পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Ο Σ' বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড 矶 à l শ্যামল রায় মালতী নগর, থানা - সদর জেলা – বগুড়া প্রবল গুলি ও গোলাবর্ষনের ভেতর দিয়ে বর্বর পাক বাহিনী ট্যাঙ্ক সহকারে বগুড়ায় প্রবেশ করে। শুরু হলো নরপিশাচদের ‘বাঙালী চোষা বিহার বেঈমান সহযোগে শহরের বুকে তাণ্ডব নৃত্য। লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, খুন, তৎসহ ধর্মীয় স্থান কলুষিত ও বিধ্বস্ত করায় মত্ত হয় তারা। ২৫শে এপ্রিল রবিবার হঠাৎ করেই গ্রামের বাসা হতে গুলি ও ব্রাশফায়ারের শব্দ শুনে বুঝতে দেরী হয়েছিল না যে, পাকবাহিনী বগুড়া হতে বড় রাস্তা ধরে এদিকে এগিয়ে আসছে (সিরাজগঞ্জ ও উল্লাপাড়ার দিকে)। কিছুক্ষণ পর দক্ষিন-পূর্ব কোণ হতে কালো ধোয়ার কুণ্ডলী আকাশে উত্থিত হতে দেখা গেল। অনেকে বললেন কুমারেরা হাঁড়ি পোড়াচ্ছে। কিন্তু সব ধারণার অবসান হল তখনই, যখন শুধু এক জায়গাতে নয়, সমস্ত পশ্চিম দিক হতে ধোঁয়া আর আগুনের লাল আভা দেখা যেতে লাগল। যতই আধাঁর নামছিল আগুনের লেলিহান শিখা ততই প্রকট হয়ে ফুটে উঠছিল চোখের সামনে। আগুনের সঙ্গে সঙ্গে গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল উল্লাপাড়ার দিক হতে। পরের দিন শুনলাম চাঁদাইকোনার প্রত্যক্ষদশীর এক বিবরণ। তারা লোকজন ডেকে এনে লুট করিয়েছে বাজার এলাকা। অনেকে স্বেচ্ছায় এসেছে লুট করার লোভে। লুট করার সময় তারা ছবি তুলেছে। লুটপাট হয়ে গেলে আগুন ধরানোর পালা। আগুনও দিয়েছে লোকজনের সহায়তায়। আগুন ধরানোর সময় তারা ছবি তুলেছে। আর সব কাজ হাসিল করার পর বিক্ষিপ্তভাবে গুলিবর্ষণ করে জনসাধারণকে করা হয়েছে হত্যা। এরকম আরও ঘটনা। খাওয়ানোর নাম করে ডেকে এনে লাইন করে গরীব গ্রামবাসী নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পরের দিন শুরু হলো সিরাজগঞ্জে ঐ একই দৃশ্যের অবতারণা। ৩-৪ দিন ধরে চলে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, খুন ইত্যাদি। বাসার এত কাছে ঐ সব হচ্ছিল যে, ছাই এসে পড়ছিল বাসার মধ্যে। গ্রামের ও আশেপাশের অনেক লোক শহরে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেনি। এর সংগে সংগে গ্রামে গ্রামে ডাকাতি, থাকতে হয়েছে। দিনে গ্রামছাড়া আর রাত্রে পাটের ক্ষেত – এভাবে প্রতিটি ক্ষন কেটেছে। দৌড়ানোর জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয়েছে। একদিন শুনলাম মিলিটারী আসছে। তবুও থাকলাম বাসায়। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, কাছের এক হাট হতে আগুন আর ধোয়া। অনেকে পালিয়ে যেতে লাগল। গ্রামের কিছু দূর দিয়ে উচু মাটির রাস্তা। দাঁড়িয়ে ছিলাম মিলিটারীদেরকে দেখবার জন্য। দেখলামও, আমার কাছে ছোট একটা দূরবীন ছিল। তাই স্পষ্ট দেখলাম, একে একে ৭৯ জন সৈন্য পার হয়ে গেল। আমের সময় গাছে কাঁচা আম ছিল। তাই তারা খেতে খেতে চলছে। কি তাদের উল্লাস, এতটুকুও অনুশোচনা নেই মনে তাদের এই ধবংসলীলার জন্য। অবশেষে নানান কারণে সে গ্রাম আমাদের ছাড়তে হলো ২৬ শে মে বুধবার। নৌকায় চললাম উল্লাপাড়ার অভিমুখে। দুপুর ২টার দিকে বুধগাছা নামক গ্রামে আশ্রয় নিলাম। যে বাড়ীতে ছিলাম সে বাড়ীর এক ছেলে সৈন্য