পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ Գ է լ মেঃ আরব আলী মিয়া চার্চলেন, জুম্মাপাড়া, রংপুর ৩রা জুন (১৯৭১) বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌনে পাঁচটায় বাসা থেকে আমি সিকিউরিটি ব্রাঞ্চের লোকেরা স্থানীয় লোকের সহায়তায় ধরে রংপুর ক্যান্টমেন্টে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। মুক্তিবাহিনীর লোকদের আড্ডা কোথায় এবং তাদের গোলাবারুদ কোথায় রক্ষিত আছে। আমার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক আছে ও তারা প্রায়ই আমার কাছে আসা-যাওয়া করে। দ্বিতীয়তঃ আমার বাসায় জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। সেখানে তাদের গোপন মিটিং হোত। তাদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, কাজেই তাদের গোপন দলিলপত্র কোথায় রক্ষিত আছে তা আমি জানি। আমি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলে আমাকে ভীষণভাবে ধমকি দেয় এবং সেখানে আমাকে রাত ৯টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখে। অতঃপর আমার উপর দৈহিক নির্যাতন শুরু হয়। একটি নির্জন ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করে আমার দুজন সিকিউরিটি ব্রাঞ্চের লোক ইউসুফ খান ও হাবিলদার গোলাম রসুল দাঁড়ায়। একজনের হাতে লোহার রড এবং অপর জনের হাতে শাল কাঠের দরজার খিল (যা দিয়ে দরজা বন্ধ করা হয়) দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হৃদয়হীনভাবে প্রহার শুরু করে। ঘন্টা দেড়েক আমার উপর সমানে দুজনে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় অত্যাচার চালায়। অত্যাচারের সময়ও আমাকে উল্লিখিত বিষয়গুলি সমন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অত্যাচারের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে বিশেষ করে থুতনি থেকে দরবিগলিত ধারায় রক্তপাত হচ্ছিল। রাত এগারটা সাড়ে এগারটার দিকে এবং তা ছাড়া আরও দুবার দু’দল লোক এসে একই প্রক্রিয়ায় অত্যাচার করে। এসময় আমাকে “বাইনচোদ, তোমলোগ জয় বাংলা নারায়ে লাগাতা হ্যায়। তুমলোগ লাখো লাখো মুসলমানকো খতম কর লেগা, সময় নেহি আতা হ্যায়। আবি কাঁহা গিয়া তোম লোগ কো জয় বাংলা। তোম লোগ আওয়ামী লীগকো বহুত মদদ দিয়া।” এছাড়া শ্লীলতাবর্জিত গালিগালাজ করতে থাকে। রাত দেড়টার দিকে আমার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং বলে যে “গুলি কি নিশানা বানগিয়ে। কুচ বাতানে হ্যায় তো বাতাও।” আধ ঘন্টা খানেকের পর তারা আমার বাঁধন খুলে দেয়। এবং উক্ত ঘরেই দুদিন বন্ধ করে রাখে এবং তৃতীয় দিন থানায় পাঠায়। থানা থেকে দুদিন ক্যান্টমেন্টে মেজরের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় আমাকে অকথ্য, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ৫ দিন বন্ধ করে রাখার পর মঙ্গলবার আমাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির বিনিময়ে তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। স্বাক্ষর/মোঃ আরব আলী মিয়া