পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম বসাইয়া রাখিয়াছিলেন, সেই বাহিরের শ্ৰী ত বাহিরেই আছে, তবে সে হৃদয়ের শ্ৰী হইতে ভিন্ন কিসেস ভিন্ন বলিয়া সীতারাম ব্যারেক মাত্ৰও ভাবিতে পারিলেন না। লোকের বিশ্ববাস আর সব যাই হৌক, লোকে মনে করে, মানষে যা তাই থাকে। মানষে যে কত বার মরে, তাহা আমরা বঝি না। এক দেহেই কত বার যে পানজন্ম গ্রহণ করে, তাহা মনেও করি না। সীতারাম বঝিল না যে, সে শ্ৰী মরিয়াছে, আর একটা শ্ৰী সেই দেহে জন্মগ্রহণ করিয়াছে। মনে করিল যে, আমার শ্ৰী আমার শ্ৰীই আছে। তাই শ্ৰীীর চড়া চড়া কথাগােলা কাণে তুলিল না। তুলিবারও বড় শক্তি ছিল না। শ্ৰীকে ছাড়িলে সব ছাড়িতে হয়। তা, শ্ৰী কিছতেই রাজপরীমধ্যে থাকিতে রাজি হইল না। তখন সীতারাম “চিত্তবিশ্রাম।” নামে ক্ষ-দ্র অথচ মনোবম প্রমোদ ভবন শ্রীর নিবাসাৰ্থ নিদি ভ্ৰাট করিয়া দিলেন। শ্ৰী তাহতে বাঘছাল পাতিয়া বসিল। রাজা প্রত্যহ তাহার সাক্ষাৎ জন্য যাইতেন। পথিক আসনে বসিয়া তাহাব সঙ্গে আলাপ করিয়া ফিরিয়া আসিতেন । ইহাতে রাজার পক্ষে বড় বিষময় ফল ফলিল । আলাপটা কি রকম হইল মনে করা ?? রাজা বলিতেন ভালবাসার কথা, শ্ৰীীর জন্য তিনি এত দিন যে দঃখ পাইয়াছেন তাহার কথা, শ্ৰী ভিন্ন জীবনে তাঁহার আর কিছই নাই, সেই কথা। কত দেশে। কত লোক পঠাইয়াছেন, কত দেশে নিজে কত খাজিয়াছেন, সেই কথা। শ্ৰী বলিত, কত পৰ্ব্ববতের কথা, কত অরণ্যের কথা, কত বন্য পশ-পক্ষী ফল-মলের কথা, কত যতি পরমহংস ব্ৰহ্মচারীর কথা, কত ধৰ্ম্মম , অধৰ্ম্মম, কম অকমের কথা, কত পৌরাণিক উপন্যাসের কথা, কত দেশবিদেশী রাজার কথা। কত দেশাচার লোকাচারের কথা । শনিতে শনিতে, সেই পথক আসনে বসিয়াও রাজার বড় বিপদ হইল! কথাগালি বড় মনোমোহিনী। যে বলে, সে আরও মনোমোহিনী। আগােন ত জীবলিয়াই ছিল, এবার ঘর পড়িল। শ্রী ত চিরকালই মনোমোহিনী। যে শ্ৰী বক্ষবিটপে দাঁড়াইয়া আচিল হেলাইয়া রণজিয় করিয়াছিল, রিপে এ শ্ৰী তাহার অপেক্ষা অনেক গণে রপসী । শরীরে স্বাস্থ্য এবং মনের বিশদ্ধি হইতেই রাপের বদ্ধি জন্মে। —শ্ৰীীর শরীরের স্বাস্থ্য, এবং মনের বিশন্ধি শতগণে বাড়িযাছিল; তাই রােপও শতগণে বাড়িয়াছিল। সদ্যঃপ্রস্ফটিত প্ৰাতঃপক্ষেপর যেমন পর্ণ স্বাস্থ্য—কোথাও অপভ্ৰাট নয়, কোথাও অঙ্গহীন নয়, কোথাও বিবৰ্ণ নয়, কোথাও বিশম্পক নয়— সৰ্ব্বত্র মসণ, সম্পপণ্য, শীতল, সবণ,--শ্ৰীীর তেমনই স্বাস্থ্য : - শরীর সম্পপণ্য, সেই জন্য শ্ৰী প্রকৃতির মাত্তিমতী শোভা । তার পর চিত্ত প্রশান্ত, ইন্দ্রিয়ক্ষোেভশন্য, চিন্তাশনা, বাসনাশন্য, ভক্তিময়, প্রীতিময়, দয়াময়,---কাজেই সেই সৌন্দয্যের বিকার নাই, কোথাও একটা দঃখের রেখা নাই, একটা মাত্র ইন্দ্ৰিয়ভোগের ছায়া নাই, কোথাও চিন্তার চিহ্ন নাই, সব্বত্র সমধরি, সহস্য, সখময়—এ ভুবনেশবরী মাত্তির কাছে যে সিংহবাহিনী মাত্তি কোথায় দাঁড়ায়! তাহার পর সেই মনোমোহিনী কথা-- নানা দেশের, নানা বিষয়ের, নানাবিধ অশ্রাতপৰিবৰ কথা, কখনও কৌত হলের উদ্দীপক, কখনও মনোরঞ্জন, কখনও জ্ঞানগভৰ্ণ –এই দাই মোহ একত্রে মিশিলে কোন অসিদ্ধ ব্যক্তির রক্ষা আছে ? সীতারামের অনেক দিন ত আগন জনলিয়াছিল, এখন ঘর পড়িতে লাগিল ৷ শ্ৰী হইতে সীতারামের সববনাশ হইল । প্রথমে সীতারাম প্রত্যহ সায়াহ্নকালে চিত্তবিশ্রামে আসিতেন, প্রহরেক কথাবাত কহিয়া চলিয়া যাইতেন। তার পর ক্ৰমশঃ রাত্রি বেশী হইতে লাগিল। পথিক আসন হউক, রাজা ক্ষধা ও নিদ্রায় পীড়িত না হইলে সেখান হইতে ফিরিতেন না। ইহাতে কিছ. কািট বোধ হইতে লাগিল। সতরাং সীতারাম, চিত্তবিশ্রামেই নিজের সায়ােহ আহার, এবং রাত্ৰিতে শয়নের ব্যবস্থা করিলেন। সে আহার বা শয়ন পথক গহে ; শ্ৰীীর বাঘছালের নিকটে ঘোষিতে পারিতেন না। ইহাতেও সাধ মিটিল না। প্রাতে রাজবাড়ী ফিরিয়া যাইতে দিন দিন বেলা হইতে লাগিল । শ্ৰীর সঙ্গে ক্ষণেক প্রাতেও কথাবাত্তা না কহিয়া যাইতে পারিতেন না। যখন বড় বেলা হইতে লাগিল, তখন আবার মাধ্যাহিক আহারটাও চিত্তবিশ্রমেই হইতে লাগিল। রাজা আহারান্তে একটা নিদ্রা দিয়া, বৈকালে একবার রাজকায্যের জন্য রাজবাড়ী যাইতেন। তার পর কোন দিন যাইতেন, কোন দিন বা কথায় কথায় যাওয়া ঘটিয়া উঠিত না । শেষ এমন হইয়া উঠিল যে, যখন যাইতেন, তখনই একটা ঘরিয়া ফিরিয়া চলিয়া আসিতেন, চিত্তবিশ্রাম ছাড়িয়া তিস্ঠিতেন না। চিত্তবিশ্রামেই রাজা বাস করিতে লাগিলেন, কখন কখন রাজভবনে বেড়াইতে যাইতেন। এ দিকে চিত্তবিশ্রামে কাহারও কোন কায্যের জন্য আসিবার হকুম ছিল না। চিত্তবিশ্রামের ܠ O ܬ