পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥৭৩॥

মোঃ জালাল উদ্দিন
সারিয়াকান্দি
জেলা-বগুড়া

 ১৯৭১- এর জুলাই আগষ্ট মাসের দিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অধিক সামরিক শক্তি সরঞ্জাম নিয়ে সারিয়াকান্দিতে তাঁদের ঘাঁটি ফেলে। হানাদার বাহিনী বাঁধে যাওয়ার পথে বেণীপুর চরের তমিজউদ্দিন প্রামাণিকের ভগ্নিপতিকে সা পাড়ার রাস্তায় ধরে এবং রাইফেল দ্বারা আঘাত করে হত্যা করে। তারা প্রত্যেক দিন সকালে দল বেঁধে বিভিন্ন গ্রামে রুটিন মোতাবেক হামলা করত। নারী নির্যাতন, হত্যা, মারধোর ও লুণ্ঠন করে মূল্যবান জিনিসপত্রাদি নিয়ে বিকালে তাদের ঘাঁটিতে ফিরত। এমনি একদিন গণকপাড়ায় যেয়ে তারা মুক্তি বাহিনীর হাতে আটকা পড়ে। সারাদিন সারারাত দু'দলের মধ্যে যুদ্ধ হয় কিন্তু মুক্তি বাহিনীর গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানী বাহিনী রক্ষা পায়।

 অতর্কিতে হানা দিয়া পাক বাহিনী দেলুয়াবাড়ী গ্রাম হতে মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন, সাহায্যকারী কোরবান আলী, মন্তেজার রহমান ও বাবু খাঁকে আটক করে। বাঁধের নিকট নিয়ে হাত পা ঁবেঁধে নজির হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে এবং অপর তিনজনকে নিয়ে ঘাঁটিতে আসে। অতি কষ্টে পরে তারা মুক্তি পায়। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর প্রায় সপ্তাহখানেক তাদের দু'জনকেই অজ্ঞান অবস্থায় দেখা গেছে। বাঙ্গালীর পশ্চিম পাড়, রামচন্দ্রপুর গ্রামে অপারেশন চালাতে গিয়ে মুক্তি বাহিনীর গুলিতে ছোট দারোগা নিহত হয় এবং সামরিক বাহিনীর একজন গুরুতররূপে আহত হয়।

 মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা রীতিমতো বেড়ে যায়। হানাদার বাহিনী বাইরে যাওয়া কম করে ফেলে। তাদের অত্যাচারে পলাতক বাড়ীওয়ালাদের খাসী, মোরগ কুড়াতে থাকে। একদল হানাদার বাহিনী বগুড়া থেকে আসার পথে ফুলবাড়ী খেয়াঘাটে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। খেউনিরূপী মুক্তিযোদ্ধা খেয়ার নৌকা নদীর মধ্যে আসলে গুলি ছুড়তে থাকে। ঘটনাস্থলেই তিনজন কনষ্টেবল প্রাণ হারায়। তারপর শুরু হয় স্থানীয় দোকানপাট লুণ্ঠন। তবিবর মণ্ডলের দোকানের সম্মুখে ট্রাক রেখে মালপত্র বোঝাই করে সেগুলো রংপুরের গাইবান্ধায় পাচার করে। হাবিবুর প্রামানিকের দোকান লুট করে এবং তাকে পরপর দুই দিন দোকানের মধ্যেই বেদম প্রহার করে। নৌকাতে পাট উঠানোর অভিযোগে দৌলতুজ্জামান তরফদার সাহেবকে ভীষণ মারধোর করে। তখন মুক্তি বাহিনীর আর সহ্য হয় না। এদিকে সোজাসুজিও তারা মিলিটারীদের ঘাঁটিতে হানা দিতে পারে না। কারণ পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্পে হানা দিলে আশেপাশের গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় এবং লোকজন মেরে ছাফ করে ফেলে। তবুও সময় ঠিক করে একদিন মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানী বাহিনীর এই খবর বগুড়ায় তাদের ঘাঁটিতে পৌঁছিয়ে দেয়ার পর সামরিক বাহিনীর লোককে সারিয়াকান্দি পাঠিয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। সারিয়াকান্দি বাজারের সমস্ত বাড়ী ও দোকানপাট তল্লাশী চালিয়ে মালেক মণ্ডলের দোকান হতে বাংলাদেশের পতাকা উদ্ধার করে। ফলে তার দোকানের সমস্ত মালপত্র থানাতে উঠাবার আদেশ দেয়। তারপর মন্তেজার রহমান মণ্ডলকে পাকিস্তানী পতাকা না উঠাবার অভিযোগে আটক করে তাদের সামরিক গাড়িতে উঠায়ে নেয়। মফিজ মাষ্টার সাহেবের বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তার বাড়ীতে পাহারারত কামলা খটটুর বাবাকে আটক করে এবং গাড়ীতে তুলে নেয়। জামাল ডাক্তারের শ্বশুর ময়েজ ডাক্তার,জামাল ডাক্তার, মালেক মণ্ডলের ছেলে এবং অন্যান্য বেশ কিছু লোককে হানাদার বাহিনীর জোয়ানরা আটক করে। সামরিক বাহিনীর উক্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিল লেফটেন্যাণ্ট আতিক। মালেক মণ্ডলের ছেলেকে থানায় নিয়ে তার বুকে পায়ের শক্ত জুতার দ্বারা বার কয়েক আঘাত করে। ফলে সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায় এবং তার মুখ হতে রক্ত বের হতে থাকে। সকলকে নিয়ে বাউলে আটা ঘাঁটিতে চলে যায় এবং রাতে তাদের প্রতি অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায়। তাদের