পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী চাহিয়া রহিল। কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না। তাহার পর জয়ন্তীকে দেখিল— উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করিয়া বলিল, “রক্ষা কর! রক্ষা করা! আমি কি করিয়াছি ?” মৃত্যু বলিল, “বাছা! কি করিয়াছ তাহা জােন। কিন্তু তুমি রক্ষা পাইবে । শ্ৰীকে মনে আছে কি ?” গঙগা। শ্ৰী ! যদি শ্ৰী বাঁচিয়া থাকিত ! জয়ন্তী। শ্ৰী বাঁচিয়া আছে। তার অন্যুরোধে আমি মহারাজের কাছে তোমার জীবন ভিক্ষা চাহিয়াছিলাম। ভিক্ষা পাইয়াছি। তোমাকে মক্ত করিতে আসিয়াছি। পলাও গঙ্গারাম! কাল প্রভাতে এ রাজ্যে আর মািখ দেখাইও না। দেখাইলে আর তোমাকে বাঁচাইতে পারিব না। গঙ্গারাম বঝিতে পারিল কি না সন্দেহ। বিশ্ববাস করিল না, ইহা নিশ্চিত। কিন্তু দেখিল যে, রাজপরিষেরা বেড়ি খলিতে লাগিল। গঙ্গারাম নীরবে দেখিতে লাগিল। জিজ্ঞাসা করিল, “মা ! রক্ষা করিলে কি ?” জয়ন্তী বলিলেন, “বেড়ী খালিয়াছে। চলিয়া যাও।” গণ্ডগারাম উদ্ধবশিবাসে পলায়ন করিল। সেই রাত্ৰিতেই নগর ত্যাগ করিল। ষািঠ পরিচ্ছেদ গঙ্গারামের মক্তির আজ্ঞা প্রচার করিয়া, জয়ন্তীর আজ্ঞা মত দবার মন্ত রাখিবার অনািমতি প্রচার করিয়া, রাজা শয্যাগহে আসিয়া পৰ্য্যাঙ্কে শয়ন করিলেন। নন্দা তখনই আসিয়া পদসেবায় নিযক্ত হইল। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “রমা কেমন আছে ?” রামার পীড়া। সে কথা পরে বলিব । নন্দা উত্তর করিল, “কই—কিছ বিশেষ হইতে ত দেখিলাম না।" রাজা। আমি এত রাত্ৰিতে তাহাকে দেখিতে যাইতে পারিতেছি না, বড় ক্লান্ত আছি; তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত হইয়া যাও—তাহাকে আমি যেমন যত্ন করিতাম, তেমনি যত্ন করিও; আর আমি যে জন্য যাইতে পারিলাম না, তাহাও বলিও । কথাটা শনিয়া পাঠক সীতারামকে ধিক্কার দিবেন। কিন্তু সে সীতারাম আর নাই। যে সীতারাম হিন্দসাম্রাজ্য সংস্থাপন জন্য সববস্ব পণ করিয়াছিলেন, সে সীতারাম রাজ্যপালন ত্যাগ করিয়া কেবল শ্ৰীকে খাজিয়া বেড়াইল। যে সীতারাম আপনার প্রাণ দিয়া শরণাগত বলিয়া গঙ্গারামের প্রাণরক্ষা করিতে গিয়াছিলেন—সেই সীতারাম রাজা হইয়া, রাজদন্ডপ্রণেতা হইয়া, শ্ৰীর লোভে গণ্ডগারামকে ছাড়িয়া দিল। যে লোকবৎসল ছিল, সে এখন আত্মবৎসল হইতেছে। নন্দা বঝিল, প্ৰভু আজ একা থাকিতে ইচ্ছক হইয়াছেন। নন্দা আর কথা না কহিয়া চলিয়া গেল। সীতারাম তখন পয্যাঙেক শয়ন করিয়া শ্রীর প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। সীতারাম সমস্ত দিন রাত্ৰি দিবতীয় প্রহর পর্য্যন্ত পরিশ্রম করিয়া ক্লান্ত ছিলেন। অন্য দিন হইলে পড়িতেন আর নিদ্রায় অভিভূত হইতেন। কিন্তু আজ স্বতন্ত্ৰ কথা- যাহার জন্য রাজ্যসখ বা রাজ্যভার ত্যাগ করিয়া এত কাল ধরিয়া দেশে দেশে নগরে নগরে ভ্ৰমণ করিয়াছেন, যাহার চিন্তা অগিনস্বরপ দিবারাত্র হৃদয় দাহ করিতেছিল, তাহার সাক্ষাৎলাভ হইবে। সীতারাম জাগিয়া রহিলেন । কিন্তু নিদ্রাদেবীও ভুবন-বিজয়িনী। যে যতই বিপদাপন্ন হউক না কেন, এক সময়ে না এক সময়ে তাহারও নিদ্রা আসে। সীতারাম বিপদাপন্ন নহেন, সখের আশায় নিমগন, সীতারামের একবার তন্দ্ৰা আসিল। কিন্তু মনের ততটা চাঞ্চল্য থাকিলে তন্দ্রও বেশীক্ষণ থাকে না। ক্ষণকাল মধ্যেই সীতারামের নিদ্রা ভঙ্গ হইল-চাহিয়া দেখিলেন, সম্মখে গৈরিকবাস্ত্ৰ-রদ্রাক্ষভূষিতা। মক্ত সীতারাম প্রথমে জয়ন্তী মনে করিয়া অতি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কই ? শ্ৰী কই ?” কিন্তু তখনই দেখিলেন, জয়ন্তী নহে শ্ৰী। তখন চিনিয়া, “শ্ৰী ! শ্ৰী ! ও শ্ৰী ! আমার শ্ৰী!” বলিয়া উচ্চকন্ঠে ডাকিতে ডাকিতে রাজা গাত্ৰোত্থান করিয়া বাহ প্রসারণ করিলেন। কিন্তু কেমন মাথা ঘরিয়া গেল-চক্ষ বজিয়া রাজা আবার শইয়া পড়িলেন। মহাত্ত মধ্যে আপনিই মােচ্ছ ভঙ্গ হইল। Nd R bf