পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৯ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ৬ই মেঃ সামরিক কর্তৃপক্ষ শহরের অভিজাত দোকান পাট গুলো চালু না রাখার অভিযোগে সিল করে দেয়। সেনাবাহিনীর লোকেরা এই সব দোকানপাটের বহু মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। একই তারিখে সৈন্যরা ক্যান্টনমেন্টের নিকটবর্তী দেওভোগ গ্রাম লুট করে। ১১ই মেঃ পাক সৈন্যরা শহরের অদূরে নাড়ীরহাট গ্রামে অতর্কিত হানা দিয়ে ৪৮ ব্যক্তিকে হত্যা করে। ১৬ই মেঃ স্থানীয় কুখ্যাত দালালদের সহযোগিতায় বর্বর সৈন্যরা শহরের রাধাবল্লভ ইউনিয়নে রাত্রি নটা থেকে ১ টা পর্যন্ত তল্লাশী চালায়। তারা নারীদের উপর অত্যাচার করে। জনগণকে অসহায় অবস্থায় ধরে হত্যা করে এবং গৃহস্ত বাড়ী থেকে মূল্যবান আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এই সময় রংপুর শহরের বিশিষ্ট মারোয়াড়ী ধনী পাট ব্যবসায়ী রামরিক আগরওয়ালার মিলে দালালদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী হানা দেয়। হানাদারগণ রামরিক আগরওয়ালার কাছ থেকে নগদ টাকা পয়সা, মিলের মেশিনারী দ্রব্যাদি এবং দালালদের দ্বারা জমাকৃত পাট নিয়ে যায়। হানাদাররা উক্ত মারোয়াড়ী ব্যবসায়ীর উপর দৈহিক নির্যাতন করে। ৩১ শে মেঃ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১২৪ জন বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং সাবেক ই, পি, আর, কে সামরিক কর্তৃপক্ষ বেতন দানের প্রলোভন এবং কাজে যোগদানের নির্দেশ দিয়ে ডেকে নিয়ে আসে। তাদের সবাইকে ঘাঘট নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে মেশিনগানের গুলিতে নির্মমভাবে হত্যা করে। সামরিক পোষাক পরিহিত অবস্থায়ই এদেরকে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে এদের মধ্যে কয়েকজন কোনক্রমে ছুটে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ২রা জুনঃ রংপুর সদর থানার বুড়িরহাট নিবাসী জনৈক ব্রাহ্মণ পরিবার হানাদার সেনাবাহিনীর ভয়ে হানাদাররা উক্ত ব্রাহ্মণের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। ব্রাহ্মণসহ তার স্ত্রী এবং শিশু কন্যাকে হত্যা করে এবং ঘাঘট নদীর উপর জাফরগঞ্জ ব্রীজের নীচে তাদেরকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। রংপুর শহর সাবেক ইপসিক এর পাশে আর্মি হেড কোয়ার্টারের সংলগ্ন জনৈক মেজরের বাস ভবনে রাত্রি ১১ টার দিকে জলসা বসতো। বিভিন্ন স্থান থেকে ধৃত তরুণীদের দিয়ে জোরপূর্বক নাচ এবং গানের আসর করানো হতো। তখন তরুণীদেরকে যথেচ্ছ ধর্ষণ করা হতো। যখন তারা তাদের চিত্ত বিনোদনে অসমর্থ হতো মেজরের নির্দেশে তাদের হত্যা করা হতো। ধর্ষিতা মেয়েদেরকে শুকনো রুটি এবং রাত্রে সামান্য ভাত দেয়া হত। রংপুর ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনীর মেজর বশীর ছিল নারী ধর্ষনের হোতা। প্রতি রাত্রে তার চিত্ত বিনোদনের জন্য ৩ থেকে ৪ জন বাঙ্গালী তরুণী সরবরাহ করা হতো। সেনাবাহিনীর অফিসাররা বিভিন্ন স্থান থেকে ধৃত শিক্ষিতা তরুণীদের সাথে নিয়ে ফিরতো। রাজশাহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষিতা তরুণীকে একদিন কালো বোরখা পরিয়ে জনৈক অফিসার ওরিয়েন্টাল সিনেমায় নিয়ে আসে। অফিসারটি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায়। পাশের ছিটে আমি বসা ছিলাম। একজন তরুনী সরাসরি আমার সাহায্য চায়। তিনি নিজেকে বাংলা বিভাগের ছাত্রী বলে জানান। ইত্যবসরে অফিসারটি এসে পড়ে। উক্ত হতভাগিনী তরুণীদ্বয়ের জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। স্বাক্ষর/মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী