পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տbr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ( - II মোঃ আল এমরান গ্রাম- আজাইরপুর, পোঃ- রাজারামপুর নবাবগঞ্জ, রাজশাহী ১৯৭১-এর জুন মাসের ১৬ তারিখে রাত দুটোর সময় আমার বাড়ী ৫০-৬০ জন পাক দস্য ঘেরাও করে। ঘেরাও করার পর বাড়ীর অভ্যন্তরে প্রায় ৪০ জন পাক দস্য ঢুকে পড়েছিল। বাড়ীর সমস্ত ঘর তল্লাশী চালিয়ে আমাকে ধরে ফেলে। ধরে দু’হাত পিছনে বেধে নিয়ে যায়। জেলখানায় আমি ধৃত ৩০ জনকে দেখতে পাই। সেখানে দিনভর রাখার পর থানাতে নিয়ে যায়। সেখানে কুখ্যাত মেজর শেরওয়ানী আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে । বলা প্রয়োজন, সেখানে আরও অনেক মিলিটারী উপস্থিত ছিল।জিজ্ঞাসাবাদ বরার পর মোটা বেতের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। অনেকের হাত – পা ভেঙ্গে চুরমার হয়েছিল। আমার পা হতে রক্ত ঝরছিল। পুনরায় সবাইকে জেলখানায় নিয়ে এলো নিয়ে আসার পর রাত ১২টার পরে গুজর ঘাটের শশানপুরীতে নিয়ে যয়। নিয়ে সবাই লাইন ধরার নির্দেশ দিল। লাইনের ভিতর থেকে ১২ জনকে বেছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে বাকী লোকগুলিকে পুনরায় জেলখানায় নিয়ে সকালের দিকে মেজর শেরওয়ানী জেলখানায় আসে। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে বদম মারধর আরম্ভ করে জেলে যত লোক ধৃত হয়েছিল সবাইকে। শশানঘাটে সন্ধ্যার সময় গুলি করার জন্য ৭ জনকে নিয়ে যায়। বধ্যভূমিতে ৭ জনকেই গুলি করে হত্যা করে। রাত ১১টার সময় উক্ত জেলথানায় দু’জন যুবতীকে ধরে নিয়ে রাখে। রাত অনুমান ৪টার সময় যে কক্ষের যুবতীদ্বয়ের করুণ কান্নার সুর শোনা যায়; অনুমতি হয় যে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছিল। সকাল ৮টার সময় জেলখানা থেকে কয়েকজন বর্বর সৈন্য বেরিয়ে যাবার ঘন্টাখানেক পরে মেজরসহ কয়েকজন মিলিটারী যুবতীদ্বয়কে নিয়ে বাইরে চলে যায়। শেষ পরিণতি জানা যায়নি। সন্ধ্যা ৭টার সময় বাকী সমস্ত বন্দি লোকজনকে শাশানঘাটে গুলি করার জন্য নিয়ে যায়। নিয়ে যাবার পর দু’জন করে লাইন করিয়ে গুলি করতে থাকে। আমাকেসহ অন্য তিনজনকে গুলি করার পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। তখন চারজনকে এক সাথে গুলি করার জন্য দাঁড় করালো। সেই মুহুর্তে একখানা সামরিক গাড়ী এসে শ্মশানঘাটে উপস্থিত হলো। গাড়ীর কাছে অন্যান্য মিলিটারী যারা গুলি করছিল, তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল। সেখানে কানা-ঘুষা হল। গুলি করা থেকে সাময়িক বিরতি নিল। পরের দিন আনুমানিক ১০টার সময় তিনজনকে ছেড়ে দেয়। আমি তাদের একজন। তিনি দিনে প্রায় ৪০-৫০ জনকে গুলি করে পাক বর্বর বাহিনী হত্যা করেছিল। স্বাক্ষর/ মোঃ আল এমরান