পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नीङाज्ञान्श দেখিলেন–রমার দোষ বড় বেশী নয়,-দোষ তাঁর নিজের। মনে মনে আপনার উপর বড় অসন্তুষ্পট হইলেন। কাজেই মেজাজ খারাব হইয়া উঠিল। চিত্ত প্ৰফল্লি করিবার জন্য শ্ৰীীর কাছে। যাইতে প্রবত্তি হইল না ; কেন না, শ্রীর সঙ্গে এই আত্মগ্রানির বড় নিকট সম্প্ৰবন্ধ ; রিমার প্রতি তাঁহার নিষ্ঠুরাচারণের কাবণই শ্ৰী।। শ্ৰীর কাছে গেলে আগন আরও বাড়িবে। তাই শ্ৰীর কাছে না গিয়া রাজা নন্দার কাছে গেলেন। কিন্তু নন্দা সে দিন একটা ভুল করিল। নন্দা বড় চটিয়াছিল। ডাকিনীই হউক, আর মনিষীই হউক, কোন পাপিঠার জন্য যে রাজা নন্দাকে অবহেলা করিতেন, নন্দা তাহাতে আপনার মনকে রাগিতে দেয় নাই। কিন্তু রামাকে এত অবহেলা করায়, রমা। যে মরিল, তাহাতে রাজার উপর নন্দার রাগ হইল ; কেন না, আপনার অপমানও তাহার সঙ্গে মিশিল । রাগটা এত বেশী হইল যে, অনেক চেস্টা করিয়াও নন্দা সকলটকে ল্যুকাইতে পারিল না। রামার প্রসঙ্গ উঠিলে, নন্দা বলিল, “মহারাজ ! তুমিই রমার মাতৃত্যুর কারণ।” নন্দা এইটকু মাত্র রাগ প্রকাশ করিল, আর কিছই না। কিন্তু তাহতেই আগােন জলিল; কেন না, ইন্ধন প্রস্তুত। একে ত আত্মগলানিতে সীতারামের মেজাজ খারাব হইয়াছিল--কোন মতে আপনার নিকটে আপনার সাফাই করিবার চেষটা করিতেছিলেন, তাহার উপর নন্দার এই উচিত তিরস্কার শেলের মত বিধিলাঁ। “মহারাজ ! তুমিই রমার মাতৃত্যুর কারণ।" শনিয়া রাজা গজিয়া উঠিলেন। বলিলেন, “ঠিক কথা। আমিই তোমাদের মতৃেত্যুর কারণ। আমি প্ৰাণপাত করিয়া, আপনার রক্তে পথিবী ভাসাইয়া তোমাদিগকে রাজরাণী করিয়াছি—কাজেই এখন বলবে বৈ কি, আমিই তোমাদের মতুর কারণ। যখন রমা গঙ্গারামকে ডাকিয়া আমার মাতৃত্যুর কারণ হইবার চেস্টা করিয়াছিল, কৈ তখন ত কেহ কিছ বল নাই ?” এই বলিয়া রাজা রাগ করিয়া বহিববাটীতে গেলেন। সেখানে চন্দ্রচন্ড ঠাকুর, রাজাকে রামার জন্য শোকাকুল বিবেচনা করিয়া তাঁহাকে সান্ত্বনা করিবার জন্য নানা প্রকার আলাপ করিতে লাগিলেন। রাজার মেজাজ তপ্ত তেলের মত ফাটিতেছিল, রাজা তাঁহার কথার বড় উত্তর করিলেন না। চন্দ্রচড়ি ঠাকুরও একটা ভুল করিলেন। তিনি মনে করিলেন, রমার মাতৃত্যুর জন্য রাজার অনন্তাপ হইয়াছে, এই সময়ে চেন্টা করিলে যদি ডাকিনী হইতে মন ফিরে, তবে সে চেন্টা করা উচিত। তাই চন্দ্রচড়ি ঠাকুর ভূমিকা করিবার অভিপ্ৰায়ে বলিলেন, “মহারাজ ! আপনি যদি ছোট রাণীর প্রতি আর একটি মনোযোগী হইতেন, তা হইলে তিনি আরোগ্য লাভ করিতে পারিতেন।” জবালন্ত আগমন এ ফৎকারে আরও জালিয়া উঠিল। রাজা বলিলেন, “আপনারও কি বিশ্ববাস যে, আমিই ছোট রাণীর মাতুত্যুর কারণ ?” চন্দ্রচাড়ের সেই বিশ্ববাস বটে। তিনি মনে করিলেন, “এ কথা রাজাকে সপস্ট করিয়া বলাই উচিত। আপনার দোষ না দেখিলে, কাহারও চরিত্র শোধন হয় না। আমি ইহার গরে ও মন্ত্রী, আমি যদি বলিতে সাহস না করিব, তবে কে বলিবে ?" অতএব চন্দ্রচড়ি বলিলেন, “তাহা এক রকম বলা যাইতে পারে।” রাজা। পারে বটে। বলন। কেবল বিবেচনা করন, আমি যদি লোকের মাতৃকামনা করিতাম, তাহা হইলে এই রাজ্যে এক জন্যও এত দিন টিকিত না। চন্দ্র। আমি বলিতেছি না যে, আপনি কাহারও মাতুত্যুকামনা করেন। কিন্তু আপনি মাতৃত্যুকামনা না করিলেও, যে আপনার রক্ষণীয়, তাহকে আপনি যত্ন ও রক্ষা না করিলে, কাজেই তাহার মাতু্য উপস্থিত হইবে। কেবল ছোট রাণী কেন, আপনার তত্ত্বাবধানের অভাবে বঝি সমস্ত রাজ্য যায়। কথাটা আপনাকে বলিবার জন্য কয় দিন হইতে আমি চেন্টা করিতেছি, কিন্তু আপনার অবসর অভাবে, তাহা বলিতে পারি নাই। রাজা মনে মনে বলিলেন, “সকল বেটা বলে, -তত্ত্বাবধানের অভাব--বেটীরা করে কি ?” প্রকাশ্যে বলিলেন, “তত্ত্বাবধানের অভাব।—আপনার টুকরেন। কি ?” চন্দ্র। যা করিতে পারি—সব করি। তবে আমরা ৰাজা নাহি । যেটা রাজার হকুম নহিলে সিদ্ধ হয় না, সেইটকু পারি না। আমার ভিক্ষা, কাল প্রাতে একবার দরবারে বসেন, আমি আপনাকে সবিশেষ অবগত করি, কাগজপত্র দেখাই; আপনি রাজাজ্ঞা প্রচার করবেন। রাজা মনে মনে বলিলেন, “তোমার গরগরির কিছর বাড়াবাড়ি হইয়াছে—আমারও ইচ্ছা, তোমায় কিছ শিখাই।” প্রকাশ্যে বলিলেন, “বিবেচনা করা যাইবে।” Հ) Ծ) Գ