পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉こ8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড আমকে বহু সময় মারধর করার পর লেঃ আলতাফ আমাকে মেরে ফেলার জন্য মেজর সাহেবের কাছে এজাজত চায়। মেজর সাহেব লেঃ আলতাফকে এজাজত দেয় আমাকে হত্যা করার জন্য। এই সময় আমাকে হত্যা করার জন্য লেঃ আলতাফ হোসেন আমাকে গাড়ীতে করে খোঞ্জনপুর রাস্তার উত্তর পারে মাঠের ভিতর পাক বাহিনীর ডিফেন্স- এর কাছে নিয়ে যায়, ৩/৪ জন মিলিটারীর হাতে তুলে দেয় এবং বলে দেয় যে একে চাকু দিয়ে জবাই করে কিম্বা বেয়োনেট দিয়ে হত্যা কর। বর্বর সৈন্যরা আমাকে হত্যা করার জন্য প্রায় ১০০ গজ দূরে নিয়ে যায়। রাস্তাটা ছিল উচু, আমাকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তারা আমার চোয়ালে ঘুষি মারতে থাকে। আমি পড়ে যাই, তারা আবার টেনে তোলে। আমাকে হত্যা করার জন্য যখন সুবেদার সাহেব একটা চাকু বের করে এবং টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায় আমি তখন সুবেদার সাহেবের কাছে নামাজ পড়ার জন্য একটু সময় ভিক্ষা চাই। কিন্তু সুবেদার বলতে থাকি যে “যদি আমাকে আল্লাহর এবাদত থেকে বঞ্চিত করে হত্যা করা হয় তা হলে রোজ হাসরের ময়দানে আল্লাহর সামনে আপনাদের বিচারের জন্য ফরিয়াদ করবো এবং বলবো এরা আমাকে তোমার (আল্লাহ) এবাদত থেকে বঞ্চিত করে হত্যা করেছে আমি এর বিচার চাই।” আমার এই কথা শোনার পর সুবেদার সাহেব কিছুক্ষণ নীরব থাকে এবং পরে নামাজ পড়ার জন্য এজাজত দেয়। নামাজ পড়ার জন্য আমার এক হাত খুলে দেয় এবং এক জগ পানি এনে দেয়। আমি যখন নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যাই তখন পাক সেনারা তিন দিকে এল, এম, জি নিয়ে পজিশন নিয়ে থাকে। তারা আমাকে বারে বারে স্মরণ করিয়ে দেয় যে পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করে হত্যা করবে। অতঃপর আমি এক মনে কৃাজা নামাজসহ এশার নামাজ আদায় করতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লেগে যায়। নামাজের মাঝখানে আমি একবার টেলিফোন বেজে ওঠার শব্দ শুনতে পাই। নামাজ শেষে মোনাজাত করে আমি বর্বর বাহিনীকে বলি যে এই বার আমি প্রস্তুত এখন আমাকে নিশ্চিতভাবে হত্যা করতে পারো। এই সময় একজন সিপাই আমার কাছে এসে বলে যে খোদা আপনার দোয়া কবুল করেছেন। আপনাকে আর মারা হবে না কেননা এইমাত্র হেড অফিস থেকে ফোন এসেছে, আপনাকে সেখানে এখনই নিয়ে যাবার জন্য হুকুম দিয়েছে। অতঃপর আমাকে হাত বাঁধা আবস্থায়ই একটা গাড়ীতে করে বি, আই, ডি, সি, অফিসের পাক বাহিনীর হেড অফিসে নিয়ে যায় এবং এক ক্যাপ্টেন সাহেবের কাছে হাজির করে। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের তদবীরের ফলে ২৮শে নভেম্বর আমি রাত্রিতেই আমি মুক্তি লাভ করি। স্বাক্ষর/মোঃ ছানোয়ার হোসেন ১০/১১/৭৩