পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯২০

সীতারাম জিজ্ঞাসা করিয়া এ কাজ করিতে দিদি, তবে কি এত কাপড় হইতে পায় ? তা যাক। —যা হয়ে গিয়েছে, তার জন্য তিরস্কার করিয়া এখন আর কি হইবে ? এখন যাহাতে আবার মানসম্পন্দ্রম বজায় হয়, তাই করিতে হইবে।” রমা। যদি তা না কর দিদি, তবে তোমায় নিশ্চিত বলিতেছি, আমি জলে ডুবিয়া মরিবি, কি গলায় দড়ি দিয়া মরিব । আমি ত রাজার মহিষী—এমন কাণ্ডগাল গরিব ভিখারীর মেয়ে কে আছে যে, অপবাদ হইলে আর প্রাণ রাখতে চায় ? Op. নন্দা। মরিতে হইবে না, দিদি! কিন্তু একটা খাব সাহসের কাজ করিতে পারিস ! বোধ হয়, তা হলে কাহারও মনে আর কোন সন্দেহ থাকিবে না। রমা। এমন কাজ নাই যে, এর জন্য আমি করিতে পারি না। কি করিতে হইবে ? নন্দা। তুমি যে রকম করিয়া আমার কাছে সকল কথা ভাঙিগয়া চরিয়া বলিলে, এই রকম করিয়া তুমি যার সাক্ষাতে ভাঙিগয়া চরিয়া বলিবে, সেই তোমার কথায় সম্পপণ্য বিশ্ববাস করিবে, ইহা আমার নিশ্চিত বিবেচনা হয়। যদি রাজধানীর লোক সকলে তোমার মাখে। এ কথা শানে, তবে আর এ কলেণ্ডক থাকে না । রামা। তা, কি প্রকারে হইবে ? নন্দা। আমি মহারাজকে বলিয়া দরবার করাইব। তিনি ঘোষণা দিয়া সমস্ত নগরবাসীকে সেই দরবাবে উপস্থিত করিবেন ; সেখানে গঙ্গারামের সাক্ষাৎকারে, সমস্ত নগরবাসীর সাক্ষাৎকারে, তুমি এই কথাগালি বলিবে। আমরা রাজমহিষী: সৰ্য্যেও আমাদিগকে দেখিতে পান না। এই সমস্ত নগরবাসীর সম্মখে বাহির হইয়া, মক্তকণ্ঠে তুমি এই সকল কথা কি বলিতে পারিবে > পার তা সব কলঙক হইতে আমরা মক্ত হই। রমা তখন সিংহীর মত গজিয়া উঠিয়া বলিল, “তুমি সমস্ত নগরবাসী কি বলিতেছে দিদি । সমস্ত জগতের লোক জমা কর, আমি জগতের লোকের সম্মখে মক্সকন্ঠে এ কথা বলিব ।” নন্দা। পারিবি ? বমা। পারিব— নাহিলে মরিব । নন্দা। আচ্ছা, তবে আমি গিয়া মহারাজকে বলিয়া দরবারের বন্দোবস্ত করাই । তুই আর কাঁদিস না। নন্দ উঠিয়া গেল। রমা ও শয্যা ত্যাগ করিয়া চোখের জল মাছিয়া, পত্রিকে কোলে লইয়৷ মািখচুম্বন করিল। এতক্ষণ তাহাও করে নাই । নন্দ রাজাকে সংবাদ দিয়া অন্তপরে আনাইল । যে কুরব উঠিয়াছে, সকলেই যাহা বলিতেছে, তাহা রাজাকে শনাইল । তার পর রমার সঙ্গে নন্দার যে কথাবাৰ্ত্ত হইয়াছিল, তাহা সকলই অবিকল তাঁহাকে বলিল। তার পর বলিল, “আমরা দই জনে গলায় কাপড় দিয়া তোমার পায়ে লটাইযা ( বলিবার সময়ে নন্দা গলায় কাপড় দিয়া জােন পাতিয়া বসিয়া, দই হাতে দই পা চাপিয়া ধরিল ) বলিতেছি লৈ, এখন তুমি আমাদের মান রােখ, এ কলঙক হইতে উদ্ধার কর, নহিলে আমরা দই জনেই আত্মহত্যা করিয়া মরিব।” সীতারাম বড় বিষন্নভাবে- কলঙ্কের জন্যও বটে, নন্দার প্রস্তাবের জন্যও বটে,-বলিলেন, ‘রাজার মহিষী— আমি কি প্রকারে দরবারে বাহির করিব ? কি প্রকারে আপনার মহিষীকে সামান্যা কুলটার ন্যায় বিচারালয়ে খাড়া করিয়া দিব ?” নন্দা। তুমি যেমন বঝিবে, আমরা কিন্তু তেমন বঝিবে না; কিন্তু সে বেশী লজা, না। রাজমহিষীর কুলটা অপবাদে বেশী লতাজা ? সীতা। এরপ মিথ্যা অপবাদ রাজার ঘরে, সীতা হইতে চলিয়া আসিতেছে। প্রথামত কাজ করিতে হইলে এত কান্ড না করিয়া সীতার ন্যায় রমাকে আমার ত্যাগ করাই শ্রেয়। তাহা হইলে আর কোন কথা থাকে না । নন্দা। মহারাজ । নিরপরাধিনীকে ত্যাগ করিবে, তুব তার বিচার করিবে না ? এই কি তোমার রাজধম ? রামচন্দ্ৰ করিখ ছিলেন বলিয়া কি তুমিও করিবে ? যিনি পণ ব্ৰহ্ম, তাঁর আর ত্যাগই কি, গ্রহণই বা কি ? তোমার কি তা সাজে। মহারাজ ? সীতা। এই সমস্ত প্ৰজা, শত্র মিত্র ইত্যর ভদ্ৰ লোকের সাক্ষাতে আপনার মহিষীকে কুলটার ন্যায় খাড়া করিয়া দিতে আমার বািক কি ভাঙ্গিয়া যাইবে না ? আমি ত পাষাণ নাহি। ܬܠ ܬ