সেই নৌকায় চাঁদশাহ ফকির --সেও পার হইতেছিল। ফকির বন্দে আলির সঙেগ কথোপকথনে প্রবত্ত হইল। “কোথায় গিয়াছিলে ?” জিজ্ঞাসা করায় বন্দে আলি বলিল, “ভূষণায় গিয়াছিলাম।” ফকির ভূষণার খবর জিজ্ঞাসা করিল। বন্দে আলি ফৌজদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া আসিয়াছে, সতরাং একটি উচু মেজাজে ছিল। ভূষণার খবর বলিতে একেবারে কোতোয়াল, বখশী, মননশী, কারকুন, পেন্ডকার, লাগায়েৎ খোদ ফৌজদারের খবর বলিয়া ফেলিল ৷ ফকির বিস্মিত হইল। ফকির সীতারামের হিতাকাঙক্ষী । সে মনে মনে সিথর করিল, “আমাকে একটা সন্ধানে থাকিতে হইবে।” দশম পরিচ্ছেদ গঙ্গারাম ফৌজদারের সঙ্গে নিভৃতে সাক্ষাৎ করিলেন। ফৌজদার তাঁহাকে কোন প্রকার ভয় দেখাইল না। কাজের কথা সব ঠিক হইল। ফৌজদারের সৈন্য মহম্মদপরের দাগ দিবারে উপস্থিত হইলে, গঙ্গারাম দাগ দিবার খালিয়া দিতে স্বীকৃত হইলেন। কিন্তু ফৌজদার বলিলেন, “দাগ দিবারে পৌছিলো ত তুমি আমাদের দাগ দিবার খালিয়া দিবে। এখন মন্ময়ের তাঁবে অনেক সিপাহী আছে। পথিমধ্যে, বিশেষ পারের সময়ে, তাহারা যাদ্ধ করিবে, ইহাই সম্পভব । যন্ধে জয় পরাজয় আছে। খদি যদুদ্ধে আমাদের জন্য হয়, তবে তোমার সাহায্য ব্যতীতও আমরা দােগ অধিকার করিতে পারি। যদি পরাজয় হয়, তবে তোমার সাহায্যে আমাদের কোন উপকার হইবে না। তার কি পরামর্শ করিয়ােছ ?” গঙ্গা। ভূষণা হইতে মহম্মদপাের যাইবার দই পথ আছে। এক উত্তর পথ, এক দক্ষিণ পথ । দক্ষিণ পথে, দারে নদী পার হইতে হয়—উত্তর পথে কিল্লার সম্পম খেই পার হইতে হয়। আপনি মহম্মদপাের আক্ৰমণ করিতে দক্ষিণ পথে সেনা লইয়া যাইবেন। মন্ময় তাহা বিশ্ববাস করিবে: কেন না, কিল্লার সম্পমাখে নদীপার কঠিন বা অসম্পভব। অতএব সেও সৈন্য লইয়া দক্ষিণ পথে আপনার সঙ্গে যাদ্ধ করিতে যাইবে। আপনি সেই সময়ে উত্তর পথে সৈন্য লইয়া কিল্লার সম্মখে নদী পার হইবেন । তখন দাগে সৈন্য থাকিবে না বা অলপই থাকিবে । অতএব আপনি অনায়াসে নদী পার হইয়া খোলা পথে দাগের ভিতর প্রবেশ করিতে পারিবেন। ফৌজদার। কিন্তু যদি মন্ময় দক্ষিণ পথে যাইতে যাইতে শনিতে পায় যে, আমরা উত্তর পথে সৈন্য লইয়া যাইতেছি, তবে সে পথ হইতে ফিরিতে পারে। গঙগারাম। আপনি অন্ধেক সৈন্য দক্ষিণ পথে, অদ্ধেক সৈন্য উত্তর পথে পাঠাইবেন। উত্তর পথে যে সৈন্য পাঠাইবেন, পাবেব যেন কেহ তত্ত্বাহা না জানিতে পারে। ঐ সৈন্য রাত্রিতে রওয়ানা করিয়া নদীতীর হইতে কিছর দরে বনজঙ্গল মধ্যে ল্যুকাইয়া রাখিলে ভাল হয়। তার পর মন্ময় ফৌজ লইয়া কিছ, দীর গেলে পর নদী পার হইলেই নিৰিবািঘন্ম হইবেন। মন্ময়ের সৈন্যও উত্তর দক্ষিণ দই পথের সৈন্যের মাঝখানে পড়িয়া নম্ৰাট হইবে। ফৌজদার পরামশ শনিয়া সন্তুটি ও সম্মত হইলেন। বলিলেন, “উত্তম। তুমি আমাদিগের মঙ্গলাকাঙক্ষী বটে। কোন পরিস্কারের লোভেতেই এরাপ করিতেছ। সন্দেহ নাই। কি পরিস্কার তোমার বাঞ্ছিত ? SOS