পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉こと বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | ૧૭ || মোঃ গোলাম মোস্তফা মণ্ডল জেলা- বগুড়া পাক সেনা জয়পুরে পৌঁছার পর তাদের অত্যাচারে জনগণ ভীষণভাবে অতিষ্ট হয়ে পড়ে। জানমালের নিরাপত্তা তথা ইজ্জতের ভয়ে জনগণ ভারতে চলে যেতে থাকে। মে মাসের মাঝামাঝি এমনিভাবে কতিপয় লোককে গাড়োয়ানরা বাংলাদেশের সীমানায় রেখে আসার পথে রাজাকাররা ঐ সমস্ত ১৬/১৭ জন গাড়োয়ানকে গ্রেফতার করে জয়পুরহাট শান্তি কমিটির অফিসে নিয়ে আসে। রাতে সেখানে বন্দী করে রেখে পরদিন ট্রাকে করে শামীম বিহারীর নেতৃত্বে তাদের আক্কেলপুর মিলিটারী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ভালক্যা বাঁশের মোটা গোড়া দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে ঐ সমস্ত গাড়োয়ানকে হত্যা করে। যুগীপাড়ার মিঃ আলেক উদ্দিনকে একদিন ধরে জয়পুরহাট কলেজ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিনি একজন গোঁড়া আওয়ামী লীগার ছিলেন। তাকে শারীরিকভাবে অমানুষিক অত্যাচার করেছে কিন্তু তিনি কিছুতেই “পাকিস্তানী” একথা স্বীকার করেননি। তিনি সর্বদাই বলেছেন যে আমি আওয়ামী লীগার। তাকে বেদম প্রহার করে। কিছুতেই পাকিস্তানের কথা স্বীকার করাতে পারেনি। তখন তার দুই পায়ের পিছনে গোড়ালীর রগে অত্র এলাকার প্রখ্যাত হোমিও ডাক্তার আবুল কাশেম যুদ্ধকালে ৭ মাস পালিয়ে ছিলেন। তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর আওয়ামী লীগার ছিলেন। তিনি একদিন রাতে গরুর গাড়ীতে করে বাড়ী পৌঁছেন। সে রাতেই মিলিটারীরা বাড়ী ঘেরাও করে তাকে গ্রেফতার করে। তাকে জয়পুরহাট ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তার নিম্নাংশ মাটির নীচে পুতে তাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। এ ছাড়া তাকে পায়ের গোড়ালীর রগে ছিদ্র করে উল্টো করে রশি বেঁধে টাঙ্গিয়ে রেখে গায়ের চামড়া কেটে লবণ লাগিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে হাত পা পুটলি করে বেঁধে ট্রাকে ধপাস করে ফেলে সেখান থেকে আবার নীচে ফেলে দেয়। তারপর তার দুই চোখ উপড়ে ফেলে দেয় এবং সেখানে পেট্রোল মাখানো তুলো ঢুকিয়ে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হত্যা করে। এক কথায় যত প্রকার অত্যাচার করার সবই তারই উপর প্রয়োগ করা হয়। লতিফ টি ষ্টলের মালিক ছিলেন লুৎফর। ২৫ শে মার্চের পর এখানে যে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। বলা প্রয়োজন তার ডান হাত সম্পূর্ণ অকেজো ছিল। তবুও তিনি দেশের ডাকে বাম হাতেই রাইফেল চালনা করতেন। পাক সেনারা এখানে আসলে তিনি দেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে যান। কিন্তু পালানোর অবস্থাতেই মুসলিম লীগের পাণ্ডাদের চক্রান্তে ও সক্রিয় সহায়তায় তিনি ধরা পড়েন। সে সময় মিলিটারীদের ক্যাম্প ছিল ষ্টেশনে। সেখানে তাকে নিয়ে এসে টাঙ্গিয়ে হৃদয়হীনভাবে নির্যাতন করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জুলন্ত সিগারেট ঠেসে ধরে। তাছাড়া লোহার রড আগুন দিয়ে পুড়িয়ে লাল শিক চোখের মধ্যে ঠেসে দিয়ে চোখ গালিয়ে ফেলে। সমস্ত প্রকার নির্যাতন চালানোর পর তার পা বেঁধে কুণ্ডলী পাকিয়ে রেল গাড়ীর ইঞ্জিনের জুলন্ত বয়লারে ফেলে দিয়ে জীবন্ত হত্যা করে। তার কোন অস্তিত্বও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বাক্ষর/মোঃ গোলাম মোস্তফা মণ্ডল