পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ব্রিগেডিয়ার জনসাধারণরে মধ্যে ভাষণ দিলেন এই বলে যে, তোমাদের কোন ভয় নেই, তোমরা আমাদের সাহায্য কর, মুক্তিফৌজদের খোঁজ খবর দাও এবং ভারতের দালাল ধরে দাও ইত্যাদি বিষয়। এরপর আমি ব্রিগেডিয়ারের অনুমতি নিয়ে ঐ সমস্ত কথাগুলি পুনরায় বলি। আমি আরও বলি যে, পাক ফৌজ কেন আমাদের মা বোনের ইজ্জত ধবংস করছে? তারা আমাদের হেফাজতের জন্য এসেছে। আমাদের অন্নে প্রতিপালিত হয়ে আমাদের উপর গুলি করা আল্লাহপাক বরদাস্ত করবে না। মুসলমানের ধর্ম কি তাই? একজন নিরীহ লোককে হত্যা করা এটা বিধর্মীয় কাজ ইত্যাদি সম্পর্কে ভাষণ দেই। এই ভাষণ শুনে ব্রিগেডিয়ার আমাকে ডেকে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। ঘরের ভিতর নিয়ে জোর করে ৫০টি টাকা বকশিস দিয়ে কোরান ছুয়ে শপথ করায় যে, আগামী কাল আমি যেন তাদের ক্যাম্পে দেখা করি। পরের দিন সেই মোতাবেক তার কথা ও ধর্ম রক্ষার্থে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা করি। তখন ব্রিগেডিয়ার বলে যে, তোমাকে ১০০০ (এক হাজার) করে টাকা দিতে ইচ্ছুক এবং সমস্ত বগুড়া জেলার রাজাকারের কমাণ্ডার বানিয়ে দিতে চাই, তুমি কি ইচ্ছুক? তখন আমি বলি যে, স্যার আমি রাজাকার হতে চাই না। এরপর আমাকে অনেকগুলি ৫০০ (পাঁচশত) টাকার নোট দেখায় এবং বলে যে, তুমি যদি রাজাকারের কমাণ্ডার হও তাহলে তোমাকে বহু টাকা দেওয়া হবে। আমি সমস্ত কিছু অস্বীকার করে কোন রকমে বাড়ী চলে আসি। রমজান মাসে আমি নাডুয়া মালা হাট থেকে আসছিলাম। তখন দেখতে পেলাম একজন খানসেনা একটি লোকের নিকট থেকে জোর করে টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। লোকটি তখন আমার কাছে ঐ কথা বলে দেয়। তখন আমি প্রতিবাদ করলে আমার পকেটে যত টাকা ছিল খানসেনা তা কেড়ে নেয়। গাবতলী বাজারের ভিতর এসে একখানা চাকু সংগ্রহ করি। অতঃপর বাজারের ভিতর খান সেনাকে রাইফেলসহ জড়িয়ে ধরি। অতঃপর আমি লোকজন ডাকলাম খান সেনাকে চাকু মারতে। কিন্তু কেউই আমাকে সাহায্য করতে আসল না। ১০ মিঃ আমাদের এ লড়াই চলে আমিও সুযোগ পাইনা চাকু মারতে। অতঃপর খান সেনাটি তার টাকা এবং তার সাথে আরও বিশটি (২০) টাকা দেয়। আমি খান সেনাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড় দিয়ে প্রাণ বাঁচাই। এই রকম ভাবে আমি তিনবার খান সেনাদের হাতে নির্যাতিত হই। প্রত্যেক বারই আমি সাহস ও তীক্ষ্ম বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে রেহাই পাই। স্বাক্ষর/মোঃ আজাদুর রহমান মণ্ডল ইং ২৪/৯/৭৩