পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दक ब्रष्नाबव्ली চন্দ্রচাড়ের তিরস্কারে রাজার সব্বাঙ্গ জীবলিতেছিল, কেবল গর, বলিয়া সীতারাম তাঁহাকে বেশী কিছর বালিতে পারেন নাই। কিন্তু রাগে সে রাত্রি নিদ্রা গেলেন না। চন্দ্রচড়কে কিসে শিক্ষা দিবেন, সেই চিন্তা করিতে লাগিলেন। প্ৰভাতে উঠিযাই প্রাত্যকৃত্য সমস্ত সমাপন করিয়া দরবারে বসিলেন। . চন্দ্রচড় খােতাপত্রের রাশি আনিয়া উপস্থিত করিলেন। চতুদশ পরিচ্ছেদ যে কথাটা চন্দ্রচড়ি রাজাকে জানাইতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, তাহা এই। যত বড় রাজ্য হউক না কেন, আর যত বড় রাজা হউক না কেন, টাকা। নইলে কোন রাজ্যই চলে না। আমরা একালে দেখিতে পাই, যেমন তোমার আমার সংসার টাকা নাহিলে চলে না—তেমনই ইংরেজের এত বড় বাজাও টাকা নাহিলে চলে না। টাকার অভাবে তেমনই রোমক সাম্রাজ্য লোপ পাইল—প্রাচীন সভ্যতা অন্ধকারে মিশাইল। সীতারামের সহসা টাকার অভাব হইল। সীতারামের টাকার অভাব হওয়া অন্যচিত ; কেন না, সীতারামের আয় অনেক গণ বাড়িয়াছিল। ভূষণার ফৌজদারীর এলাকা তাঁহার করতলস্থ হইয়াছিল---বারো ভুইঞা তাঁহার বশে আসিয়াছিল। তচ্ছসিত প্রদেশ সম্বন্ধে দিল্লীর বাদশাহের প্রাপ্য যে কর, সীতারামের উপর তাহার আদায়ের ভার হইয়াছিল। সীতারাম এ পয্যন্ত তাহার এক কড়াও মরশিদাবাদে পাঠান নাই—যাহা আদায় করিযাছিলেন, তাহা নিজে ভোগ করিতেছিলেন। তবে টাকার অকুলান কেন ? লোকের আয় বাড়িলেই অকুলান হইয়া উঠে। কেন না, খরচ বাড়ে। ভূষণা বশে আনিতে কিছর খরচ হইয়াছিল— বাবো ভূইঞাকে বশে আনিতে কিছ, খরচ হইয়াছিল। এখন অনেক ফৌজ রাখিতে হইত—কেন না, কখন কে বিদ্রোহী হয়, কখন কে আক্ৰমণ করে-—সে জন্যও ব্যয হইতেছিল। অভিষেকেও কিছল ব্যয় হইয়াছিল। অতএব যেমন আয়, তেমনই ব্যয় বটে। কিন্তু যেমন আয়, তেমনই ব্যয় হইলে আকুলান হয় না। অকুলানের আসল কারণ চুরি। রাজা এখন আর বড় কিছর দেখেন না-চিত্তবিশ্রামেই দিনপাত করেন। কাজেই রাজপরিষেরা বাজভান্ডারের টাকা লইয়া যাহার যাহা ইচ্ছা সে তাহাই করে,-কে নিষেধ করে ? চন্দ্রচড়ি ঠাকুর নিষেধ করেন, কিন্তু তাঁহার নিষেধ কেহ মানে না। চন্দ্রচড়ি জনকত বড় বড় রাজকৰ্ম্মমচারীর চুরি ধরিলেন,=—মনে করিলেন, এবার যে দিন রাজা দরবারে বসিবেন, সেই দিন খাতপত্র সকল তাঁহার সম্পম খে। ধরিয়া দিবেন। কিন্তু রাজা কিছতেই ধরা দেন না, “কাজ যা থাকে, মহাশয় করনে বলিয়া কোন মতে পাশ কাটাইয়া চিত্তবিশ্রামে পলায়ন করেন। চন্দ্রচড়ি হতাশ হইয়। শেষে নিজেই কয় জনের বরাতরফের হকুম জারি করিলেন। তাহারা তাঁহাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিল—বলিল, “ঠাকুর । যখন সমিতির ব্যবস্থা প্রয়োজন হইবে, তখন আপনার কথা শনিব । রাজার সহি মোহরের পরওয়ানা দেখান, নহিলে ঘরে গিয়া সন্ধ্যা-আহ্নিক করান।” রাজার সহ মোহর পাওয়া কিছর শক্ত কথা নহে। এখন রাজার কাছে যা হয় একখানা কাগজ ধরিয়া দিলেই তিনি সহি দেন—পড়িবার অবকাশ হয় না।— চিত্তবিশ্রামে যাইতে হইবে । অতএব চন্দ্রচড়ি এই অপরাধীদিগের বরােতরফি পাবওয়ানাতে রাজার সহি করাইয়া লইলেন। রাজা না পড়িয়াই সহি দিলেন । কিন্তু তাহাতে চন্দ্রচাড়ের কার্য্যসিদ্ধি হইল না। প্রধান অপরাধী খাতাঞ্জি দরবারে উপস্থিত ছিল, সে দেখিল যে, রাজা না পড়িয়াই সহি দিলেন । রাজা চলিয়া গেলে, সে বলিল, “ও হাকুম মানি না। ও তোমার হকুম-রাজার নয়। রাজা কাগজ পড়িয়াও দেখেন নাই। যখন রাজা স্বয়ং বিচার কবিয়া আমাদিগকে বরােতরফ করিবেন, তখন আমরা যাইবা, –এখন নহে ।” কেহই গেল না। খািব চুরি করতে লাগিল । ধনাগার তাহদের হাতে, সতরাং চন্দ্ৰচড় কিছ: করিতে পারিলেন না। তাই আজ চন্দ্রচড়ি রাজাকে পাকড়াও করিয়াছিলেন। রাজা দরবারে বসিলে, অপরাধীদিগের সমক্ষেই চন্দ্রচড় কাগজপত্র সকল রাজাকে বঝাইতে লাগিলেন। রাজা একে সমস্ত জগতের উপর রাগিয়াছিলেন, তাহাতে আবার চুরির বাহাল্য দেখিয়া ক্ৰোধে অত্যন্ত বিকৃত চিত্ত হইয়া উঠিলেন। রাজাজ্ঞা প্রচার করিলেন যে, অপরাধী সকলেই শহলে যাইবে। ふ)○ bf