পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম সীতা। এক দেবী সহায় হইয়া আমাকে গোলা-বারদ এবং গোলন্দাজ আনিয়া দিয়াছিলেন। চন্দ্র। দেবী ? আমিও তাঁহার দর্শন পাইয়াছিলাম। তিনি এই পরীর রাজলক্ষয়ী। তিনি কোথায় গেলেন ? সীতা। তিনি আমাকে গোলা-বারদ এবং গোলন্দাজ দিয়া অন্তদ্ধান হইয়াছেন। এক্ষণে এ কয় মাসের সংবাদ আমাকে বলন। তখন চন্দ্ৰচড়ি সকল বস্তান্ত, যতদর তিনি জানিতেন, আন পবিবর্তক বিবত করিলেন। এ শেষে বলিলেন, “এক্ষণে যে জন্য দিল্লী গিয়াছিলেন, তাহার সসিদ্ধির সংবাদ বলন।” সীতা। কাৰ্য্যসিদিধ হইয়াছে। বাদশাহের আমি কোন উপকার করিতে পারিয়াছিলাম। তাহাতে তিনি আমার উপর সন্তুষ্ট হইয়া দ্বাদশ ভৌমিকের উপর আধিপত্য প্রদান করিয়া মহারাজাধিরাজ নাম দিয়া সনন্দ দিয়াছেন। এক্ষণে বড় দভাগ্যের বিষয় যে, ফৌজদারের সঙেগ বিরোধ উপস্থিত হইয়াছে। কেন না, ফৌজদার সবাদারের অধীন, এবং সবাদার বাদশাহের অধীন। অতএব ফৌজদারের সঙেগ বিরোধ করিলে, বাদশাহের সঙেগই বিরোধ করা হইল। যিনি আমাকে এতদর অন্যগহীত করিয়াছেন, তাঁহার বিরদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করা নিতান্ত কৃতঘের কাজ। আত্মরক্ষা সকলেরই কত্তব্য। কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য ভিন্ন ফৌজদারের সঙ্গে যাদ্ধ করা আমার অকৰ্ত্তব্য। অতএব এ বিরোধ আমার বড় দরদভট বিবেচনা করি। চন্দ্র। ইহা আমাদিগের শভোদােন্ট-হিন্দ মাত্রেরই শােভাদােন্ট; কেন না, আপনি মসলমানের প্রতি সম্প্রীত হইলে, মসলমান হইতে হিন্দকে রক্ষা করিবে কে ? হিন্দধৰ্ম্ম আর দাঁড়াইবে কোথায় ? ইহা আপনারও শতভােদলটি; কেন না, যে হিন্দধমের পািনরদ্ধার করিবে, সেই মন:ষ্যমধ্যে কৃতী ও সৌভাগ্যশালী। সীতা । মন্ময়ের সংবাদ না পাইলে, কি কৰ্ত্তব্য, কিছই বলা যায় না। সন্ধ্যার পর মন্ময়েব সংবাদ আসিল। পীর বকাস খাঁ নামে ফৌজদারী সেনাপতি আদ্ধেক ফৌজদারী সৈন্য লইয়া আসিতেছিলেন, অদ্ধেক পথে মন্ময়ের সঙ্গে তাঁহার সাক্ষাৎ ও যাদ্ধ হয়। মন্ময়ের অসাধারণ সাহস ও কৌশলে তিনি সসৈন্যে পরাজিত ও নিহত হইয়া যাদ্ধক্ষেত্রে শয়ন করেন। বিজয়ী মন্ময় সসৈন্যে ফিরিয়া আসিতেছেন। শনিয়া চন্দ্রচড়ি সীতারামকে বলিলেন, “মহারাজ ! আর দেখেন কি ? এই সময়ে বিজয়ী সেনা লইয়া নদী পার হইয়া গিয়া ভূষণা দখল করন।” সপতদশ পরিচ্ছেদ জয়ন্তী বলিল, “শ্ৰী ! আর দেখা কি ? এক্ষণে স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ কর।” শ্ৰী। সেই জন্যই কি আসিয়াছি ? জয়ন্তী। যত প্রকার মনষ্যে আছে, রাজষিাই সব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। রাজাকে রাজষি কর না। কেন ? শ্ৰী। আমার কি সাধ্য ? জয়ন্তী। আমি বঝি যে, তোমা হইতেই এই মহৎ কাৰ্য্য সিদ্ধ হইতে পারে। অতএব যাও, শীঘ্র গিয়া রাজা সীতারামকে প্ৰণাম কর। 萄 শ্ৰী। জয়ন্তি! সোলা জলে ভাসে বটে, কিন্তু খাটো দাঁড়িতে পাথরে বাঁধিয়া দিলে সোলাও ডুবিয়া যায়। আবার কি ডুবিয়া মরিব ? জয়ন্তী। কৌশল জানিলে মরিতে হয় না। ডুবরিরা সমদ্রে ডুব দেয়—কিন্তু মরে না, রত্ন তুলিয়া আনে। O শ্ৰী। আমার সে সাধ্য আছে, আমার এমন ভরসা হইতেছে না। অতএব এক্ষণে আমি রাজার সঙেগ সাক্ষাৎ করিব না। কিছ দিন না হয়। এইখানে থাকিয়া আপনার মন বঝিয়া দেখি, যদি দেখি, আমার চিত্ত এখন অবশ, তবে সাক্ষাৎ না করিয়াই এ দেশ ত্যাগ করিয়া যাইব স্থির করিয়াছি। অতএব শ্ৰী, রাজাকে সহসা দশন দিল না। Հ) ՏԳ