পাতা:বাঁশী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঁশী ।
৩১

বাহির হইলে দ্বার বন্ধ করিয়া দিল। আমিও নিকটে এক নিভৃত স্থানে বসিয়া রহিলাম।

 রাত্রি ১২টা বাজিয়া গেল। দুই একটা আলো ছাড়া বাড়ীর আর সকল আলোকই নিভিয়া গেল। আমিও চুপ করিয়া সেইখানে বসিয়া আছি, এমন সময়ে উপরে কাহার পদশব্দ শুনিতে পাইলাম। এত রাত্রে উপরে কে বেড়াইতেছে, জানিবার জন্য আমি গাত্রোখান করিলাম। একবার মনে হইল, সুধার কাকা কোন কারণ বশতঃ বাহিরে আসিয়াছেন, কিন্তু তাহা হইলে তাহার ঘরের দরজা খোলার শব্দ পাইতাম। বিশেষতঃ আজ তাহার শরীর অসুস্থ। যতই এই বিষয় ভাবিতে লাগিলাম, ততই আমার সন্দেহ বাড়িতে লাগিল। আমি তখন আর স্থির থাকিতে পারিলাম না। আস্তে আস্তে তেতলায় উঠিলাম। |

 চারিদিক অন্ধকার। একটা মাত্র আলোক মিটু মিট করিয়া জ্বলিতেছিল। আমি সেই সামান্য আলোকে দেখিলাম, একজন লোক দালানে ধীরে ধীরে বেড়াইতেছে। লোকটাকে পূর্বে কখনও দেখি নাই। ভাল চিনিতে পারিলাম না।

 আমি সুধার কাকার ঘরের দরজা হইতে প্রায় দশ হাত দূরে একটা কোণে আসিয়া দাঁড়াইলাম। লোকটা খানিকক্ষণ এদিক ওদিক বেড়াইয়া, প্রাণকৃষ্ণ বাবুর ঘরের দরজার নিকট দাঁড়াইল। খানিকক্ষণ নিস্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া কি যেন ভাবিতে লাগিল। পরে আস্তে আস্তে কপাটে ঘা মারিতে লাগিল।

 তৎক্ষণাৎ ঘরের দরজা খুলিয়া গেল। ঘরের ভিতর হইতে প্রাণকৃষ্ণ বাবু বাহির হইলেন এবং অতি মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমায় যাহা বলিয়াছিলাম, তাহার কি হইল?”