গ্রন্থপরিচয়: নবীন
দোলার তালে না মিলিয়ে চললেই রসভঙ্গ হয়। ও পাড়ার ওরা-যে দরজায় আগল এঁটে বসেই রইল— হিসেবের খাতার উপর ঝুঁকে পড়েছে। একবার ওদের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দোলের ডাক দাও।
ওরে গৃহবাসী, তােরা খােল্ দ্বার খোল্
কিন্তু, পূর্ণিমার চাঁদ-যে ধ্যানস্তিমিতলোচন পুরোহিতের মতো আকাশের বেদীতে বসে উৎসবের মন্ত্র জপ করতে লাগল। দেখাচ্ছে যেন জ্যোৎস্নাসমুদ্রের ঢেউয়ের চূড়ায় ফেনপুঞ্জের মতো— কিন্তু, সে ঢেউ-যে চিত্রার্পিতবৎ স্তব্ধ। এ দিকে আজ বিশ্বের বিচলিত চিত্ত দক্ষিণের হাওয়ায় ভেসে পড়েছে; চঞ্চলের দল মেতেছে বনের শাখায়, পাখির ডানায়; আর, ঐ কি একা অবিচলিত হয়ে থাকবে, নিবাতনিষ্কম্পমিবপ্রদীপম্। নিজে মাতবে না আর বিশ্বকে মাতাবে, সে কেমন হল। এর একটা যা-হয় জবাব দিয়ে দাও।
কে দেবে, চাঁদ, তােমায় দোলা[১]
আজ সব ভীরুদের ভয় ভাঙনো চাই। ঐ মাধবীর দ্বিধা-যে ঘোচে না। এ দিকে আকাশে আকাশে প্রগল্ভতা, অথচ ওরা রইল সসংকোচে ছায়ার আড়ালে। ঐ অবগুণ্ঠিতাদের সাহস দাও। বেরিয়ে পড়বার হাওয়া বইল যে- বকুলগুলো রাশি রাশি ঝরতে ঝরতে বলছে, যা হয় তা হোক গে, আমের মুকুল নির্ভয়ে বলে উঠছে, দিয়ে ফেলব একেবারে শেষ পর্যন্ত। যে পথিক আপনাকে বিলিয়ে দেবার জন্যেই পথে বেরিয়েছে তার কাছে আত্মনিবেদনের থালি উপুড় করে দিয়ে তবে তাকে আনতে পারবে নিজের আঙিনায়। কৃপণতা করে সময় বইয়ে দিলে তো চলবে না।
হে মাধবী, দ্বিধা কেন, আসিবে কি ফিরিবে কি
দেখতে দেখতে ভরসা বেড়ে উঠছে, তাকে পাব না তো কী! যখন দেখা দেয় না তখনো যে সাড়া দেয়। যে পথে চলে সেখানে যে তার চলার রঙ লাগে। যে আড়ালে থাকে তার ফাঁক দিয়ে আসে তার মালার গন্ধ। দুয়ারে অন্ধকারে যদি-বা চুপচাপ থাকে, আঙিনায়
১৮৭
- ↑ দ্রষ্টব্য; বসন্ত।