পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড মারতে থাকে। এর ফলে মাটিতে পড়ে গেলে বুট দিয়ে শরীরে চড়ে নির্যাতন করতে থাকে। এবং জুলন্ত সিগারেট শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঠেসে ধরে। বলাবাহুল্য অত্যাচার করে তারা পাশবিক আনন্দ উপভোগ করে। এবং নিজেদের খুশিমতো বিবৃতি তৈরী করে। বিবৃতি নেবার পর পূর্বোক্ত ঘরে আবার বন্দী করে রাখে এবং দুপুরে কোন রকম তরকাররি ও প্লেট ছাড়াই মাটিতে লবন দিয়ে কিছু ভাত দেয়া হয় এবং বলা হয় তুমলোক বাঙ্গালী হ্যায়, চাউল খাও।” পরের দিন সকাল আটটায় জিপে করে উক্তসিকিউরিটি অফিসারের তত্ত্বাবধানে তিন জনকেই জুবেরী হাউসের দোতলায় একটি কক্ষে রাখা হয় । এবং সেখানে কড়া সামরিক পাহারা ছিল । সেখানে পার্শ্বের কক্ষে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর একজন দারোগাসহ ১০/১২ জন পুলিশের লোক ইউনিফরমসহ বন্দী ছিলেন। এদের অনেকেই আমার পরিচিত ছিলেন। আমাদের কক্ষে একজন ইউসি চেয়ারম্যানসহ আরো ৬/৭ জন সাধারণ মানুষ ছিলেন সেখানে তিনদিন থাকা কালে কোন রকম শারীরিক নির্যাতন করা না হলেও অপমানজনক অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। যেমনঃ-“তুমলোক গাদ্দার হ্যায়, তুমলোক বেইমান হ্যায়, তুমলোক হিন্দু হ্যায়।’ ঐ তিন দিনের এক রাতে আমাকেসহ আরো দুজনের (উপরোক্ত ছাত্রদ্বয় নন) নাম ডেকে দোতালা থেকে নামিয়ে আনে এবং সাহসে ভর করে আমি তাদের জিজ্ঞাসা করে ছিলাম, “হাম লোগকো কাঁহা লেয়ে যায়েংগে?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “তুমলোক কালমা পড়নে পড়নে চলো, তুমলোগকো খতম করেগা।” নীচে আসার পর সার্থী দুজনের নাম ধাম জিজ্ঞাসাবাদের পর দুজনকে নিরুদ্ধেশের পথে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সম্ভবত তাদেরকে হত্যা করা হয়। পুনরায় বিবৃতি নেওয়টা হবে এই উক্তির প্রেক্ষিতে আমাকে ফিরিয়ে আনা হয়। পরের দিন বেলা তিনটায় দুজন ছাত্রসহ আমাকে এক সঙ্গে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় “ফাইট এগেইনেষ্ট গভর্নমেন্ট” লিখে নেয়। জেল গেটের আঙ্গিনায় তখনই তিনজনের উপরে বেয়নেট, লাঠি, বেত বুট ইত্যাদি দ্বারা নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনের পর বিকাল পাঁচটায় আমাদেরকে গলা ধাক্কা দিয়ে একটি কুঠুরীতে বন্দী করে। সেখানে আরও দুজনকে বন্দী অবস্থায় দেখা যায়। অবশ্য জেল গেটেই তাদের হাতের বাঁধন ও চোখের পট্টি খুলে দেয়। নাটোর জেলখানায় তিনটি কোঠায় তিনশ জনের মতো কয়েদদী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালেহ আহমদ, অধ্যাপক মুজিবর রহমানসহ অনেক বুদ্ধিজীবীও ছিলেন। বলা প্রয়োজন যে ইপিআরদের খেলার মাঠ তৈরীসহ বিভিন্ন রকমের কাজ তাদের দিয়ে করিয়ে নেওয়া হতো। এবং সে সময়ে তাদের উপর অত্যাচার করা হতো। দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সেখানে বিবৃতি আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে বৈদ্যুতিক চাবুক দ্বারা প্রহার করে। শেষ পর্যন্ত সে বিবৃতিতে তারা সই করিয়ে নেয় তাতে সত্য অপেক্ষা মিথ্যাই ছিল বেশী। স্বাক্ষর/মোঃ আবুল ওয়াহেদ ১৬/৮/৭২