পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

৷৷ ৮৩ ৷৷
মোঃ তালেব মুন্সী
গ্রাম-গাছিডাঙ্গা
থানা-ভূরুঙ্গামারী
রংপুর

 ২৬শে মার্চের পূর্বে আমি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলাম। ২৬শে মার্চের পর অত্র গাছিডাঙ্গা মৌজার সংগ্রাম পরিষদের আমি সদস্য ছিলাম। পাক হানাদার বাহিনী ভুরুঙ্গামারী থানা দখলের প্রায় ২ মাস পর একদিন আমাদের গ্রামে আসে। তারা সংখ্যায় ৫০ জন ছিল। হানাদার সৈন্যরা গ্রামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমি গ্রামের মেয়েছেলেদের আমার বাড়ীর পিছনে একটি বড় বাঁশঝাড়ের জঙ্গলে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করি। প্রাণভয়ে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র মোঃ আব্দুর রহমান নিকটে একটি বাঁশের ঝোঁপে বাঁশের আগায় উঠে আত্মগোপন করে। হানাদাররা আব্দুর রহমানকে দেখে ফেলে এবং তাকে বাঁশ গাছ থেকে নামিয়ে এনে মারপিট শুরু করে। তাকে রাইফেলের বাঁট, কিল, ঘুষি এবং জুতা দ্বারা আঘাত ও নির্যাতন করে। অতঃপর আমার বাড়ীতে বিভিন্ন ঘর অনুসন্ধান করে মেয়েছেলেদের দেখতে না পেয়ে তারা বাড়ীর পিছনে বাঁশঝাঁড়ে আত্মগোপনকারী মেয়েছেলেদেরকে খোঁজ করতে থাকে। তাদের খোঁজ করে না পেয়ে হানাদাররা রাইফেলের ফাঁকা আওয়াজ করলে মেয়েছেলেরা চীৎকার করতে থাকে এবং বাঁশঝাড় থেকে বেরিয়ে পালাতে থাকলে পাক সৈন্যরা তাদের পিছনে ধাওয়া করে। আমি এ অবস্থায় থাকতে না পেরে পাক সৈন্যদের কাছে ছুটে যাই এবং মেয়েছেলেদের উপর নির্যাতন না করার জন্য কঠোর প্রতিবাদ করি। এসময় হানাদরদের কয়েকজন মেয়েছেলেদের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে এবং অপর কয়েকজন আমার উপর মারপিট শুরু করে। পাক ফৌজ কর্তৃক প্রহৃত হওয়াকালীন আমার দুইজন আত্মীয়া মোছাম্মৎ আছিয়া খাতুন (চাচাতো বোন, বয়স ২৫ বৎসর) এবং মোছাম্মৎ মজিরন নেছা (ভাগনে বউ, বয়স ২৭ বৎসর) আমার দিকে ছুটেআসলে পাক হানাদাররা তাদেরকে ধাওয়া করে আমার বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। আমিও তাদের পিছনে পিছনে বাড়ীতে ঢুকে পড়লে তারা পুনরায় আমার উপর কিল, ঘুষি, রাইফেলের বাঁট এবং জুতার আঘাত প্রভৃতি নির্যাতন করতে থাকে। আমি তখন সরাসরি তাদের সঙ্গে হাতাহাতি সংঘর্ষে অবতীর্ণ হই। এই সময় আমার চাচাতো বোন এবং ভাগনে বউ পালাতে সক্ষম হয়ে ঘরে আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করার পর আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে হানাদার দস্যুরা ঘরে ঢুকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অনেক চিকিৎসা করা সত্ত্বেও বর্তমানে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় দিন যাপন করছি।

স্বাক্ষর/-
মোঃ তালেব আলী মুন্সী
১৯/৪/৭৩