পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* বণ্ডিকম রচনাবলী চিন্তাশন্যে, অবিচলিত, কায্যে অভ্রান্ত, প্ৰফল্লিচিত্ত, হাস্যবন্দন। সীতারাম ভৈরবীমখে হরিনাম শনিয়া, শ্ৰীহরি সমরণ করিয়া আত্মজয়ী হইয়াছেন, এখন তাঁর কাছে মসলমান কোন ছার! তাঁর প্রফতুল্ল কান্তি এবং সামান্যা অথচ জয়শালিনী সেনা দেখিয়া মসলমান সেনা ‘মার! মার!” শব্দে গডিজায়া উঠিল। সত্ৰীলোক দাই জনকে কেহ কিছ বলিল না—সকলেই পথ ছাড়িয়া দিল। কিন্তু সীতারাম ও তাঁহার সিপাহীগণকে চারি দিক হইতে আক্ৰমণ করিতে লাগিল। কিন্তু সীতারামের সৈনিকেরা তাঁহার আজ্ঞানসারে, কোথাও তিলাদ্ধা দাঁড়াইয়া যাদ্ধ করিল না— কেবল অগ্রবত্তী হইতে লাগিল। অনেকে মসলমানের আঘাতে আহত হইল——অনেকে নিহত হইয়া ঘোড়া হইতে পড়িয়া গেল, আমনই আর একজন পশ্চাৎ হইতে তাহার স্থান গ্রহণ করিতে লাগিল। এইরনুপে সীতারামের সচীবাহী অভগন থাকিয়া ক্ৰমশঃ মসলমান সেনার মধ্যস্থল ভেদ করিয়া চলিল, সম্মখে জয়ন্তী ও শ্ৰী পথ করিয়া চলিল। সিপাহীদিগের উপর যে আক্ৰমণ হইতে লাগিল, তাহা ভয়ানক; কিন্তু সীতারামের দাম্পটান্তে, উৎসাহবাক্যে, অধ্যবসায় এবং শিক্ষার প্রভাবে - তাহারা সকল বিঘা জয় করিয়া চলিল। পাশেৰ দটি না করিয়া, যে সম্মখে গতিরোধ করে, তাহাকেই আহত, নিহত, অশবচরণবিদলিত করিয়া সম্মখে তাহারা অগ্রসর হইতে লাগিল। এই অদভুত ব্যাপার দেখিয়া মসলমান সেনাপতি সীতারামের গতিরোধ জন্য একটা কামান সচীব্যুহের সম্পমখ দিকে পাঠাইলেন। ইতিপকেবই মসলমানেরা দাগ প্রাচীর ভগন করিবার জন্য কামান সকল তদপেৰ্যন্ত স্থানে পাতিয়াছিল, এজন্য সচীব্যুহের সম্মখে হঠাৎ কামান আনিয়া উপস্থিত করিতে পারে নাই। এক্ষণে, রাজা রাণী পলাইতেছে জানিতে পারিয়া, বহর কলেট ও যত্নে একটা কামান তুলিয়া লইয়া সেনাপতি সচীব্যুহের সম্মখে পাঠাইলেন। নিজে সে দিকে যাইতে পারিলেন না; কেন না, দগন্দবার মন্ত পাইয়া অধিকাংশ সৈন্য লাঠের লোভে সেই দিকে যাইতেছে। সতরাং তাঁহাকেও সেই দিকে যাইতে হইল—সবাদারের প্রাপ্য রাজভান্ডার পাঁচ জনে লাঠিয়া না। আত্মসাৎ করে। কামান আসিয়া সীতারামের সচীব্যুহের সম্পম খে পৌছিল। দেখিয়া, সীতারামের পক্ষের সকলে প্ৰমাদ গণিল। কিন্তু শ্ৰী প্ৰমাদ গণিল না। শ্ৰী জয়ন্তী দই জনে দ্রতপদে অগ্রসর হইয়া কামানের সম্পমাখে আসিল। শ্ৰী, জয়ন্তীর মািখ চাহিয়া হাসিয়া, কামানের মখে আপনার বক্ষ স্থাপন করিয়া, চারি দিক চাহিয়া ঈষৎ, মদ, প্রফতুল্লা, জয়সচক হাসি হাসিল। (জয়ন্তীও শ্ৰীীর মািখ পানে চাহিয়া, তার পর গোলন্দাজের মািখ পানে চাহিয়া সেইরােপ হাসি ਸਜ জনে যেন বলাবলি করিল—“তোপ জিতিয়া লইয়াছি।” দেখিয়া শনিয়া, গোলন্দাজ হাতের পলিতা ফেলিয়া দিয়া বিনীতভাবে তোপ হইতে তফাতে দাঁড়াইল । সেই অবসরে সীতারাম লাফ দিয়া আসিয়া তাহাকে কাটিয়া ফেলিবার জন্য তরবারি উঠাইলেন। জয়ন্তী আমনি চীৎকার করিল, “কি করা! কি করা! মহারাজ রক্ষা কর!” “শত্রকে আবার রক্ষা কি ?” বলিয়া সীতারাম সেই উত্থিত তরবারির আঘাতে গোলন্দাজের মাথা কাটিয়া ফেলিয়া তোপ দখল করিয়া লইলেন । দখল করিয়াই ক্ষিপ্ৰহসন্ত, অদিবতীয় শিক্ষায় শিক্ষিত সীতারাম, সেই তোপ ফিরাইয়া আপনার সচীবদেহের জন্য পথ সাফ করিতে লাগিলেন। সীতারামের হাতে তোেপ প্ৰলয়কালের মেঘের মত বিরামশান্য গভীর গজজািন আরম্ভ করিল। তদ্বষিত অনন্ত লৌহপিণডশ্রেণীর আঘাতে মসলমান সেনা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয়া সম্পমািখ ছাড়িয়া চারি দিকে পলাইতে লাগিল। সচীব্যুহের পথ সাফ! তখন সীতারাম অনায়াসে নিজ মহিষী ও পত্র-কন্যা ও হতাবিশিস্ট সিপাহীগণ লইয়া মসলমানকণাটক কাটিয়া বৈরিশান্য স্থানে উত্তীর্ণ হইলেন। মসলমানেরা দাগ লাঠিতে লাগিল। এইরপে সীতারামের রাজ্যধবংস হইল। চতুৰ্ব্বিংশতিতম পরিচ্ছেদ শ্ৰী সন্ধ্যার পর জয়ন্তীকে নিভৃতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “জয়ন্তী! সেই গোলন্দাজ কে ?” জয়ন্তী। যাহাকে মহারাজ কাটিয়া ফেলিয়াছেন ? শ্ৰী। হাঁ, তুমি মহারাজকে কাটিতে নিষেধ করিয়াছিলে কেন ? জয়ন্তী। সন্ন্যাসিনীর জানিয়া কি হইবে ? শ্ৰী। না হয় একটা চোখের জল পড়িবে! তাহাতে সন্ন্যাসধৰ্ম্ম ভ্রন্ট হয় না। SC V