পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম কাঁদিতেছে, কাহারও স্বামী কাঁদিতেছে, কাহারও শিশাসন্তান কাঁদিতেছে—মনে করিয়াছিলে কি, সে কান্না জগদীশবর শনিতে পান না ? মহারাজ, নগরে না, বনে যাও, লোকালয়ে আর মািখ দেখাইও না; কিন্তু মনে রাখিও যে, ধৰ্ম্মম আছে।” রাজা এ কথার উত্তর না করিয়া, ঘোড়ায় চড়িয়া বায়বেগে অশব সঞ্চালিত করিয়া দাগ দিবারে চুলিলেন। যাবতীগণ পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছটিল। কেহ বলিল, “আয় ভাই, রাজার রাজধানী লাঠি গিয়া চল । সীতারাম রায়ের সব্বনাশ দেখি গিয়া চল।” কেহ বলিল, “সীতারাম আল্লা ভজিবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ভজি গে চল ।” সে সকল কথা রাজার কাণে গেল না। ভানমতীর কথায় রাজার কােণ ভরিযাছিল। রাজা এখন স্বীকার করিলেন, ‘ধৰ্ম্মম আছে।” রাজা গিয়া দেখিলেন, মসলমান সেনা এখনও গড় ঘেরে নাই—সবে আসিতেছে মাত্রতাহদের অগ্রবত্তীর্ণ ধলি, পতাকা ও অশবারোহী সকল নানা দিকে ধাবমান হইয়া আপন আপনি নিদিদ আঁট স্থান গ্রহণ করিতেছে ; এবং প্রধানাংশ দাগ দিবার-সম্মখে আসিতেছে। সীতারাম দাগমধ্যে প্রবেশ করিয়া দবার রন্ধ করিলেন। O তখন রাজা চারি দিকে পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। দেখিলেন, প্রায় সিপাহী নাই। বলা বাহাদুল্য যে, তাহারা অনেক দিন বেতন না পাইয়া ইতিপকেবই পলায়ন করিয়াছিল। যে কয় জন বাকী ছিল, তাহারা মন্ময়ের মাতৃত্যু ও মসলমানের আগমনবাত্তা শনিয়া সরিয়া পড়িয়াছে। তবে দই চারি জন ব্রাহ্মণ বা রাজপত অত্যন্ত প্ৰভুভক্ত, একবার নিন খাইলে আর ভুলিতে পারে না, তাহারাই আছে। গণিয়া গাঁথিয়া তাহারা জোর পঞ্চাশ জন ৷ হইবে। রাজা মনে মনে কহিলেন, “অনেক পাপ করিয়াছি। ইহাদের প্রাণ দান করিব। ধৰ্ম্মম আছে।” রাজা দেখিলেন, রাজকৰ্ম্মমচারীরা কেহই নাই। সকলেই আপনি আপন ধন-প্ৰাণ লইয়া সরিয়া পড়িয়াছে। ভূত্যবগ কেহ নাই। দই একজন অতি পরাতন দাস-দাসী প্রভুর সঙেগ একত্রে প্রাণপরিত্যাগে কৃতসঙকলপ হইয়া সাশ্রলোচনে অবস্থিতি করিতেছে। রাজা তখন অন্তঃপরে গিয়া দেখিলেন, জ্ঞাতি-কুটািমব আত্মীয়স্বজন যে যে পরীমধ্যে বাস করিত, সকলেই যথাকলে আপনি আপন প্ৰাণ লইয়া প্রস্থান করিয়াছে। সেই বহৎ রাজভবন আজ আবণ্যতল্য, জনশন্য, নিঃশবদ, অন্ধকার। রাজার চক্ষতে জল আসিল। রাজা মনে জানিতেন, নন্দা কখনও যাইবে না। তাহার যাইবারও স্থান নাই। তিনি চক্ষ মছিতে মাছিতে নন্দার সন্ধানে চলিলেন। তখন গড়মা গড়মা করিয়া মসলমানের কামান ডাকিতে লাগিল—তাহারা আসিয়া গড় ঘেরিয়া প্রাচীর ভাঙিগবার চেস্টা করিতেছে। মহা কোলাহল, অন্তঃপর হইতে শানা যাইতে লাগিল। রাজা নন্দার ভবনে গিয়া দেখিলেন, নন্দা ধলোয় পড়িয়া শইরা আছে, চারি পাশে তাহার পত্রিকন্যা এবং রমার পত্র বসিয়া কাঁদিতেছে। রাজাকে দেখিয়া নন্দা বলিল, “হায় মহারাজ ! এ কি করিলে !" রাজা বলিলেন, “যাহা আদলেট ছিল, তাই করিয়াছি। আমি প্রথমে পতিঘাতিনী বিবাহ করিয়াছিলাম, তাহার কুহকে পড়িয়া এই মাতুবদ্ধি উপস্থিত হইয়াছে—” নন্দা। সে কি মহারাজা ? শ্ৰী ? রাজা। শ্ৰীীর কথাই বলিতেছি। নন্দা। যাহাকে আমরা ডাকিনী বলিয়া জানিতাম, সে শ্ৰী ? এত দিন বল নাই কেন, মহারাজ ? নন্দার মািখ সেই আসন্ন মাতৃত্যুকালেও প্রফল্পে হইল। রাজা। বলিয়াই কি হইবে ? ডাকিনীই হউক, শ্ৰীই হউক, ফল একই হইয়াছে। মাতৃত্যু উপস্থিত । নন্দা। মহারাজ ! শরীরধারণে মাতু্য আছেই, সে জন্য দঃখ করি না। তবে তুমি লক্ষ যোদ্ধার নায়ক হইয়। যাদ্ধ করিতে করিতে মরিবে, আমি তোমার অনগামিনী হইব—তাহা আদলেট ঘটিল না কেন ? রাজা। লক্ষ যোদ্ধা আমার নাই, এক শত যোদ্ধাও নাই। কিন্তু আমি যদুদ্ধে মরিব ; তাহা কেহ নিবারণ করিতে পরিবে না। আমি এখনই ফটক খলিয়া মসলমান সেনামধ্যে একাই প্ৰবেশ করিব। তোমাকে বলিতে ও হাতিয়ার লাইতে আসিয়াছি। તે ઉં, ગ