পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড দলিল প্রসঙ্গঃ গণহত্যা, শরণার্থী শিবির ও প্রাসঙ্গিক ঘটনা ২৫শে মার্চের রাতে আকস্মিকভাবে ঢাকায় বেসামরিক জনসাধারণের ওপর পাক হানাদার বাহিনীর সামরিক হামলার পর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তাদের আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তারা সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের যে ব্যাপক ক্রিয়াকলাপ চালায় সে সম্পর্কিত দলিলপত্র এই খন্ডে গ্রন্থিত হয়েছে। দলিলাদির প্রকৃতি অনুযায়ী এগুলো কয়েকটি ভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রথমে রয়েছে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের শিকার ব্যক্তিগণকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে জেনেভাস্থ মানবাধিকার কমিশনে প্রেরিত কয়েকটি আবেদনপত্রের অপুলিপি (পৃষ্ঠাঃ ১-১১)। এর পরে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গৃহীত সাক্ষাতৎকার (পৃষ্ঠাঃ ১২-৩২৪)। বাংলাদেশের ৪টি আঞ্চলিক বিভাগের প্রতিটি জেলার সর্বশ্রেণীর জনসাধারণের কাছ থেকে নেয়া সাক্ষাৎকার হতে প্রতিনিধিত্বমূলক ২৬২টি এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। মোটামুটিভাবে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে আকস্মিকবাবে বেঁচে যাওয়া, তাদের বর্বর নির্যাতনের সাক্ষী ও ধর্ষিত নারীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের এসব বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের পল্লীগ্রাম তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলে হানাদার বাহিনরি হত্যাকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের ধরণ ও পদ্ধতির একটি সামগ্রিক চিত্র এই অধ্যায়ে পাওয়া যাবে। এই একই চিত্র আমরা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি আরেকটি মাধ্যম থেকে। সেটি হল বাংলাদেশের সৈনিক পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী (পৃষ্ঠাঃ ৩২৫-৫২০)। এখানে উল্লেখ্য যে, ২৫শে মার্চের পর ঢাকা এবং দখলদার বাহিনী কবলিত বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার পত্র-পত্রিকাসমূহ গণহত্যা ও নির্যাতনের কোন খর প্রকাশ করতে পারেনি। দখলদার কবলিত বাংলাদেশে গণহত্যার নয় মাসের ঘটনাবলী পত্র-পত্রিকায় উন্মোচিত হতে শুরু করে কেবলমাত্র বিজযের পর। সে কারণেই তৎপরবর্তী কালের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত গণহত্যার তথ্য ও সংবাদ নিবন্ধ নিয়েই নির্মিত হয়েছে এই অধ্যায়। ‘বাংলার বাণী’ ওই সময়ে গণহত্যার ওপর বের করে একটি বিশেষ সংখ্যা। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি নিবন্ধ এখানে সংকলিত কোন কোন বিষয় একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে ঘটনার বিবরণকেই প্রাধান্য দিয়ে তার যে কোন একটি হতে নেয়া হয়েছ। ২৫ শে মার্চের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারী এবং সারা দেশের শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, সরকারী, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য এবং অন্যান্য সকল শ্রেণীর লোকদের ওপর পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা পরিচালিত হত্যা ও নির্যাতনের বিচিত্র বিবরণ এই অধ্যায়ে বিধৃত হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর আল-বদরদের দ্বারা নিহত বুদ্ধিজীবীদের শেষ দিন, শেষ কথা শীর্ষক প্রতিবেদনটি নেয়া হয়েছে ‘বিচিত্রা (১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেটি পরিশিষ্টে সংযোজন করা হয়েছে (পৃষ্ঠা ৫৭৪)। আরেকটি পরিশিষ্টে সংযোজিত হয়েছে ’৭১ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ’ গ্রন্থে মুদ্রিত সারা দেশের শহীদ শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী তথা বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের নামের তালিকা (পৃষ্ঠা ৫৭৬)। একাত্তরে বাংলাদেশে পাক বাহিনীর গণহত্যা বিশ্বের পত্র-পত্রিকা ও বেতার মাধ্যমগুলোতেও ব্যাপকভাবে এসেছে। এই গণহত্যার ঘটনাবলী তারা কিভাবে প্রত্যক্ষ করেছে, নমুনাস্বরূপ তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্রও এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে “বিদেশী পত্র-পত্রিকা” অংশে (পৃষ্ঠা ৫২১-৫৩৯) উল্লেখ্য যে, বিশ্ব জনমত (চতুর্দশ) খন্ডেও গণহত্যা ও বাংলাদেশের প্রসঙ্গে প্রচুর দলিল সন্নিবেশিত হয়েছে।