পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉こ > বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l C 8 Ill মোঃ ছানোয়ার হোসেন গ্রাম- বালীস্বর্বা জেলা – বগুড়া ১৯৭১ সনের ২২শে জুলাই রাজাকারদের হাতে গ্রেফতার হলে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যাবার পর আমাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। তারপর আরম্ভ হয় দৈহিক নির্যাতন। প্রায় ১৫/২০ জন পাঞ্জাবী “ফুটবল” খেলার মত আমাকে লাথি মারতে থাকে। একজন লাথি মেরে আর একজনের কাছে দেয়, সে আবার আর একজনের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে কিল ঘুষি, রাইফেলের বাঁটের বাড়ি চলতে থাকে। প্রায় ৪০ মিনিট তারা আমার উপর নির্যাতন চালায়। শেষের দিকে আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি। সারা শরীর ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। আমার উপর দৈহিক নির্যাতন চালাবার পর প্রায় জ্ঞানশূন্য অবস্থায় থানাতে পৌছে দেয় এবং হাজতে চোখ, হাত বাঁধা অবস্থায় বন্দী করে রাখে। রাত্রি ৮টার দিকে একজন বাঙ্গালী পুলিশ আমার চোখ ও হাতের বাঁধন খুলে দেয় এবং কিছু ভাত খেতে দেয়। এই সময় আমি দেখতে পাই হাজতের ভিতর আরও ৮ জন বন্দী আছে। অতঃপর আমাকে ১০ দিন থানা হাজতে বন্দী করে রাখে। প্রত্যেক দিন বহু পাঞ্জাবী সৈন্য ও বিহারীরা আমাকে দেখার জন্য আসতো কেননা তারা নাকি মুক্তিফৌজ কেমন দেখা যায় তা জানে না। তারা এসে নানাভাবে আমাকে গালিগালাজ দিত এবং লাঠি দিয়ে হাজতের ভিতরেই আমাকে খোঁচাতো। অনেকে আবার উপহাস করে আমাকে বন্ধু বলে ডাকতো। আগষ্ট মাসের ১ তারিখে আমাদেরকে থানা হাজত থেকে বের করে এবং আমার দুই পার্শ্বে দুইজনকে দাঁড় করে আমার দুই হাত দুই জনের হাতের সঙ্গে বেধে মাজায় দড়ি বেঁধে টেনে রেল ষ্টেশনে আনা হয়। তারপর গাড়ীতে করে বগুড়া নিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। বগুড়া জেলে দুইটা পাঞ্জাবীকে “জেল” দেয়া হয়েছিল। এই পাঞ্জাবী দুটি জেলের ভিতর যখন তখন আমাদেরকে মারধোর করতো। ৩রা আগষ্ট আমাকে জেল থেকে বের করে বগুড়া কটন মিলের নিকট একটা ছোট ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। এখানে নিয়ে প্রথমে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। এই সময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে – ‘তুমি কত বিহারী ও পাঞ্জাবী মেরেছো? কোথায় মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং দিয়েছো, তোমাদের লিডার কে, কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছো, ভারতীয় সৈন্য বর্ডারে যুদ্ধ করছে, কিনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কত? পাক বাহিনীর প্রশ্নের জবাবে আমি শুধু এক কথা বলি যে, আমি এ সব কিছু জানি না। আমি ভারত থেকে পলিয়ে আসছিলাম, আমি ট্রেনিং নেই নি। আমার কাছ থেকে কোন কথা বের করতে না পেরে ৩ জন মিলে এক সঙ্গে আমাকে মারতে আরম্ভ করে। কিল, ঘুষি, লাথি, রাইফেলের বাটের বাড়ি এবং লাঠি দিয়ে ভীষণভাবে পিটান আরম্ভ করে। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত এই ভাবে মারধোর করার পর আমাকে পায়ের ভিতর হাত দিয়ে কান ধরে রাখতে নির্দেশ দেয়। আমি যখন তাদের কথা মত নিচু হয়ে পায়ের ভিতর হাত দিয়ে কান ধরে থাকি তখন পিছন থেকে চাবুক দিয়ে পিটান হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে একই প্রশ্ন বার বার করতে থাকে। সময় সময় বাইরে থেকে যারা দেখতে আসে তারাও হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে পিটায়।