পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

৷৷ ৯৩ ৷৷
রফিকুল ইসলাম
গ্রাম সোনাপুর
থানা – পার্বতীপুর
জেলা- দিনাজপুর

 ২৫ শে মার্চের পর দিনাজপুর যখন ইপিআর কর্তৃত্বে ছিল সে সময় আমি ইপিআর বাহিনীদের গাড়ি করে স্থান থেকে স্থানান্তরে নিয়ে যেতাম। আর এ অপরাধের জন্য আমাকে এপ্রিলের ৬ তারিখের পাক হানাদাররা দিনাজপুর শহর থেকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানার পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। উদ্দেশ্য, আমাকে সেখানে হত্যা করা হবে। আমাকে ঐ খানে নিয়ে গেয়েছিল কয়েকজন সামরিক লোকজন কতিপয় অবাঙ্গালী দালাল। সেখানে আমাকে জবাই করার জন্য ছোরা বের করে। ঠিক সে সময় শেষবারের মত পানি পান করার সুযোগ দেয়ার জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানাই। অনুরোধের তাদের মধ্যের একজন দয়াপরবশ হয়ে আমাকে পানি পান করে আসার অনুমতি দেয়।থানার প্রাচীরের পাশের টিউবওয়েল পানি পান করি এবং বাঁচার শেষ অবলম্বন হিসাবে তাদের বোঝার আগেই প্রাচীর টপকে অপর দিকে চযোই। সেখানেও খান সেনারা ছিল। তারা আমাকে পুনরায় গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বেদমভাবে হুইপিং করা হয় এবং মুক্তিফৌজ কোথায়, ‘সুন্দরবন’ গাড়ীটি কোথায়, কতজন বিহারীকে হত্যা করেছ ইত্যাদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। কিছুক্ষণ হুইপ সহ্য করার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর ঐ দিন বিকালে আমাকে আবার জিজ্ঞসা বাদ শুরু করে। সে সময় কিছুসংখ্যক অবাঙ্গালী মেয়ে থানার এসে জবানবন্দি দেয় যে আমি তার স্বামী, ভাই, অথবা বাবাকে হত্যা করেছি। ফলে পুনরায় আমার উপর প্রহর শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আগে আমি পানি পান করতে চাই। তখন আমাকে প্রস্রাব খেতে দেওয়া হয়।

 রাত বারটায় আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম। অত:পর আমাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওসির কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে জনৈক মেজরসহ একজন ক্যাপ্টেন ও ডিএসপি ছিল। সেখানে আমার নামধাম ও আত্মীয়স্বজনের খবরাখবর আদায় করে নেওয়া হয়। সেখানে অবশ্য আরও ছয়জন আসামি ছিলেন। এরপর অফিসাররা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কিছু বলাহার পর উল্লিখিত ছ'জন কে পেছনে হাত ও চোখ বেঁধে জীপ উঠিয়ে নিরুদ্দেশেল পথে নিয়ে যায়। এরপর আবার আমাকে বন্দিশালার বন্দি করে রাখে। এ অবস্থায় আমাকে থানার আমাকে থানার রেখে দুবেলা জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রহর করত। প্রথম সাত দিন আমাকে কিছুই খেতে দেয়নি। পানি চাইলে প্রসাব দিত। কয়েক দিন পর সামান্য পানি পান করতে দিত। তাও কর্তৃপক্ষের অগোচরে।

 তেরদিন পর বেলা দশটায় জনৈক পাঞ্জাবী হাবিলদার এসে আমাকে দিনাজপুর কুঠিবাড়ী ক্যাণ্টনমেণ্টে হাত পিছনে ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাবার পর আমার দু'পায়ে এবং দু’হাতে কড়া বেঁধে হাত পা ফাঁক করে টানা দেয়। টানা দেওয়া অবস্থায় সিনার উপর বুট দিয়ে এবং কতজন লোককে মেরেছি ও গাড়ী কোথায় আছে তা জানতে চায়। দু'ঘণ্টা এ অবস্থায় রেখে অত্যাচার করেছে। এর ফলে আমার নাকমুখ দিয়ে রক্ত উঠে; আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।

 ক্যাণ্টনমেণ্টে নির্যাতন পর্ব শেষ হলে আমাকে পুনর্বার সন্ধ্যার দিকে থানায় পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে পাঠায়। সারারাত বন্দী অবস্থায় রেখে পরদিন বেলা এগারটার দিকে অন্য ছ'জনের সাথে আমাকে কোর্টে নিয়ে যায়।কোর্ট থেকে আমাকে জেল খানার স্থানান্তরিত করা হয়

 দু'দিন পর জেল খানার ভিতর একজন ক্যাপ্টেন কয়েকজন অনুচরসহ যায়। সে সময় খাবার খেতে বসেছিলাম। না খেয়েই আমি এবং অপর একজন তার কাছে চলে যাই। সেখানে আবার একই কথাগলি জিজ্ঞাসা