শান্তির প্রথমে সেইরূপ অবস্থা হইল। তাহার পর ধীরে ধীরে মুখে চোখে রক্ত ফিরিয়া আসিল– তাহার পর করুণ-দৃষ্টিতে স্বামীর মুখপানে চাহিয়া সে নিঃশব্দে নীচে নামিয়া গেল। পুরোহিত ডাকাইয়া রীতিমত শান্তি-স্বস্ত্যয়নের ব্যবস্থা করিয়া, রাজার অর্দ্ধেক রাজত্ব মানত করিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিল, যে, এই বড়দিদি যিনিই হউন, ইহাঁর সম্বন্ধে সে আর কোন কথা কহিবে না। তাহার পর ঘরে দ্বার দিয়া বহুক্ষণ ধরিয়া সে অশ্রুমোচন করিল। এ জীবনে এমন কটু কথা সে আর কখনও শোনে নাই!
সুরেন্দ্রনাথও কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন- তাহার পর বাহিরে চলিয়া গেলেন! কাছারি-ঘরে মথুরবাবুর সহিত সাক্ষাৎ হইল। প্রথমে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গোলাগাঁয়ে কার সম্পত্তি নিলাম হয়েচে?” “মৃত রামতনু সান্যালের বিধবা পুত্রবধূর–” “কেন?” “দশ বছরের মাল-গুজারি বাকি ছিল–” “কই খাতা দেখি–”
মথুরানাথ প্রথমে যেন হতবুদ্ধি হইয়া গেল; তাহার পর কহিল, “খাতা-পত্র এখনও পাবনা থেকে আনা হয় নি।”
“আনতে লোক পাঠাও। বিধবার থাক্বার স্থানটুকু পর্যন্ত রাখো নি?” “বোধ হয় নেই।” “তবে সে কোথায় থাক্বে?”
মথুরানাথ সাহস সঞ্চয় করিয়া কহিল, “এতদিন যেখানে ছিল, সেখানে থাক্বে, বোধ হয়।” “এতদিন কোথায় ছিল?” “কল্কাতায়। তাহার পিতার বাটীতে।” “পিতার নাম কি জান?” “জানি। ব্রজরাজ লাহিড়ী।” “বিধবার নাম?” “মাধবী দেবী।”
নতমুখে সুরেন্দ্রনাথ সেখানে বসিয়া পড়িলেন। মথুরানাথ