পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী জ্ঞান ও ভক্তিরাপিণী জয়ন্তী ও শ্ৰীীর সপ্তসারসংবাদিনী অতুলিতকণঠনিঃসন্ত মহাগীতি আকাশ বিন্দীণ করিয়া, সীতারামের শরীর রোমাঞ্চিত করিয়া উদ্ধেব উঠিতে লাগিল— ‘নমো নমস্তেহস্তু সহস্ৰকৃত্বঃ পানশাচ ভূয়োহপি নমো নমস্তে । নমঃ পরস্তাদথ পাঠতস্তে নমোস্তু তে সব্বত এব। সবাব ৷ ” শনিতে শনিতে সীতারাম বিমাগধ হইলেন,--আসন্ন বিপদ ভুলিয়া গেলেন, যন্ত করে, উদ্ধাবমখে বিহবল হইয়া আনন্দাশ্র বিসঙ্জন করিতে লাগিলেন –তাঁহার চিত্ত আবার বিশদ্ধ হইল। জয়ন্তী ও শ্ৰী সেই আকাশবিপলাবী কন্ঠে আবার হরিনাম করিতে লাগিল, হরি । হরি! হরি ! হরি হে ! হরি ! হরি ! হরি ! হরি হে । এমন সময়ে দগমধ্যে মহা কোলাহল হইতে লাগিল-শবদ শনা গেল—“জয় মহারাজাকি জয়! জয় সীতারামকি জয় !” দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ পাঠককে বলিতে হইবে না যে, দগমধ্যেই সিপাহীরা বাস করিত। ইহাও বলা গিযছে যে, সিপাহী সকলই দগ ছাড়িয়া পলাইয়াছে, কেবল জন পঞ্চাশ নিতান্ত প্ৰভুভক্ত ব্ৰাহ্মণ ও রাজপত পলায় নাই। তাহারা বাছা বাছা লোক-বাছা বাছা লোক নহিলে এমন সময়ে বিনা বেতনে কেবল প্ৰাণ দিবার জন্য পড়িয়া থাকে না। এখন তাহারা বড় অপ্ৰসন্ন হইয়া উঠিল। এ দিকে মসলমান সেনা আসিয়া পড়িয়াছে, মহা কোলাহল করিতেছে, কামানের ডাকে মেদিনী কাঁপাইতেছে—গোলার আঘাতে দগপ্রাচীর ফাটাইতেছে—তব, ইহাদিগকে সাজিতে কেহ হকুম দেয় না! রাজা নিজে আসিয়া সব দেখিয়া গেলেন। কৈ ? তাহদের তা সাজিতে হকুম দিলেন না! তাহারা কেবল প্রাণী দিবার জন্য পড়িয়া আছে, অন্য পরিস্কার কামনা করে না, কিন্তু তাও ত ঘাঁটিয়া উঠে না।--কেহ ত বলে না, ”আইস । আমার জন্য মর ?” তখন তাহারা বড় অপ্ৰসন্ন হইয়া উঠিল । তখন তাহারা সকলে মিলিয়া এক বৈঠক করিল। রঘবীর মিশ্র তাহার মধ্যে প্রাচীন এবং উচ্চপদস্থ—রঘবীর তাহাদিগকে বঝাইতে লাগিল। বলিল, “ভাই সব ।। ঘরের ভিতর মসলমান আসিয়া খোঁচাইয়া মারিবে, সেই কি ভাল হইবে ? আইস, মরিতে হয় তা মরদের মত মারি ! চল, সাজিয়া গিয়া লড়াই করি। কেহ হকুম দেয় নাই—নাই দিক ! মরিবার আবার হকুম হাকাম কি ? মহারাজের নিমক খাইয়াছি, মহারাজের জন্য লড়াই করিব—তা হকুম না পাইলে কুমিয়ে তাঁর জন্য হাতিয়ার ধারব না? চল, হকুম হোক না হোক আমরা গিয়া লড়াই এ কথায় সকলেই সম্মত হইল। তবে গয়াদীন পাঁড়ে প্রশন তুলিল যে, “লড়াই করিব কি প্রকার ? এখন দাগ রক্ষার উপায় একমাত্ৰ কামান। কিন্তু গোলন্দাজ ফৌজ ত সব পলাইয়াছে। আমরা ত কামানের কােজ তেমন জানি না। আমাদের কি রকম লড়াই করা উচিত ?” তখন এ বিষয়ের বিচার আরম্ভ হইল। তাহাতে দম্মদ সিংহ জমাদার বলিল, “ সাত বিচারে কাজ কি ? হাতিয়ার আছে, ঘোড়া আছে, রাজাও গড়ে আছে। চল, আমরা হাতিয়ার বাঁধিয়া, ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া রাজার কাছে গিয়া হকুম লই। মহারাজ যাহা বলিবেন, তাহাই এই প্রস্তাব অতি উত্তম বলিয়া সৰ্ব্বীকার করিয়া সকলেই অননুমোদন করিল। অতি ত্বরা করিয়া সকলে রণসজা করিল—আপন আপন আশব সকল সসডিজত করিল। তখন সকলে সঙ্জীভূত ও অশবারাঢ় হইয়া আস্ফালনপািৰবাক, অস্ত্রে অস্ত্ৰে ঝাঞ্চনা শবদ উঠাইয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিল, “জয় মহারাজাকি জয়! জয় রাজা সীতারামকি জয়!” সেই জয়ধবনি সীতারামের কাণে প্রবেশ করিয়াছিল। SGS