পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ծ Հ(: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড በ GlÖ በ দারাজ উদ্দিন আহমেদ থানা- জয়পুরহাট, জেলা- বগুড়া ২৬শে এপ্রিল পাক সৈন্য জয়পুরহাট পৌঁছে এবং ২৭শে এপ্রিল তারা ট্রেনযোগে পাঁচবিবি যাবার পথে পুরানোপৈল রেল ষ্টেশনের উত্তরে রেল গুদামটির কাছে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রেখে তারা নির্দেশ দেয় গ্রামের লোকদের “মালাউনকা ঘর জ্বালাদো” বলে। তারা নিজেরাও একটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। গ্রামের লোকেরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গ্রামের সমস্ত হিন্দু বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবশ্য হিন্দুরা ইতিপুর্বেই দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। ২৮শে এপ্রিল তারিখে পাকসৈন্য মুসলিম লীগারদের খবরে জয়পুরহাট থেকে তিন মাইল পুর্ব উত্তর কোণের হিন্দু প্রধান গ্রাম করোই কাদিপুর ঘেরাও করে অপারেশন করে। এখানকার সমস্ত অধিবাসী হিন্দু এবং তারা কুমার ছিল। গ্রাম ঘেরাও করে তারা উক্ত গ্রামের ১৮৫ জন্য পুরুষ-মহিলা এবং বাচ্চাকে হত্যা করে। গ্রাম ঘেরাও করার পর গ্রামের লোকজন প্রানভয়ে পালাতে থাকে তখন তাদের উপর বেপরোয়া গোলাগুলি নিক্ষেপ করে উক্ত সংখ্যক লোকজনকে হত্যা করে। এ ছাড়া কিছুসংখ্যক লোককে তারা ধরে আনে এবং তাদের মধ্যে ৩/৪ জনকে জনৈক মুন্সি জবাই করে হত্যা করে। উক্ত মুন্সিকে পাক সৈন্যরা জবাই করতে বাধ্য করে। পাক সৈন্যরা উক্ত গ্রামের ৬/৭ জন লোক যারা প্রাণভয়ে কচুরীপানার মধ্যে ডুবিয়েছিল তাদেরকে দেখতে পায় এবং সেখানেই গুলি করে তাদের হত্যা করে। হত্যাযজ্ঞ শেষ হবার পর তারা সমস্ত গ্রাম জুলিয়ে দেয়। উল্লিখিত তারিখেই বিকাল ৪টায় পুরানোপোল হাটে জনৈক হিন্দু মুচিকে গুলি করে হত্যা করে। ডিসেম্বরের যুদ্ধকে মানুষ স্বাগতম জানিয়েছে। তারা এই যুদ্ধকে মুক্তির পথ বলে মনে করে। স্মরণীয় ঘটনা : ২৭শে এপ্রিল আমি বাজার করার জন্য জয়পুরহাট পৌঁছি। রাতে যে মিলিটারী এসেছে তা জানতাম না। বাজারে পৌঁছার পর তিনজন মিলিটারী আমাকে ধরে নিয়ে বাজারে যায় এবং একটি কাপড়ের দোকানের তালা ভেঙ্গে আমাকে লুট করতে বলে। আমি তাতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে তারা চড় মারে। তখন বাধ্য হয়ে একথান কাপড় নেই। অতঃপর আমাকে নিয়ে রেল ক্রসিং- এর পাশ দিয়ে যেতে থাকে। সে সময় জনৈক ভদ্রলোক সাইকেল চড়ে যাচ্ছিলেন। তাকে তারা থামিয়ে দেয় এবং তার হাতের ঘড়িটি চায়। তিনি দর্পভরে বলেন যে “আমি জীবিত থাকাকালে আমার কোন জিনিস খানরা তোমরা পাবে না।” শেষ পর্যন্ত তারা তাকে গুলি করে হত্যা করে ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। জনৈক বিহার ছেলেকে বলে তার সুপারিশে আমি মুক্তি পাই। স্বাক্ষর/দারাজ উদ্দিন আহমেদ