“দুঃখী লোক, এ ছাড়া আর কিছু জানি না। লেখাপড়া বোধ হয়, কিছু জানে, কেন না, তোমার দাদাকে পড়াইবার কথা বলাতে, তাহাতেই সে স্বীকার করিয়াছিল। বি, এ ক্লাসের ছেলেকে যে পড়াইতে সাহস করিতে পারে, অন্ততঃ তোমার ছোট বোন্টিকে সে নিশ্চয় পড়াইতে পারিবে। মনে করিতেছি সে-ই প্রমীলার মাষ্টার থাকুক।”
মাধবী আপত্তি করিল না।
সন্ধ্যার পর তাহাকে ডাকিয়া আনাইয়া, ব্রজবাবু তাহাই বলিয়া দিলেন। পরদিন হইতে সুরেন্দ্রনাথ প্রমীলাকে পড়াইতে লাগিল।
প্রমীলার বয়স সাত বৎসর। সে বোধোদয় পড়ে। বড়দিদি মাধবীর নিকট ফার্ষ্টবুকের ভেকের গল্প পর্যন্ত পড়িয়াছিল। সে খাতাপত্র বই, শ্লেট, পেন্সিল, ছবি, লজেঞ্জেস্ প্রভৃতি আনিয়া পড়িতে বসিল।
Do not move, সুরেন্দ্রনাথ বলিয়া দিল—“Do not move—নড়িও না।”
প্রমীলা পড়িতে লাগিল, “Do not move—নড়িও না।”
তাহার পর সুরেন্দ্রনাথ অন্যমনস্ক হইয়া শ্লেট টানিয়া লইল— পেন্সিল হাতে করিয়া আঁক পাড়িয়া বসিল। প্রব্লেমের পর প্রব্লেম সল্ভ্ হইতে লাগিল— ঘড়িতে সাতটার পর আট্টা, তারপর নয়টা বাজিতে লাগিল। প্রমীলা কখনও এ পাশ কখনও ও পাশ ফিরিয়া, ছবির পাতা উল্টাইয়া শুইয়া বসিয়া লজেঞ্জেস্ মুখে পুরিয়া, নিরীহ ভেকের সর্ব্বাঙ্গ মসীলিপ্ত করিতে করিতে পড়িতে লাগিল, “Do not move– নড়িও না!”