পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSS বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll ᏬᏭ Il মোঃ জজবর রহমান (ষ্টেশন মাষ্টার) জয়পুরহাট রেলষ্টেশন, জেলা- বগুড়া হানাদার বাহিনী ২৪শে এপ্রিল শনিবার রাত্রিতে জয়পুরহাট চলে আসে। আসার সময় রেলষ্টেশনের অনতিদূরে একটি রেল সেতুর কাছে গুলি করে ৩ জন নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করে। ইতিপূর্বে আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে জয়পুরহাট থেকে তিন মাইল দূরে এক গ্রামে রেখে আসি। প্রত্যেক দিন ঐ গ্রাম থেকে সকালে ষ্টেশনে আসতাম এবং সন্ধ্যায় ফিরে যেতাম। খান সেনাদের আগমনের সাথে সাথে আমি জীবনের ভয়ে কাজ ফেলে দূরে গিয়ে পালাতে বাধ্য হই। আর অফিসে আসিনি। খান সেনারা এখানে এসে স্কুল কলেজ এবং সরকারী বেসরকারী অফিস আদালত খোলার ব্যবস্থা করে। ষ্টেশন মাষ্টার সাহেবের খোঁজ করতে থাকে। বহু গুপ্তচরকে আমার পিছনে লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় এক বুকিং ক্লার্ক (অবাঙ্গালী) আমার তল্লাশী চালায়। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে ধরতে না পেরে এই মর্মে চিঠি লিখে পাঠায় যে, যদি আমি নিজ কার্যে যোগদান না করি, তবে ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে ধরে এনে হত্যা করা হবে। সত্য সত্যই কয়েকদিন পর সেই অবাঙ্গালী বুকিং ক্লার্ক এবং আরও কয়েকজন অবাঙ্গালী খোলা তলোয়ার হাতে আমার বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত হয়। উপায় না দেখে আমি ধরা দিতে বাধ্য হই। অতঃপর মহকুমা প্রশাসক কার্যে যোগদান করেছেন কিনা তা জানার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে তার কাছে যাই। মহকুমা প্রশাসক আমাকে কাযে যোগদান করতে আদেশ দেন। আমি মেজরের সাথে দেখা করি। দেখা করার সময় একজন পাঞ্জাবী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। মেজর কার্যে যোগদান করার জন্য আদেশ দেন। অতঃপর অফিসে চলে আসি। অফিসে আসার পথে প্লাটফরমে একজন পাক সেনা আমাকে দরে পকেট থেকে টাকা ফেলেছিলাম। খান সেনাটি আর কিছু না বলে ছেড়ে দেয়। দিনের পর দিন খান সেনারা অত্যাচার আর গণহত্যা চালাতে থাকে। পূর্ব উল্লেখিত খান সেনার সাথে আমার বেশ বন্ধুত্ব জমে উঠে। ঐ খান সেনার সহযোগিতায় আমি বহু নিরীহ লোকজনকে শত্রর হাত থেকে রক্ষা করি। অত্র এলাকায় ঘাঁটি করে থাকাকালীন খান পশুরা অসংখ্য লোক জনকে হত্যা করে। খান সেনারা অবাঙ্গালীও ধরে আনে রেল মিস্ত্রীর সাহায্যে। রেললাইন মেরামত করে স্বাধীনতা পূর্ব পর্যন্ত শান্তাহার থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ করে। এরপর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রবল আক্রমণে বাংলাদেশ মুক্ত হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জয়পুরহাটও মুক্ত হয়ে যায়। স্বাক্ষর/মোঃ জজবর রহমান ΣΣ/Σο/ao