পাতা:বনবাণী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গে সেই বোধিদ্রুমের বাণীও শুনি যেন- দুইয়ে মিশে আছে। আরণ্যক ঋষি শুনতে পেয়েছিলেন গাছের বাণী: বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ। শুনেছিলেন: যদিদং কিঞ্চ সর্বং প্রাণ এজতি নিঃসৃতম্। তাঁরা গাছে গাছে চিরযুগের এই প্রশ্নটি পেয়েছিলেন, ‘কেন প্রাণঃ প্রথমঃ প্রৈতিযুক্তঃ’- প্রথম-প্রাণ তার বেগ নিয়ে কোথা থেকে এসেছে এই বিশ্বে। সেই প্রৈতি, সেই বেগ থামতে চায় না— রূপের ঝর্না অহরহ ঝরতে লাগল; তার কত রেখা, কত ভঙ্গী, কত ভাষা, কত বেদনা। সেই প্রথম প্রাণপ্রৈতির নবনবোম্মেষশালিনী সৃষ্টির চিরপ্রবাহকে নিজের মধ্যে গভীরভাবে বিশুদ্ধভাবে অনুভব করার মহামুক্তি আর কোথায় আছে।

 এখানে ভোরে উঠে হোটেলের জানলার কাছে বসে কত দিন মনে করেছি, শান্তিনিকেতনের প্রান্তরে আমার সেই ঘরের দ্বারে প্রাণের আনন্দরূপ আমি দেখব আমার সেই লতার শাখায় শাখায়, প্রথমপ্রৈতির বন্ধবিহীন প্রকাশরূপ দেখব সেই নাগকেশরের ফুলে ফুলে। মুক্তির জন্যে প্রতিদিন যখন প্রাণ ব্যথিত ব্যাকুল হয়ে ওঠে, তখন সকলের চেয়ে মনে পড়ে আমার দরজার কাছের সেই গাছগুলিকে। তারা ধরণীর ধ্যানমন্ত্রের ধ্বনি। প্রতিদিন অরুণোদয়ে, প্রতি নিস্তব্ধরাত্রে তারার আলোয়, তাদের ওঙ্কারের সঙ্গে আমার ধ্যানের সুর মেলাতে চাই। এখানে আমি রাত্রি প্রায় তিনটের সময় তখন একে রাতের অন্ধকার, তাতে মেঘের আবরণ- অন্তরে অন্তরে একটা অসহ্য চঞ্চলতা অনুভব করি নিজের কাছ থেকেই উদ্দামবেগে পালিয়ে যাবার জন্যে। পালাব কোথায়। কোলাহল থেকে সংগীতে। এই আমার অন্তগুঢ় বেদনার দিনে শান্তিনিকেতনের চিঠি যখন পেলুম