পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

%8 а বঙ্গবিজেতা । সে দুর্গ কি আর কখন দেখিতে পাইবেন ? এইরূপ সহস্র চিন্তাতরঙ্গে বিমলার নারীহৃদয় প্রতিহত হইতে লাগিল । 總 যিনি কখন অনেক দিনের জন্য দেশত্যাগী হইবার মানসে যাত্র করিয়াছেন, পোতে আরোহণ করিয়া মাতৃভূমির দিকে সতৃষ্ণনয়নে নিরীক্ষণ করিয়াছেন, নিরীক্ষণ করিতে করিতে একেবারে সহস্ৰ সুখদুঃথের কথা স্মরণ করিয়াছেন, সহস্ৰ চিন্তায় অভিভূত হইয়াছেন, পৃথিবীর মধ্যে যাহা কিছু প্রিয় ও সুখকর অাছে, সজলনয়নে সকলের নিকট বিদায় লইয়াছেন, অল্প বয়সে সহায়হীন, বন্ধুহীন প্রবাদী হইয়া অনন্ত সংসায়-সাগরে বীপ দিয়াছেন, তিনিই বিমলার সে রাত্রির ঘোর চিন্তা ও ঘোর দুঃখ অনুভব করিতে পারেন । একাকী নৌকার পশ্চাদ্ভাগে বসিয়া সেই গভীর অন্ধকার রজনীতে চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গের দিকে দেখিতে লাগিলেন । জলের কল কল শব্দ শুনিতেছিলেন না, আম্রকাননে গম্ভীর শব্দ শুনিতেছিলেন না, তরঙ্গমালার উচ্ছ্বাস ও ফেনরাশির খেল দেখিতেছিলেন না, ঘোর মেঘের ছটা দেখিতেছিলেন না, কেবল চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গ দেখিতেছিলেন, আর সহস্ৰ গভীর চিন্তায় অভিভূত রহিয়াছিলেন । সে ভাবনার শেষ নাই, তাকাশ যেরূপ অনস্তু, নদীর স্রোত বেরূপ অবারিত, সে চিন্তাশ্রোতও সেইরূপ অনন্ত ও অবারিত। ভাবিতে ভাবিতে বিমল চারিদিক শূন্য দেখিতে লাগিলেন, তাহার স্বভাবতঃ বৗরান্তঃকরণ অদ্য দ্রবীভূত হইতে লাগিল,— বখন চাহিয়া চাহিয়া চাহিয়। আর সে দুর্গ দেখিতে পাইলেন না, কেবল দুর্ভেদ্য তিমিররাশি দেখিতে লাগিলেন, তখন হস্তদ্বয়ে মুখ আবরণ করিয়। দরবিগলিত অশ্রুস্বারা বিসর্জন করিলেন, অনেক শোক, অনেক আঘাত ন হইলে তাহার ন্যায় সৰ্ব্বসহ অন্তঃকরণ বিদীর্ণ হয় না ;–এতক্ষণ ও এত অধিক ক্ৰন্দন করিলেন যে, তাহার অঙ্গুলীর মধ্য দিয়া অশ্রুজল বাহির হইয় হস্তদ্বয় ও বক্ষঃস্থল একেবারে সিক্ত হইয়া গেল । হা সংসার ! হা আসার জগৎ ! তোমার মধ্যে বিমলার দ্যায় কত উন্নতচরিত্রা, ধৰ্ম্মপরায়ণী, অভাগিনী অন্ধকারে একাকিনী বসিয়া দিন দিন রোদন করিতেছে, সে রোদন কেহ দেখে না, কেহ শুনে না, কেহ জানে ন, সে রোদন অলক্ষিত, অবারিত, অশীত্তি প্রদ ! কত নিৰ্ম্মলচরিত্র। অন|থার জীবন জন্মাবধি মৃত্যু পৰ্যন্ত কেবল শোক-দুঃখে পরিপূর্ণ, সে দুঃখ কেহ জানে না, যদি জানে, তবে মোচন করে না, সে দুঃখিনীর সমর্টুঃখিনী কেহ হয় না, কেবল আকুল নদীর জল কল কল শব্দে ও অনন্ত আম্রকানন মৰ্ম্মর শব্দে সে দুঃখের জন্য রোদন করে ! হা আসার জগৎ ! তোমার মধ্যে