পাতা:বড়দিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বড়দিদি
৬২


কহিল, “দিস্তেপাড়ার গঞ্জে নৌকা বাঁধিলে বেশ সুবিধা হইবে,– সেখানে সব জিনিস পাওয়া যায়।”

 দাসী কহিল, “তাই কোরো বাপু, যেন দশটা এগারটার মধ্যে ছেলেটা খেতে পায়।”

———


নবম পরিচ্ছেদ

 কার্ত্তিক মাস যায় যায়। একটু শীত পড়িয়াছে। সুরেন্দ্রনাথের উপরের ঘরে জানালার ভিতর দিয়া প্রাতঃসূর্য্যালোক প্রবেশ করিয়া বড় মধুর বোধ হইতেছে। জানালার কাছে অনেকগুলি বাঁধা খাতা ও কাগজ-পত্র লইয়া টেবিলের এক পাশে সুরেন্দ্রনাথ বসিয়াছিলেন; আদায়-উসুল, বাকী-বকেয়া, জমা-খরচ, বন্দোবস্ত, মাম্‌লা-মকদ্দমার নথী-পত্র সব একে একে উল্টাইয়া দেখিতেছিলেন। এসব দেখা শুনা একরকম আবশ্যকও হইয়া পড়িয়াছিল, এবং না হইলে সময়ও কাটে না। শান্তির সহিত এ জন্য অনেকখানি ঝগড়া করিতে হইয়াছিল। অনেক করিয়া তবে তাহাকে সে বুঝাইতে পারিয়াছিল যে, অক্ষরের পানে চাহিলেই মানুষের বুকের ব্যথা বাড়িয়া যায় না, কিংবা তৎক্ষণাৎ ধরাধরি করিয়া তাহাকে বাহিরে লইয়া যাইবার প্রয়োজন হয় না। অগত্যা শান্তি স্বীকার করিয়াছে এবং আবশ্যকমত সাহায্যও করিতেছে।

 আজকাল স্বামীর উপর তাহার পুরা অধিকার– তাহার একটি কথাও অমান্য হয় না। কোন দিনই হয় নাই, শুধু পাঁচজন হতভাগা ইয়ার-বন্ধু মিলিয়া দিন-কতক শান্তিকে বড় দুঃখ দিতে